নিজামুদ্দিন মারকাজের অধীনে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে শুরু হওয়া এ পর্বে অংশ নিয়েছেন দিল্লির মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভীর অনুসারীরা।
আগামী রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
নিয়ম অনুযায়ী শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ আসর পাকিস্তানের মাওলানা হারুনের আম বয়ানের (সার্বিক) মধ্য দিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।
নিজামুদ্দিন মারকাজের মিডিয়া সমন্বয়ক মো.
তিনি আরো বলেন, “৫০ দেশ থেকে বিদেশি মেহমান এসেছেন। তবে এবারের ইজতেমা নিয়ে দোটানায় থাকায় আশানুরূপ বিদেশি মেহমান আসেননি। এছাড়াও আমেরিকায় ভিসা জমা দেওয়ায় মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভী ইজতেমায় আসা হচ্ছে না।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান বলেছেন, “দেশজুড়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে। প্রতিদিনই দুষ্কৃতকারীরা ধরা পড়ছে। তবে ইজতেমার সুযোগে কেউ যেন মাঠে ঢুকতে না পারে সেদিকে আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। অপরিচিত বা নতুন কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। মোটকথা ইজতেমায় কোনো ‘ডেভিল’ ঢুকতে দেওয়া হবে না।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো ময়দান নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে। দায়িত্ব পালন করছেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। এছাড়া ডগ স্কোয়াড, নৌ-টহল, মোবাইল টহল, ড্রোন ভিউ, সিআইডি, ডিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন।”
উল্লেখ্য, তাবলিগ জামাতের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। এর আগে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি দুই ধাপে ইজতেমা পালন করেন শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা।
ঢাকা/রেজাউল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ ব ইজত ম র দ ব ত য় পর ব
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তরে মহেশখালীর সোনাদিয়া উপকূলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ভেসে আসে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মৃত ব্যক্তি কোনো জেলে হতে পারেন। তবে আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। মরদেহটি বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।
হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল হাসান বলেন, মহেশখালী থানার পুলিশ সোনাদিয়া উপকূল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
এ বিষয়ে বেসরকারি উদ্ধারকারী সংস্থা সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিয়া উপকূলে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। মরদেহটি পচে বিকৃত হয়ে গেছে। মাথার চুল উঠে গেছে। সাধারণত মৃত্যুর ২ থেকে ৪ দিন পর সাগরে ভেসে থাকলে এমন অবস্থা হয়। তবে এটি নিখোঁজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের মরদেহ নয়। কারণ, অরিত্রর বয়স ২২ বছর।
ইমতিয়াজ আহমদ জানান, ৭ জুলাই সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন অরিত্র। এর পর থেকে বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চল ও মোহনায় তাঁর সন্ধানে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। কোথাও লাশ ভেসে উঠলেই যাচাই করা হচ্ছে সেটি অরিত্রর কি না।
সাত দিন আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মেঘনা মোহনায় এক ব্যক্তির লাশ ভেসে ওঠে। সেটিও অরিত্র ভেবে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু সেটিও তাঁর লাশ ছিল না। ওই মৃত ব্যক্তির বয়স ছিল ৩২ বছর। পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি। কিন্তু অরিত্রর গায়ে ছিল নীল গেঞ্জি ও থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।
এখনো নিখোঁজ অরিত্র
৭ জুলাই সকাল পৌনে সাতটার দিকে কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নামেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী—অরিত্র হাসান, কে এম সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদ। তাঁদের মধ্যে প্রথমে সাদমান রহমানের লাশ উদ্ধার হয় হিমছড়ি সৈকত থেকেই। পরদিন সকালে নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল সৈকতে পাওয়া যায় আসিফ আহমেদের লাশ। কিন্তু ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো খোঁজ নেই অরিত্রর।
সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, অরিত্রকে খুঁজতে কক্সবাজার উপকূলের ১২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়েছে। মহেশখালী, সোনাদিয়া, নুনিয়াছড়া উপকূল, বিভিন্ন মোহনা এবং সাগর চ্যানেলেও তল্লাশি চালানো হয়। অভিযান পরিচালনায় ছিলেন বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, পর্যটন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিচের কর্মীরা।
ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ণিমার জোয়ারের টানে অরিত্রের মরদেহ গভীর সাগরে ভেসে গেছে। গত তিন দশকে ৭০ জনের বেশি পর্যটক সৈকতে ডুবে মারা গেলেও তাঁদের কারও লাশ তিন দিনের বেশি নিখোঁজ ছিল না। শুধু অরিত্রর ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।
পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীদের মতে, চলতি জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে পাঁচটি নিম্নচাপ ও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে সৈকতে একাধিক গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের ধারণা, অরিত্রের লাশ হয়তো এসব গুপ্তখালের তলদেশে বালুচাপায় আটকে আছে অথবা গভীর সাগরে হারিয়ে গেছে।
তাঁরা জানান, বিমানবাহিনীর ড্রোন দিয়ে সাত দিন ধরে সাগরের গভীর পর্যন্ত অনুসন্ধান চালানো হয়। তাতেও কোনো ফল মেলেনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জানানো হয়েছে—লাশ ভেসে উঠলে যেন সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয়।
অরিত্রর বাবা সাকিব হাসান ঢাকায় একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক। ছেলের নিখোঁজ হওয়ার পরপরই স্ত্রী ও স্বজনদের নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে আসেন। টানা ১৯ দিন ধরে বিভিন্ন সৈকত চষে বেড়িয়েছেন। কখনো কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, কখনো নিঃশব্দে তাকিয়ে থেকেছেন সাগরের দিকে।
সাকিব হাসান বলেন, ‘শুনেছি, সাগর যা নেয়, তা ফিরিয়ে দেয়। তবে অরিত্রর ক্ষেত্রে এমন ব্যতিক্রম হলো কেন? আমরা যেকোনো অবস্থায় ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।’
অরিত্রর মা জেসমিন আক্তার এখনো অপেক্ষায় আছেন—যদি কোনো এক ঢেউয়ে ভেসে আসে অরিত্র।