সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে আবারও ঢাকার শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছিলেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ তাঁদের জলকামান ব্যবহার করে সরিয়ে দিয়েছে। এ সময় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, বেলা একটার দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া কয়েক শ চাকরিপ্রত্যাশী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় চারদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা পুলিশের কথা শোনেননি। একপর্যায়ে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছিটিয়ে ও ধাওয়া দিয়ে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এরপর রাস্তায় যান চলাচল শুরু হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

আজ দুপুরে যোগাযোগ করা হলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

খালেদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এ সময় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বলেন, ‘আমরা মেধা দিয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। পুলিশ ভ্যারিফাই করেই আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কেন আন্দোলন করতে হবে। আমাদের দাবি মানতে হবে। আমরা সাত দিন ধরে একটি যৌক্তিক দাবির জন্য আন্দোলন করছি। কোনো উপদেষ্টা কথা বলছেন না। আমরা কী এই দেশের নাগরিক নই? আমরা তো ছাত্রদের পাশে ছিলাম। এখন আমাদের পাশে ছাত্র প্রতিনিধি নেই কেন?’

নিয়োগ পুনর্বহালের দাবিতে কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন শিক্ষকেরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে এর আগেও তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। সে সময় পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

গতকাল বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে আন্দোলন চলাকালে সন্ধ্যার আগে নিয়োগপ্রত্যাশীরা ঘোষণা দেন আজ সকাল ৯টা থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ‘জাস্টিস ফর টিচার’, ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ শুরু হবে। ৬ হাজার ৫৩১ জনের যোগদান নিশ্চিত করতে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়।

এর আগে গত সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীরা বৈঠক করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

তিন ধাপে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে প্রহসন চলছে।

২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ হন। নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন রিট করলে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাদের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে রায় দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ধ কর আম দ র র জন য অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের হোতা গ্রেপ্তার

গত বুধবার ওই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই চক্র চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধ অংশ নিতে বাধ্য করে।

আকর্ষণীয় বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যায় একটি চক্র। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাঁদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে। ওই যুদ্ধে অংশ নিয়ে কয়েকজন নিহতও হয়েছেন।
গত বুধবার গভীর রাতে ওই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন (৪০)। তাঁকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।


গতকাল শুক্রবার সিআইডির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় হওয়া মানব পাচার আইনের মামলায় আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আলমগীরের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার আমতলী মাঝেরপাড়া গ্রামে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআইডি প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠান। সেখানে তাঁদের ওমরাহ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন। সুলতান তাঁদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সেনাদের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে তাঁদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। যুদ্ধে অংশ নিতে না চাইলে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।

সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির নিহত এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামের একজন গুরুতর আহত হন। রাশিয়ায় পাঠানো ১০ জনের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর কাছে তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী (ঝুমু আক্তার) ঢাকার বনানী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন।

তদন্তে সিআইডি আরও জানতে পারে, ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। রাশিয়ায় নিয়ে তাঁদের জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানাজানি হওয়ায়, তাঁরা রাশিয়ায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে সেখান থেকে তাঁদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। তাই তাঁরা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছেন না এবং দেশে ফিরতেও পারছেন না।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সিআইডি নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন ওরফে তামান্নাকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। ফাবিহা জেরিন ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার। সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

অভিযান তদারকির সঙ্গে যুক্ত সিআইডি প্রধান কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আলমগীর ২০০৮ সালে ছাত্র ভিসায় রাশিয়ায় যান। সেখানে বিয়ে করে তিনি ওই দেশের নাগরিকত্ব পান। এ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ থেকে তিন ক্যাটাগরির ভিসায় ৫০ জনকে রাশিয়ায় নেন। গত এক বছরে ১১ জনকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে কাজ করার কথা বলে নিয়ে যান। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে তাঁদের ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করেন। সেখান থেকে পাওয়া টাকাও বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে ফিরিস্তি দিয়ে আলমগীর কেড়ে নেন।

সিআইডির কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তবে রাশিয়ার সরকার দুজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে তাঁদের লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের হোতা গ্রেপ্তার