Samakal:
2025-08-01@09:08:08 GMT

পিছিয়ে পাহাড়ের আদিবাসী নারী

Published: 7th, March 2025 GMT

পিছিয়ে পাহাড়ের আদিবাসী নারী

একজন ক্ষুদ্র কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ী মুন্নি চাকমা (৩৮)। চার বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। এর পর সংসারের যাবতীয় ভার তাঁকে একাই সামলাতে হচ্ছে। রাঙামাটি শহরের কল্যাণপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে পসরা বসিয়ে তরকারি বিক্রি করেন মুন্নি। দিনে যা আয়, তা দিয়ে চলে কোনোক্রমে সংসার। তাঁর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজে ডিগ্রিতে, আর ছোট মেয়ে রাঙামাটি সরকারি কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী। তাঁর আশা দুই মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে পরিবারের দুঃখ ঘোচাবে। 
কল্যাণপুর এলাকায় মুন্নির পাশে কাঁচা তরকারি বিক্রি করেন সান্ত্বনা চাকমা (৪০)।  তিন বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গেছে সান্ত্বনার স্বামীর। বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় ঘরে পড়ে রয়েছেন।  কাঁচা তরকারি বিক্রির আয় দিয়েই তাঁর সংসার চলে। তাঁরও দুই সন্তান। দু’জনকেই লেখাপড়া করাচ্ছেন। কর্মজীবী নারী মুন্নি ও সান্ত্বনার বিশ্ব নারী দিবস সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। শুধু তারা জানেন, তরিতরকারি বিক্রি করে দুই পয়সা আয় করে কীভাবে সংসার চালাবেন।
এমনই অবস্থায় পাহাড়ে আজ (শনিবার) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এবারে পাহাড়ে নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘নারী সমাজে ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে অধিকতর ভূমিকা রাখি’।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিনটি পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। এই অঞ্চলে রয়েছে এগারো ভাষাভাষী ১৫টি জাতিসত্ত্বা। পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা, ঐতিহ্য, ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। আদিকাল থেকে এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠী পাহাড়ে জুম চাষ করে এলেও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে চাষ পদ্ধতি ও পেশার পরিবর্তন ঘটেছে। পুরুষের পাশাপাশি পাহাড়ি নারীরাও  পরিবারের আয়-উপার্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। 
বহুবিধ অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত পাহাড়ি নারীরা যেমন কর্মঠ, তেমনি সম্পৃক্ত হতে পারেন বিভিন্ন পেশা ও কাজকর্মে। গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজকর্মসহ পারিবারিক আয় থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, হস্ত ও ক্ষুদ্রশিল্প, আউটসোর্সিং, চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িত হয়ে উপার্জন করছেন। 
একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৮০ শতাংশের বেশি নারী ঘরের বাইরে কাজ করে থাকেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পাহাড়ি নারীদের সম্পত্তির অধিকার, ক্ষমতায়ন, সমতা, শ্রমের মজুরি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে এখনও পেছিয়ে রয়েছেন। 
বাঘাইছড়ি ইউপির নারী ওয়ার্ড মেম্বার রাশিকা চাকমা জানান, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলেই হয়তো সমাজে তাঁর অবস্থান ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু গ্রামে যারা সাধারণ নারী রয়েছেন, পরিবারে তাদের সিদ্ধান্ত বা মতামত গ্রহণসহ সবকিছুতেই পিছিয়ে রাখা হয়েছে। 
উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়ার্কের (ডব্লিউ আর এন) কোর মেম্বার নুকু চাকমা মনে করেন, পাহাড়ি সমাজে নারী-পুরুষের সমান অধিকার না থাকায় নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নেই। এ অধিকার পেলে নারীদের ক্ষমতায়ন হতো। 
সিএইচটি নারী হেডম্যান-কার্বারি নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা বলেন, নারী হেডম্যান-কার্বারিদের অংশগ্রহণ বাড়লেও একজন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য ভূমির অধিকার ও বিয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। 
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, দেশে নারী সহিংসতা ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তা কার্যকর নয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখনও নারীরা পথেঘাটে পোশাক-আশাক, স্বাধীনতা নিয়ে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। সারাদেশে নারীদের যেখানে অবস্থা খারাপ, সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে নারীদের আরও অবস্থা খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তরক র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ মারধরের ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

ভুক্তভোগী মো. গোলাম আজম ফয়সাল চিকিৎসা কেন্দ্রেই ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত। হামলার পর গুরুতর আহতাবস্থায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।

আরো পড়ুন:

তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন

রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা কেন্দ্রের ২৩ নম্বর কক্ষে ফয়সাল ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন। প্রথমে একজন বহিরাগত এসে ফয়সালের পরিচয় নিশ্চিত করে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই ৭-৮ জন কক্ষে প্রবেশ করে ফয়সালকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে এবং কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মারধর শুরু করে।

এক পর্যায়ে তারা ফয়সালকে টেনেহিঁচড়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে আসে এবং এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। মারধর শেষে যাওয়ার সময় যারা হামলার দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী গোলাম আযম ফয়সাল বলেন, “হামলাকারীদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ‘জনি, আর মারিস না’ বলে থামায়। চলে যাওয়ার সময় তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দিয়ে যায়।”

নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকি। খুব আতঙ্কে দিন পার করছি।” হামলাকারীদের কাউকে চেনেন না বলে মামলার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক মাফরুহা সিদ্দিকা লিপি। তিনি বলেন, “ফয়সাল আগে আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে যেত বলে আমরা শুনেছি। এ ঘটনায় আমরা সবাই আতঙ্কিত। কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে বহিরাগতরা অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিকভাবে প্রহার করেছে। আমরা জনি নামে একজনের কথা শুনেছি, যার নেতৃত্বে এই হামলা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা পুলিশের সহায়তায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমি মাত্র বিষয়টি জানতে পারছি। এ বিষয়ে প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা বলব। এছাড়া ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গতকাল পুলিশর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। তারা নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে কাজ করছে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও