গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তী‌রে মাওলানা যোবা‌য়ের অনুসা‌রি‌দের দুই ধা‌পের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিন আজ শুক্রবার। প্রথমদিনই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে জুমার নামাজ। নামাজের ইমামতি করবেন আলমি শুরার সদস্য, কাকরাইলের মুরুব্বি হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের। ইজতেমার মি‌ডিয়া সমন্বয়ক হা‌বিবুল্লাহ রায়হান এ তথ্য নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছেন। 

ফজর নামাজের পর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়া উল হক। তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা নুরুর রহমান। পৌনে ১০টায় খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হবে। তালিমের আগে মোজাকেরা (আলোচনা) করবেন ভারতের মাওলানা জামাল সাহেব। এ ছাড়াও বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান হবে। যেমন- সকাল ১০টায় শিক্ষকদের বয়ানের মিম্বারে বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ফারাহিম। ছাত্রদের সঙ্গে নামাজের মিম্বারে বয়ান করবেন- প্রফেসর আব্দুল মান্নান, খাওয়াছদের (গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ) মাঝে টিনশেড মসজিদে বয়ান করবেন- ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ সাহেব।

ভোর থেকেই ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে আসতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লিদের ভিড় বাড়ে। এরই মধ্যে তুরাগ তীরের মূল ইজতেমা মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন মুসল্লিরা। ময়দান অভিমুখে হাতে জায়নামাজ ও টুপি মাথায় মুসল্লিদের জনস্রোত দেখা গেছে।

ময়দানকে ঘি‌রে র‌্যাব, পু‌লিশসহ আ‌য়োজক ক‌মি‌টির পক্ষ থে‌কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

ঢাকা, গাজীপুর ও আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এ বৃহৎ নামাজে শরিক হবেন। এরই মধ্যে অনেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে জায়নামাজ, পাটি, বিছানা ও পলিথিন নিয়ে ময়দানের দিকে রওনা দিয়েছেন।

ইজতেমার মি‌ডিয়া সমন্বয়ক বলেন, তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমা ময়দানে সব কাজ করা হচ্ছে পরামর্শের ভিত্তিতে। প্রতি বছরই অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ইজ‌তেমা সম্পন্ন করা হয়। ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান, রান্নার স্থান, টয়লেট, অজু ও গোসলখানা সবই সুনির্দিষ্ট করা থাকে।

ইজ‌তেমার ময়দা‌নে জুমার নামাজ পড়তে গাজীপুরের বোর্ডবাজার থে‌কে এসেছেন সালাউ‌দ্দিন। তি‌নি ব‌লেন, ইজ‌তেমার মা‌ঠে বড় জুমার নামাজ হয়। এখা‌নে লাখ লাখ মুস‌ল্লি নামাজ প‌ড়েন। আমিও এসেছি জুমার নামাজ পর‌তে। 

গাজীপুর থে‌কে আসা রুহুল আমিন ব‌লেন, মা‌ঠে জুমার নামাজের জন্য রওনা হ‌য়ে‌ছি, যা‌তে মূলম‌ঞ্চের কাছাকা‌ছি নামাজ পড়তে পা‌রি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন জানান, এ বছর বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা বেশি জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তায় কাজ করছেন।

এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশগ্রহণ করবেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইজত ম র ব শ ব ইজত ম ইজত ম র আশপ শ র প রথম ময়দ ন করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ