‘প্রথম দিন থেকেই নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে হয়’, ফরচুন বরিশালের সমর্থকদের প্রসঙ্গ আসতেই কথাটি বলেন তামিম ইকবাল।

তা হওয়ারই কথা। এবারের বিপিএলজুড়েই ফ্র্যাঞ্চাইজিটির জন্য দর্শকের আগ্রহ ছিল বিপুল। প্রায় প্রতি ম্যাচেই গ্যালারি ভরা দর্শক, স্লোগান-সমর্থনে কোলাহলে ভরা ছিল পুরো স্টেডিয়াম।

দর্শকের ওই প্রত্যাশা মাঠের ক্রিকেটে ভালোভাবেই পূরণ করেছে বরিশাল। গতবারের চ্যাম্পিয়নরা এবার লিগ পর্বে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে প্লে–অফে ওঠে। এরপর প্রথম কোয়ালিফায়ারে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে জায়গা করে নেয় টানা দ্বিতীয় ফাইনালে। শুক্রবার আবার তাদের বিপক্ষেই শিরোপার লড়াইয়ে নামবে বরিশাল।

ফাইনাল সামনে রেখে আজ দুপুরে অনুশীলন করে ফরচুন বরিশাল। এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে ঘিরে সমর্থন নিয়ে কথা বলেন অধিনায়ক তামিম, ‘প্রথম দিন থেকেই বলি, আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে এমন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলি, যাদের এত সমর্থন। চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বলেন, আমরা যখনই যে ম্যাচ খেলেছি, বরিশালের দর্শক সব সময় ছিল। আমরা এটার জন্য খুবই সৌভাগ্যবান মনে করি নিজেদের। বিপিএল নিয়ে আমরা এমন স্বপ্নই দেখেছি। একেকটা ফ্র্যাঞ্চাইজির একেক ধরনের ফ্যানবেজ থাকবে। যেটা আমার কাছে মনে হয়, বরিশাল খুব সফলভাবে করতে পেরেছে, বিশেষত গত দুই বছরে। তাদের জন্য পুরোপুরিভাবে চেষ্টা থাকবে কালকে যেন আমরা ভালো খেলে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।’

গত বছর বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হলে লঞ্চে করে ট্রফি বরিশালে যাবে, এমন কথা বলেছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কর্ণধার মিজানুর রহমান। যদিও শেষ পর্যন্ত নিতে পারেননি। এবারও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তামিম ইকবাল এ নিয়ে বলেছেন, ‘যদি হতে পারি (চ্যাম্পিয়ন), তাহলে তো পরিকল্পনা আছেই। গত বছরও পরিকল্পনা ছিল। আমার মনে হয়, যেকোনো কারণেই যাওয়া হয়নি। এটা নয় যে আমাদের ইচ্ছা ছিল না, সব সময় ইচ্ছা ছিল। এবারও আমাদের ইচ্ছা আছে। আল্লাহ যদি রহমত করে, অবশ্যই।’

দলগতের পাশাপাশি ব্যক্তি তামিমের সমর্থকও আছে ফরচুন বরিশালের। সেটা খেলোয়াড় তামিম যেমন, আবার চট্টগ্রামের তামিমেরও। ফাইনালে অবশ্য এই সমর্থকদের বেশ দ্বিধায়ই পড়তে হবে। কারণ, তামিমের ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে খেলবে তাঁর জন্মস্থান চট্টগ্রামের দল। যদিও এর আগেই তিনবার চিটাগং কিংসের বিপক্ষে এই টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয়েছেন তামিম। কিন্তু ফাইনালে চট্টগ্রামের মানুষদের সমর্থন কি তাঁদের নিজেদের ছেলে, নাকি বিভাগের জন্য থাকবে?

তামিমের উত্তর বেশ সোজাসাপটা, ‘যদি আমি সত্যি বলি, চট্টগ্রামের (মানুষদের) তাদেরই (কিংসকে) সাপোর্ট করা উচিত। আমি ব্যাটিংয়ে নামলে হয়তো একটু চিয়ার (হাততালি দিতে) করতে পারে। কিন্তু চিটাগং ফাইনাল খেলছে, চট্টগ্রামের মানুষ তাদের নিজেদের দল সাপোর্ট করবে, এটাই প্রত্যাশা করি।’

গতবার ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মুখোমুখি হয়েছিল বরিশাল। তাদের হারিয়ে পেয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ। এবার বরিশালের প্রতি শুরু থেকেই প্রত্যাশা ছিল বেশি। তবে ম্যাচের আগে দল নির্ভার আছে বলেই মনে করেন তামিম। মাঠের ক্রিকেটে কেবল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চান তিনি।

বরিশাল অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আমার দলের সেরা ব্যাপার হচ্ছে রিল্যাক্স আছি। আমরা জানি যে আমাদের কী করতে হবে। এটাই দেখার বিষয়, আমরা বাস্তবায়নটা করি কত ভালোভাবে। যদি আমরা সেটা ভালো করতে পারি, তাহলে আমাদের দিকেই আসবে সবকিছু।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ র য ঞ চ ইজ আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা

দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।

দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক 

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন  কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন। 

কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।” 

গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।” 

একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”

সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।” 

সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”

পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ