ছয়টি জাহাজ কিনবে বিএসসি, পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন
Published: 23rd, February 2025 GMT
রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩০০০ টিইইউ সক্ষমতার ছয়টি আধুনিক পণ্যবাহী জাহাজ কিনবে। মোট ৩৩ কোটি ডলারে এই ৬টি জাহাজ কেনার জন্য বিএসসি দক্ষিণ কোরিয়ার ইডিইসিএফের সঙ্গে কনসেপ্ট পেপার বা ধারণাপত্র সই হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এই প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক ঘোষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন অবশ্য নির্ভর করবে ইডিএফসির সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের ওপর।
এই ছয়টি নতুন পণ্যবাহী জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বিএসসির আয়ও বাড়বে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, আরও ছয়টি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। তাতে সব মিলে বিএসসির বহরে ১২টি নতুন জাহাজ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি)। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৫২ পয়সা; আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ টাকা ২৯ পয়সা।
একই সঙ্গে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিএসসির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়েছে। এই সময় কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৯ টাকা ৩৫ পয়সা এবং আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ৬ টাকা ৫৯ পয়সা।
চলতি বছর ইপিএস বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিএসসি ও মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপের কারণে মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল বৃদ্ধিতে নেওয়া বিশেষ উদ্যোগ; সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি। এখন নতুন আরও ১২টি জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হলে মুনাফা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত, বিএসসির পরিশোধিত মূলধন ছিল ১৫২ কোটি ৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের শেয়ার ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ, যার আর্থিক মূল্য ৭৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের অংশ ৪৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, যার আর্থিক মূল্য ৭৩ কোটি ০৭ লাখ টাকা।
গত এক বছরে বিএসসির শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৩১ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দাম ছিল ৫৩ টাকা ১০ পয়সা। এ ছাড়া কোম্পানিটি ২০২৪ সালে ২৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ২৫ শতাংশ, ২০২২ সালে ২০ শতাংশ ও ২০২১ সালে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫