বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের দুবলার চরে হামলা চালিয়ে ১৫ জেলেকে অপহরণ করেছে বনদস্যুরা। রোববার রাতে সমুদ্রে মাছ ধরার সময় দস্যু দল তাদের অপহরণ করে। এ ঘটনায় দয়াল বাহিনীর তিন সদস্যকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। তবে অপহৃত ১৫ জেলেকে এখনও উদ্ধার করতে পারেননি তারা।

দস্যুদের জিম্মিদশা থেকে এসব জেলেকে উদ্ধারে এবং সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছে দুবলার চরের ১১ হাজার জেলে। ই-মেইলযোগে আজ মঙ্গলবার এ আবেদন পাঠানো হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ।

জেলেদের আবেদনে বলা হয়েছে, রোববার রাতে সমুদ্রে মাছ ধরার সময় একদল দস্যু জেলেদের ওপর হামলা চালায়। পরে মুক্তিপণের দাবিতে ১৫ জেলেকে অপহরণ করে তারা। এ সময় অন্য জেলেরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে তিন দস্যুকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করে কোস্টগার্ডের হাতে তুলে দেয়। তবে ১৫ জেলেকে নিয়ে বাকি দস্যুরা পালিয়ে যায়।

ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে পাঠানো আবেদনে বলেন, তাদের ১৫ জেলে মাছ ধরার একটি ট্রলারসহ দস্যুদের কাছে জিম্মি অবস্থায় আছেন। দ্রুত তারা যেন মুক্তি পান এবং সুন্দরবন ও সমুদ্র উপকূল জলদস্যু মুক্ত হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন ফিশারম্যান গ্রুপের এ নেতা।

অপহৃত জেলেরা হলেন- সাতক্ষীরার শাহ আলম, আজাহারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আরাফাত হোসেন, আলমগীর হোসেন, শাজাহান গাজী, মো.

রাসেল, শাজাহান ঢালী, হাফিজুর রহমান, শাহিনুর আলম ও নুর আলম, বাগেরহাটের মতিয়ার সর্দার, খান রফিক, নাঠন বিশ্বাস ও খুলনার রিপন মোড়ল।

কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. সিয়াম-উল-হক বলেন, দুবলার চরে হামলার সময় আত্মরক্ষায় অন্য জেলেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তারা কোস্টগার্ডের সহায়তা চেয়ে ফোন করেন। পরে কোস্টগার্ড ঘটনাস্থলে গিয়ে এক নলা বিদেশি বন্দুক ও ৩৬ রাউন্ড গুলিসহ তিন দস্যুকে আটক করে।

আটক দস্যুরা হলো– দয়াল বাহিনীর মো. রহমত মোড়ল (২৬), মো. রবিউল মোল্লা (২৬) ও মো. জাহাঙ্গীর শেখ (৫১)। পরে তাদেরকে শরণখোলা থানায় সোপর্দ করা হলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান বলেন, দস্যুদের হাতে ১৫ জেলে জিম্মি আছে বলে শুনেছেন। তাদের উদ্ধার এবং দস্যুদের ধরতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন ১৫ জ ল ক

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা

সুন্দরবনে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে ফেরার সময় বনরক্ষীদের তাড়া খেয়ে নৌকায় মাংস রেখে নদীতে ঝাঁপ দেন তিন ব্যক্তি। দুজন নদী সাঁতরে লোকালয়ে ফিরলেও একজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি তখন। পরদিন সুন্দরবনের মধ্যে খাল থেকে ওই ব্যক্তির লাশ পেয়েছেন স্বজনেরা। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

লাশ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম মফিজুল সানা। বাড়ি খুলনার সুন্দরবন-সংলগ্ন দাকোপ উপজেলায়। তাঁর শ্বশুরবাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। সেখান থেকে তিনিসহ চারজন ১৮ এপ্রিল সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যান। ২২ এপ্রিল ফেরার পথে ওই ঘটনা ঘটে। ২৪ এপ্রিল কয়রার আওতাধীন সুন্দরবনের বেতনাখালী খালের পশ্চিম পাড় থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবিত মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার ভোরের আলো ফোটার আগে শিবসা নদীর পূর্ব পাশের কেওড়াতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নৌকা থেকে হরিণের ৪টি মাথা ও ৬০ কেজি মাংস জব্দ করা হয়েছিল। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বনরক্ষীদের উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকা ফেলে পালিয়ে যান শিকারিরা। তবে কারও মৃত্যু বা লাশ উদ্ধারের বিষয়ে তাঁদের জানা নেই।

এ ঘটনায় মামলা করতে গতকাল মঙ্গলবার কয়রায় আসেন নিহত মফিজুলের বাবা আবদুল মজিদ সানা। তবে থানার পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তিনি খুলনার আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবদুল মজিদ সানা বলেন, ‘আমার ছেলে মফিজুল পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে সুন্দরবনে গিয়েছিল। তার সঙ্গে একই নৌকায় ওই এলাকার মিজান গাজী, রুহুল কুদ্দুস মোড়ল ও বাদশা গাজী ছিলেন। পরে ২২ এপ্রিল রাতে তাঁদের কয়েকজন বাড়ি ফিরে জানান, নৌকায় হরিণের মাংস থাকায় বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা মফিজুলকে আটক করেছে। আর তাঁরা পালিয়ে এসেছেন।’

আবদুল মজিদ আরও বলেন, পরে বন বিভাগে খোঁজ নিলে তাঁরা জানান, কোনো আসামি ধরেননি তাঁরা। ২৪ এপ্রিল সুন্দরবনের বেতনাখালী খালের পশ্চিম পাড় থেকে ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাত ও পায়ে রশি দিয়ে বাঁধার চিহ্ন স্পষ্ট। এখন তাঁর ছেলের মৃত্যুতে কে বা কারা জড়িত, সেটি খতিয়ে দেখার জন্য মামলা করতে এসেছেন।

তবে মামলা না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, এমন কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ মামলা করতে থানায় আসেননি। বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

মফিজুলের সঙ্গে সুন্দরবনে যাওয়া গড়ইখালী এলাকার মিজান গাজী বলেন, ‘মফিজুলসহ আমরা চারজন সুন্দরবনে গিয়েছিলাম হরিণ শিকার করতে। বনে ফাঁদ পাতার পর হঠাৎ দেখি একদল অস্ত্রধারী ডাকাত আসছে। পালানোর সময় আমাদের সঙ্গে থাকা বাদশা গাজীকে ডাকাতেরা ধরে ফেলে। সে এখনো ডাকাতদের হাতে বন্দী। পরে আমরা তিনজন রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের হড্ডা টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন শিবসা নদী ধরে লোকালয়ের দিকে আসছিলাম। তখন বনরক্ষীরা আলোর ইশারা দেয়। আমরা ভয়ে নৌকা ফেলে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন নদীতে প্রচণ্ড তুফান হচ্ছিল। আমাদের তিনজন সাঁতরে কে কোথায় যাচ্ছি বুঝিনি। পরে দুজন নদীর কিনারে পৌঁছালেও মফিজুলকে আর পাইনি। আমরা এলাকার লোকজন ডেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও কোনো সন্ধান পাইনি। ভেবেছিলাম, তাকে হয়তো বনরক্ষীরা ধরে নিয়ে গেছে। এক দিন পর বনের ভেতরে জেলেদের মাধ্যমে লাশের সন্ধান পাই। তখন বনের বেতনাখালী খালের পাড় থেকে মফিজুলের লাশ উদ্ধার করা হয়।’

নিহত মফিজুলের শ্বশুর মোস্তাক গাজী বলেন, সুন্দরবন থেকে অন্যরা ফিরে এসে মফিজুলের নিখোঁজ হওয়ার খবর দেন। তিনি বন বিভাগ, আদালত সবখানে খোঁজখবর নিয়েও হদিস পাননি। এক দিন পর খবর আসে, কয়রার হড্ডা টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন সুন্দরবনের একটি খালে মফিজুলের লাশ ভাসছে। পরে আত্মীয়স্বজন গিয়ে লাশ এনে বাড়িতে দাফন করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
  • সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
  • আগারগাঁওয়ে সেনা অভিযানে অপহৃত ৪ কিশোর উদ্ধার
  • ‘তোর সময় শেষ’ লেখা চিঠির সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে সাংবাদিককে হুমকি
  • গাইবান্ধায় বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, অভিযুক্ত আটক
  • অপহরণে বাঁধা দেওয়ায় যুবককে গুলি করে হত্যা, আটক ৩
  • সৌন্দর্যের সন্ধানে সুন্দরবনের গহীনে : দ্বিতীয় পর্ব
  • সুন্দরবনে অস্ত্রসহ বনদস্যু আটক
  • অপহৃতকে ছেড়ে দিয়ে পালানোর সময় অস্ত্র ও গুলিসহ অপহরণকারী আটক
  • ছাড়া পেলেন অপহৃত কৃষক, এক অপহরণকারী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার