চলতি বছরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন চায় বাম জোট
Published: 18th, February 2025 GMT
চলতি বছরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বাম গণতান্ত্রিক জোট। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়, তারা আগে জাতীয় নির্বাচন চায়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বাম জোট।
ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। জোটভুক্ত দলগুলোর সাত শীর্ষস্থানীয় নেতা নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে জোটের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
বৈঠক শেষে ইকবাল কবির সাংবাদিকদের বলেন, একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উত্তরণসহ নানা ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ভেতর দিয়ে সরকারের পতন হয়েছে। এই পরিবর্তনের পর প্রথম কর্তব্য একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া। সে কারণে তাঁরা দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন না জাতীয় নির্বাচন—এমন বিতর্ক উত্থাপন করে পরিস্থিতিটা ঘোলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁরা মনে করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগেই সম্পন্ন করা উচিত এবং এই বছরের ভেতরেই তা সম্পন্ন করা উচিত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জোটের শরিক সিপিবির সভাপতি শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমে সংস্কার না নির্বাচন, এই কথাটা বহুদিন চলল। সংস্কার এবং নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে। এখন আবার নিয়ে আসা হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না জাতীয় নির্বাচন। তাঁরা মনে করছেন, এর মধ্য দিয়ে সরকার নির্বাচন নিয়ে ‘ডিলে’ (কালক্ষেপণ) করছে। এটি জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে। এই সরকার যতই কালক্ষেপণ করবে, দেশে ততই নানা জটিলতা বাড়বে। সে জন্য বাম জোট মনে করে, জাতীয় নির্বাচনটা আগে হওয়া দরকার। একটা স্থিতিশীল সরকার ছাড়া যে ভয়ের রাজনীতি দেশে চলছে, যে দমবন্ধ অবস্থা, তা থেকে মানুষ মুক্ত হবে না।
কোনো অজুহাতে কালক্ষেপণ চান না উল্লেখ করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা চান, দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হোক। ইসির সঙ্গে কথা বলে তাঁরা আশ্বস্ত হয়েছেন, ইসি সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, ইসি তাঁদের বলেছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, তারা সেটা করবে। তবে তারা জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
সরকার কালক্ষেপণ করছে বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সর্বশেষ যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে, সেখানে অধিকাংশ দল আগে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া দরকার বলে বলেছে। এখন অল্প দিনের মধ্যে সরকার যদি ইসিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা না বলে, তখন বলতেই হবে সরকার কালক্ষেপণ করছে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, যদি সংসদ নির্বাচন না হয়, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মধ্যে না ঢোকা হয়, তাহলে ভয়ের সংস্কৃতি এবং অস্থিতিশীলতা আরও ক্রমাগত বাড়বে। পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের দেশি–বিদেশি দোসরদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচিত সরকারই কেবল এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক দ র বল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।