অনির্দিষ্টকাল রেল-সড়ক অবরোধের ঘোষণা তিতুমীর শিক্ষার্থীদের
Published: 1st, February 2025 GMT
সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণাসহ সাত দফা দাবি পূরণে সময় বেধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল ও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, “শনিবার বিকেল ৪টার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য 'বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি' কর্মসূচি পালন করা হবে।”
তারা আরো বলেন, “রেল ও সড়ক পথ এই কর্মসূচি আওতাভুক্ত থাকবে। বিশ্ব ইজতেমার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কথা বিবেচনা করে ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ব্যারিকেড শিথিল থাকবে।”
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল ইসলাম মুক্তার বলেন, “বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যদি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা না হয় তাহলে উত্তর নর্থ সিটিকে ব্লক করে দিতে আমরা বাধ্য হবো এবং এর জন্য দায়ী থাকবে রাষ্ট্রের অকার্যকর প্রসাশন।”
তিনি আরো বলেন, “গত ১৮ নভেম্বর কর্মসূচি পালনের সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রতিনিধিদলকে আলোচনায় বসতে বলা হয়। সেখানে আমাদের দাবি যৌক্তিক বলে সম্মোধন করে ৭ দিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠন ও এক মাসের মধ্যে ফলাফল জানানোর কথা বললেও ২ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমরা কোনো বার্তা পাইনি। রাষ্ট্রের এমন দ্বিচারিতাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধিক্কার জানাই।”
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা; অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীদের আবাসিক খরচ বহন; ২০২৪-২৫ সেশন শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত ন্যূনতম দুটি বিষয় আইন এবং সাংবাদিকতা বিষয় সংযোজন; একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ; শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আসনসংখ্যা সীমিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে গবেষণাগার বিনির্মাণের জন্য জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃত আদায়ে শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনশনরত অবস্থায় দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে সন্ধ্যার দিকে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে, একই দাবিতে রাত ১০টার দিকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী রাজধানীর গুলশানে সড়ক অবরোধ করেন এবং রাত ১১টার দিকে কলেজের আবাসিক হলের নারী শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে রাস্তায় অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রধান ফটকে অবস্থান নেন।
ঢাকা/হাফছা/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ