পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ সরকারের
Published: 17th, February 2025 GMT
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে শূন্য পদ পূরণে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় কার্য-অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের এ অধিবেশন হয়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ডিসিরা নানান রকমের প্রশ্ন করেছেন। বিশেষ করে হাসপাতাল–সংক্রান্ত সমস্যা, মেডিকেল কলেজ–সংক্রান্ত সমস্যা, নানান সমস্যার কথা বলেছেন। সেই সমস্যাগুলো সম্পর্কে আমরা জানি। আমরা চেষ্টাও করছি, সেগুলো অ্যাড্রেস করার জন্য। আমাদের মনে হচ্ছে বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধমূলক কিছু করা উচিত। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস হচ্ছে; এর কারণগুলো কী, এগুলোর জন্য আমরা কী পদক্ষেপ নিতে পারি, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কী করতে পারি? ছোট ছোট বাচ্চা এখন ই-সিগারেটে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে আমরা সচেতনতা বাড়াতে পারি। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগটা নেই।’
বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো.
বিশেষ সহকারী আরও বলেন, ‘আমরা কয়েক দিনে স্পষ্ট দেখেছি যে এন্ট্রি পদে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি পদে চিকিৎসক প্রয়োজন। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ পদ ও অন্য আধুনিক হাসপাতালগুলোতে আমাদের পদের প্রয়োজনীয়তা আছে। পদ সৃষ্টি এবং এর আর্থিক সংশ্লেষ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা ইতিমধ্যে পাঁচ হাজার পদ সৃষ্টির জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইউনিয়নেও যেমন পদের ঘাটতি রয়েছে, তেমনি মেডিকেল কলেজেও রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে চেষ্টা করছি আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। অল্প দিনে যদি এ উদ্যোগটি সফল হয়; অল্প দিনে বিশেষ বন্দোবস্তে যদি আমরা নতুন পদে জনবল নিয়োগ করতে পারি; তখন এ সমস্যা থেকে উত্তরণ হবে। শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন সর্বোচ্চ অ্যাফোর্ড দিচ্ছে। চিহ্নিত করে শূন্য পদ পূরণে যেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে সম্ভব সেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে, যেগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সম্ভব সেগুলো পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই শূন্যপদ পূরণ আমাদের একটি অগ্রাধিকার। যেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের সৃজন করা প্রয়োজন, অন্যান্য ক্ষেত্রে শূন্যপদ পূরণ অগ্রাধিকার।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসা নিয়ে যেটুকু অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, আমরা মনে করি ১২-১৪ হাজার আহতের তুলনায় সে সংখ্যাটা আসলে খুবই কম। অসন্তোষের মাত্রা কোনোভাবেই ১ শতাংশও নয়।’ ওষুধের ভেজাল রোধ করে মান রক্ষায় সব জেলায় মিনি ল্যাব সম্প্রসারণ করতে হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
আরও পড়ুনবিআইডব্লিউটিএতে বড় নিয়োগ, পদ ২৩৬, আবেদন শেষ কাল২ ঘণ্টা আগেস্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৪০ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছি। আমরা কখনোই টাকার দিকে তাকাইনি। আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাদের চিকিৎসা করার জন্য আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তারদেরও এনেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের ট্রমাটা ওইভাবে অ্যাড্রেস করতে পারছি না। এটা (চিকিৎসা নিয়ে অসন্তোষ) আস্তে আস্তে কমে যাবে, আমরা তাদের সমন্বিতভাবে পুনর্বাসনের চেষ্টাও করছি। আমরা তাদের পুনর্বাসন করলে আর অসন্তোষ থাকবে না।’
আরও পড়ুনহার্ভার্ডে বৃত্তি নিয়ে এমবিএ’র সুযোগ বাংলাদেশিদের ২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল মাস্টার্স, ফি ৩০০ টাকা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ ষ সহক র অসন ত ষ উপদ ষ ট চ ক ৎসক আম দ র মন ত র র জন য পদ প র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।
ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।
রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।
চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।
হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।
হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।
এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।