‘নতুন মেসি’ এচেভেরি কি গার্দিওলার ভাগ্য বদলাতে পারবেন
Published: 27th, February 2025 GMT
‘নতুন মেসি’ পরিচয় নিয়েই ফুটবল–দুনিয়ায় আবির্ভাব ক্লদিও এচেভেরির। কেউ কেউ তাঁর মধ্যে দেখেছেন মেসি ও রোনালদোর মিশ্রণও। বয়সভিত্তিক দলের হয়ে শুরুতেই আলো ছড়িয়ে চলে আসেন ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর নজরে।
নানা গুঞ্জনের পর গত বছরের জানুয়ারিতে তাঁকে দলে টানার কথা নিশ্চিত করে ম্যানচেস্টার সিটি। সিটিতে যোগ দিলেও তখনই মাঠে নামা হয়নি তাঁর। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ধারের চুক্তিতে থেকে যান রিভার প্লেটেই।
চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারিতেই যোগ দিতে পারতেন এই আর্জেন্টাইন তরুণ। কিন্তু অনূর্ধ্ব-২০ দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পিছিয়ে যায় তাঁর সিটিতে আসা। অবশেষে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে সিটির খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন এচেভেরি। দলটির হয়ে জার্সিও বুঝে পেয়েছেন এচেভেরি। আপাতত দলের ৩০ নম্বর জার্সিতে দেখা যাবে তাঁকে। সিটির সঙ্গে তাঁর চুক্তি ২০২৮ পর্যন্ত।
সিটিতে যোগ দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এচেভেরি বলেছেন, ‘বলে বোঝাতে পারব না আমি এখানে এসে কতটা রোমাঞ্চিত। অবশেষে আমি এখন নিজেকে ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড় বলতে পারছি। ফুটবল আমার জীবন।’
সিটিতে খেলতে আসার মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে উল্লেখ করে এচেভেরি আরও বলেছেন, ‘আমার স্বপ্ন হচ্ছে ইউরোপের সেরা একটি দলের হয়ে খেলা। আজ আমি আমার স্বপ্নের নিকটে চলে এলাম। ম্যানচেস্টার সিটির বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি। তারা শুধু ট্রফি জিতছে এমন নয়, তারা খেলেও খুব সুন্দর। তারা সবার জন্য দৃষ্টান্ত। তারা মানুষকে দেখিয়েছে, কীভাবে সেরা ফুটবল খেলতে হয়। আমি অনেক আনন্দিত।’
আরও পড়ুন‘নতুন মেসি’র সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সিটির, ব্রাজিলের মোসকার্দো পিএসজিতে২৫ জানুয়ারি ২০২৪আনন্দ নিয়ে এলেও সিটিতে এচেভেরির কাজটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তিনি যখন ইতিহাদের ক্লাবটিতে আসছেন, তখন নিজেদের অন্যতম বাজে সময় পার করছে ক্লাবটি। গত মৌসুম পর্যন্ত যে দলটি ইউরোপের অন্যতম সেরা ছিল, তারা এখন পায়ের নিচে মাটি খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এমনকি জানুয়ারিতে রেকর্ড অর্থ খরচ করেও ইতিবাচক ফল পাননি গার্দিওলা। চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং কারাবাও কাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে। প্রিমিয়ার লিগও প্রায় হাতছাড়া হয়ে গেছে। জেতার সুযোগ আছে শুধু এফএ কাপ। সব মিলিয়ে ভুলে যাওয়ার মতো এক সময় পার করছে পেপ গার্দিওলার সিটি।
আরও পড়ুন‘মেসি ও ম্যারাডোনার মিশ্রণে’ই এচেভেরি ২৫ নভেম্বর ২০২৩আর এমন সময়ে সিটির ভাগ্য বদলের গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যোগ দিলেন এচেভেরি। গার্দিওলার অধীনে হয়তো শুরু থেকেই সুযোগ পাবেন এই ফরোয়ার্ড। শিরোপা জিততে না পারলেও দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। যেখানে ৯ ম্যাচে ৬ গোল করে প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন এই আর্জেন্টাইন। এখন সিটি উদ্ধারে এচেভেরি কতটা ভূমিকা রাখতে পারেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।