২৭তম বিসিএস: ১১৩৭ জনের চাকরি ফেরতের বিষয়ে রায় বৃহস্পতিবার
Published: 19th, February 2025 GMT
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের করা আপিল আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চ বুধবার রায়ের এ দিন ধার্য করেন। আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের বলেন, ২৭তম বিসিএসে ফল প্রকাশের পর সেটি ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন সেনাশাসিত সরকার বাতিল করে দিয়েছিল। তারা দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। এই ক্ষমতা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছিল না। এমনকি দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি পিএসসি আইন ও বিধিতে নেই। বিষয়টি আপিল বিভাগের শুনানিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি বিএনপি সরকারের আমলে ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৩৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। পরে ওই বছরের ৩০ জুন জরুরি অবস্থার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ওই ফল বাতিল করে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার। এরপর মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট রিট করেন উত্তীর্ণরা। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন রিটকারীরা।
অন্যদিকে ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই ২৭তম বিসিএসের দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ফল অনুযায়ী দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় ৩২২৯ জন উত্তীর্ণ হয়। পরে তাদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে পরে হাইকোর্টে তিন রিট দায়ের করেন প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর ওই তিনটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২৭তম বিসিএসে দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনটি লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। যা কিছু পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করেন বাতিল হওয়া ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণরা। ৭ নভেম্বর রিভিউ আবেদন মঞ্জুর করে তা শুনানির জন্য গ্রহণের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর ফলে প্রথম পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে নিয়োগ বঞ্চিত রিভিউ আবেদনকারীদের আইনি লড়াইয়ের পথ উন্মুক্ত হয়। আজ ওই আবেদনের শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব স এস আপ ল র ম খ ক পর ক ষ পর ক ষ র পর ক ষ য় সরক র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।