মুশফিকুর রহিম আনুষ্ঠানিকতার ধার ধারেন না। তাই তামিম ইকবালের পথ অনুসরণ করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বুধবার রাত ১১টায় ওয়ানডে ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা দেওয়ার আগে বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। বোর্ডের কাছ থেকে বার্তা পেয়ে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে দেরি করেননি উইকেটরক্ষক এ ব্যাটার। বৃহস্পতিবার ফাহিমের সঙ্গে অবসর নিয়ে কথা হয় আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। এক ঘণ্টা ধরে ক্যারিয়ার শেষের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন তারা।
বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, মাহমুদউল্লাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোন প্রক্রিয়ায় বিদায় নিলে ভালো হয়, সেটা নিয়ে ভাবছেন তিনি। কারণ তাঁর বিদায় মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে চিরতরে ‘বাই’ বলে দেওয়া। তাই বিসিবিও চায় মাহমুদউল্লাহর বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে। তাঁকে মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার পরিকল্পনা ক্রিকেট বোর্ডের।
ইনজুরির কারণে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে না পারলেও মোহামেডানের ম্যাচের দিন মাঠে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। বৃহস্পতিবার যেমন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকে ফাহিমের সঙ্গে কথা বলেছেন। যদিও কথোপকথনের কোনো কিছুই প্রকাশ করতে রাজি হননি ফাহিম।
অবসর ইস্যুতে মাহমুদউল্লাহ কী বলেছেন– এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিসিবির এ পরিচালক বলেন, ‘যখন ঘটনা ঘটবে, তখন জানতে পারবেন। এখন কোনো কিছু বলা যাবে না।’
বিসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ টেস্ট ও টি২০ মাঠ থেকে ছেড়েছেন। ওয়ানডে ছাড়ার অর্থ হলো জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলতে হবে, তাই ঘটা করে বিদায় দিতে চায় বোর্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলা হতে পারে তাঁর।’ যদিও টিম ম্যানেজমেন্ট সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কিনা, জানা নেই। এ বছর দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলে বিদায় নিতে চাইলে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাঁকে। পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কা সফরেও ক্যারিয়ার শেষ করতে পারেন তিনি। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কথা বলবেন তিনি।
মাহমুদউল্লাহ লড়াকু একজন ক্রিকেটার। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে আবার ফিরে এসেছেন সংগ্রাম করে। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার কথা ছিল না তাঁর। মিডল অর্ডারে শামীম হোসেন পাটোয়ারি, আফিফ হোসেন ভালো করতে না পারায় ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে অভিজ্ঞ এ ব্যাটারের।
ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে দারুণ ব্যাটিং করেন তিনি। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। টুর্নামেন্টে আট ম্যাচে ব্যাটিং করে নিয়মিত রান করেছেন তিনি। বিশ্বকাপ ছিল ৩৯ বছর বয়সী এ ব্যাটারের ক্যারিয়ারের লাইফলাইন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে রান করে। শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতে হাফ সেঞ্চুরি (৯৮, ৫০*, ৬২, ৮৪*) করে মাহমুদউল্লাহ ওয়ানডে দলে থাকার দাবি জোরালো করলেও জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নেই। এ কারণেই বিসিবি থেকে ফাহিমকে অ্যাসাইন করা হয় দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলার জন্য।
মাহমুদউল্লাহ দুই বছর আগে এক আড্ডায় বলেছিলেন, দুই বছর খেলতে চান। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দুই বছর খেলা হয়ে গেছে তাঁর। এই দুই বছরে জাতীয় দলের জন্য বড় কিছু করতে না পারলেও বিপিএলে জোড়া শিরোপা জিতেছেন। অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মাহমুদউল্লাহ কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও বাদ পড়তে পারেন। মুশফিকের কেন্দ্রীয় চুক্তি থাকবে শুধু টেস্টে। বিসিবি সভাপতি ফারুক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে দেশে ফিরলেই চুক্তি ঘোষণা করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবসর জ ত য় দল দ ই বছর
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব