সংস্কারের পর যেন প্রাণ পেল সুন্দরবনের ‘বাঘের বাড়ি’
Published: 18th, February 2025 GMT
গহিন সুন্দরবনে বাঘ বসবাসের স্থান হিসেবে পরিচিত শেখেরটেক। সেখানে ঘন গাছের সারির ভেতর ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইট-পাথরের প্রাচীন এক মন্দির। সেটি ৩৫০ বছরের পুরোনো বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। মন্দিরের আশপাশে দেখা যায় বাঘের আনাগোনা। পাওয়া যায় বাঘের টাটকা পায়ের ছাপও। এ কারণে জেলেরা এ স্থানের নাম দিয়েছেন ‘বাঘের বাড়ি’। সময়ের ব্যবধানে ক্ষয়ে যাওয়া বাঘের বাড়িখ্যাত মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কারের ছোঁয়ায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের শেখেরটেক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরটির স্থায়িত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রথমবারের মতো সংস্কার করা হয়েছে। মন্দিরের চারদিকের দেয়ালের বাইরে পুরোনো নকশার আদলে নতুন ইটের গাঁথুনি তৈরি করা হয়েছে। মন্দিরের ভেতরেও কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে মজবুত করা হয়েছে। বন বিভাগের অর্থায়নে সংস্কারকাজে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
তবে গত বছরের ২ মার্চ সেখানে গিয়ে মন্দিরটির ভঙ্গুর অবস্থা দেখা গিয়েছিল। তখন মন্দিরের ওপরটা আগাছায় ভরা ছিল। গাছের শিকড় প্রবেশ করায় ফাটল ধরেছিল দেয়ালে। মন্দিরের দেয়াল থেকে খসে পড়া ইটের অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারপাশে। মনে হয়েছিল, যেকোনো সময়ে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ভেঙে যেতে পারে।
মন্দিরটি সংস্কারকাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজমিস্ত্রি সোহানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের জন্য আমরা পুরোনো ইটের আদলে নতুন ইট তৈরি করে নিয়ে এসেছিলাম। তারপর সেই ইটের ওপর পুরোনো নকশার আদলে হাতুড়ি-বাটালি দিয়ে নতুন করে নকশা তৈরি করি। আগের নকশা হুবহু রেখে আমরা মন্দিরটির অবকাঠামো পুনরায় সংস্কার করেছি।’
মন্দিরটি সংস্কারকাজে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন দাকোপ উপজেলার বানিয়াসান্তা গ্রামের বাপ্পি সরদার। তিনি বলেন, ‘এখানে বাঘের আনাগোনা বেশি। আমি ১৫ থেকে ২০ হাত দূর থেকে বাঘ দেখেছি। আমার সঙ্গে আরও একজন ছিল। আমরা মন্দিরের কাজ শেষে ফেরার সময় দেখি, পাকা পথের ওপর বসে আছে বাঘ। তখন আমাদের সঙ্গে থাকা বাজি ফুটিয়ে বাঘটি তাড়িয়েছিলাম।’
‘বাঘের বাড়ি’খ্যাত প্রাচীন মন্দিরের অবস্থান সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন ১৬ নম্বর কম্পার্টমেন্টে। শিবসা নদীর পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শেখের খাল ধরে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবনের শেখেরটেক এলাকায় অবস্থিত মন্দিরটি। ইতিহাসবিষয়ক বিভিন্ন বইয়ে সুন্দরবনের সবচেয়ে বিখ্যাত পুরোনো স্থাপনা হিসেবে মন্দিরটিকে উল্লেখ করা হয়েছে। বহু বছর ধরে মন্দিরটি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও এবার তা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করেছে বন বিভাগ।
শেখেরটেক খাল থেকে মন্দিরের চারপাশ দিয়ে পাকা পথ তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের সুন্দরবন দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। আর চারপাশে গাছগাছালির ভেতর দিয়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটারের দীর্ঘ পাকা পথ ধরে বনের মধ্যে অনায়াসে হেঁটে হেঁটে দেখা যায় সুন্দরবনের সৌন্দর্য। বনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশ্রামঘর। আর শেখেরটেক মন্দিরে যাওয়ার পথেই দেখা মেলে মধ্যযুগীয় স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। চোখে পড়ে কোনোরকমে টিকে থাকা বাড়ির দেয়াল ও ইটের স্তূপ।
সংস্কারের আগে গহিন সুন্দরবনের ভেতরে যেমন ছিল মন্দিরটি। গত বছরের ২ মার্চ সুন্দরবনের শেখেরটেক এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন র মন দ র র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী
অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়। ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়।
আরো পড়ুন:
কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির
অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প
বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।
বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ