উসাইর ইবনে আমের, কিংবা মতান্তরে ইবনে জাবের একটি হাদিসের বর্ণনা করেছেন।
হজরত উমর (রা.)-র কাছে যখনই ইয়ামেন থেকে সহযোগী যোদ্ধারা আসতেন, তখনই তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি উয়ায়েস ইবনে আমের আছে?’
এক দলের সঙ্গে উয়ায়েস করনি মদিনা এলেন। এরপর উমর (রা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি উয়ায়েস ইবনে আমের?’
তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’
উমর (রা.
উয়ায়েস বললেন, ‘হ্যাঁ।’
তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার শরীরে শ্বেতরোগ ছিল, এক দিরহাম সমান জায়গা ছাড়া তার সবটাই কি সেরে গেছে?’
উয়ায়েস বললেন, ‘হ্যাঁ।’
উমর (রা.) বললেন, ‘তোমার মা আছে?’
আরও পড়ুনরাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়ার কারণ১২ এপ্রিল ২০২৪উয়ায়েস বললেন, ‘হ্যাঁ।’
তিনি বললেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে বলতে শুনেছি, মুরাদ (পরিবারের) এবং করন (গোত্রের) উয়ায়েস ইবনে আমের ইয়েমেনের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের কাছে আসবে। তার গায়ে ধবল দাগ আছে, যা এক দিরহাম সমান স্থান ছাড়া সবই ভালো হয়ে গেছে। সে তার মায়ের সঙ্গে সদাচারী হবে। সে যদি আল্লাহর প্রতি কসম খায়, তবে আল্লাহ তা পূরণ করে দেবেন। সুতরাং (হে উমর,) তুমি যদি নিজের জন্য তাকে দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া করাতে পারো, তাহলে অবশ্যই করবে। সুতরাং তুমি আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করো।’
শোনামাত্র উয়ায়েস উমর (রা.)–র জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।
উমর (রা.) তখন তাঁকে বললেন, ‘তুমি এখন কোথায় যাবে?’
উয়ায়েস বললেন, ‘কুফা।’
তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমার জন্য সেখানকার গভর্নরকে চিঠি লিখে দেব?’
আরও পড়ুনঈদ যেভাবে এল১১ এপ্রিল ২০২৪উয়ায়েস বললেন, ‘আমি সাধারণ গরিব-মিসকিনদের সঙ্গে থাকতে ভালোবাসি।’
পরের বছর কুফার সম্ভ্রান্ত লোকদের মধ্যে একজন হজে এল। সে উমর (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাকে উয়ায়েস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন।
সে বলল, ‘একটি ভাঙা ঘর আর অল্প কিছু সামগ্রীর মালিক, এমন অবস্থায় আমি তাঁকে ছেড়ে এসেছি।’
উমর (রা.) বললেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, মুরাদ (পরিবারের) আর করন (গোত্রের) উয়ায়েস ইবনে আমের ইয়েমেনের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের কাছে আসবে। তার শরীরে ধবল রোগ আছে, যা এক দিরহাম সমান জায়গা ছাড়া সবই ভালো হয়ে গেছে। সে মা-ভক্ত। সে যদি আল্লাহর কাছে কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করেন। যদি তুমি তোমার জন্য তার ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া করাতে পারো, তাহলে অবশ্যই করবে।’
তারপর কুফার লোকটি হজ শেষে উয়ায়েস (করনির) কাছে গিয়ে বলল, ‘আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’
আরও পড়ুনপ্রতিবেশীর অধিকার০৫ মার্চ ২০২৪উয়ায়েস বললেন, ‘তুমি এক শুভযাত্রা থেকে নব আগমন করেছ। অতএব তুমি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো।’ এরপর তিনি বললেন, ‘তুমি উমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছ?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ তখন উয়ায়েস তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। এসব শুনে লোকেরা (উয়ায়েসের) মর্যাদা জেনে নিল। (মুসলিম, হাদিস: ২,৫৪২)
অন্য আরেকটি বর্ণনায় আছে, উমর (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.) কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ তাবেইন এক ব্যক্তিকে উয়ায়েস বলা হয়। তার মা আছে। তার ধবল রোগ ছিল। তোমরা তাকে আদেশ করো, সে যেন তোমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে ) ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস: ৩৭৭)
আরও পড়ুনঅনুতপ্ত হয়ে তওবা করতে হবে ১৫ এপ্রিল ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র জন য আল ল হ করল ন
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।