দেশের নদ-নদী ও পাহাড়-বনভূমিগুলো যে যেভাবে পারছে, গ্রাস করে নিচ্ছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় ও সরকারি এত তদারকি প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো আমরা রক্ষা করতে পারছি না। শত শত বছরে গড়ে ওঠা বনভূমিগুলো এমনভাবে উজাড় হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না। শেরপুরের গারো পাহাড়ের বনভূমিগুলো এখন ঝুঁকির মুখে। বনের জায়গা দখল করতে দুর্বৃত্তরা সেখানে বনভূমি পুড়িয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের কাংশা ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি এলাকায় বিস্তীর্ণ বনভূমি আগুনে পুড়ে গেছে। এতে জঙ্গলে বসবাস করা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী ও বনজ গুল্মলতা আগুনে পুড়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়েছে। গত বুধবার থেকে ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি, গান্ধীগাঁও, গজনী বিট, দরবেশ টিলা এলাকার বিস্তৃত শালবনে অন্তত ২০টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে উপকারী কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী ও চারাগাছ পুড়ে গেছে। বন বিভাগের কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে শুক্রবার আগুন নেভাতে সক্ষম হন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্থানীয় পরিবেশ সংগঠকেরা বলছেন, গারো পাহাড়ের বনভূমিতে এ অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল গারো পাহাড়ে শালবন ও বন বিভাগের জমি দখলের তৎপরতা শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে দুর্বৃত্তরা বনের গাছ কাটার সুবিধার্থে ইচ্ছা করে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুকনা মৌসুম থাকার কারণে শালবনের ঝরাপাতা এবং শুকনা
ছোট গাছপালায় সহজে আগুন লেগে যায়। ফলে বনের শালগাছ সহজে কাটা সম্ভব হয়। আর এ সুযোগে অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লাখ লাখ টাকার গাছ কাটার পাশাপাশি বনের খালি জায়গা দখল করে বসতি স্থাপন করে।
তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের দাবি, বনে পর্যটক ও গরুর রাখালদের বিচরণ থাকায় তাঁরা যে বিড়ি বা সিগারেট খান, তা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এ বিষয়ে মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ সংগঠকদের ভাষ্য আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। যে স্বার্থান্বেষী মহল বনভূমির জায়গা দখল করতে চায়, তাদের থামাতেই হবে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। অভিযোগ তদন্ত করে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। গারো পাহাড়ের বনভূমিগুলো যেভাবেই হোক আমাদের রক্ষা করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র বনভ ম গ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার ও দল কেউ দায় এড়াতে পারে না
রাজনৈতিক দল—ডান–বাম ও মধ্যপন্থী যা–ই হোক না কেন, সেটা পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে। যাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক দলের অনুসারী বলে দাবি করেন, তাঁদের সেই নীতি–আদর্শও ধারণ করতে হয়। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যখন সরাসরি চাঁদাবাজি, দখলবাজির অভিযোগ আসে, তখন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে চাঁদাবাজ-দখলবাজ পরিচয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি রাজশাহী মহানগরের চাঁদাবাজদের যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে রাজশাহী মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ নাম রয়েছে। এই তালিকায় বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডার, সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম–পরিচয় আছে। একইভাবে পতিত আওয়ামী লীগের ২৫ জন এবং জামায়াতের ৬ জনের নাম আছে।
তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের থানাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও রাজনৈতিক পরিচিতি উল্লেখ রয়েছে। কিছু ব্যক্তির মোবাইল নম্বরও আছে। এ ছাড়া কোন খাত থেকে চাঁদা তোলেন এবং বর্তমানে সক্রিয় কি না, সেই তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে এতে। তালিকায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ১২টি থানার মধ্যে ১০ থানা এলাকার তথ্য রয়েছে। তালিকাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
কেবল রাজশাহী নয়, দেশের প্রতিটি জেলায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি মহামারি আকার নিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের আগে এসব ঘটনায় পতিত সরকারি দলের নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত। গণ–অভ্যুত্থানের পর সেই দলটির নেতা–কর্মীরা হয় আত্মগোপনে, নয় কারাগারে। তাহলে এসব চাঁদাবাজির ঘটনা কে বা কারা ঘটাচ্ছেন? একশ্রেণির পেশাদার চাঁদাবাজ আছে, যারা সব সরকারের আমলেই তাদের পেশাদারত্ব দেখিয়ে থাকে। রাজনৈতিক মামলার দোহাই দিয়ে আগের সরকারের আমলে কারাগারে আটক থাকা বেশ কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীও জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে অপকর্ম শুরু করেছেন।
আগে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এসব রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায় থাকা চাঁদাবাজেরা রং বদল করে ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে যেতেন। তাঁরা নিজেদের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য ভাবতে পছন্দ করতেন। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলটি এতটাই বিধ্বস্ত যে তাঁদের নেতা–কর্মীদের পক্ষে পোশাক বদল করে মাঠে থাকা অসম্ভব। ফলে তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করেছেন ভবিষ্যতে ক্ষমতাপ্রত্যাশী দল কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রশ্রয় পাওয়া দলের নেতা–কর্মীরা।
যেসব রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাদের কেউ কেউ প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দল থেকে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অপকর্মের কারণে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটছে। এ ক্ষেত্রে ‘বড় দল’ এগিয়ে থাকলেও ছোটরাও খুব পিছিয়ে নেই। রাজশাহীর তালিকায় তিনটি দলের নেতা–কর্মীদের নাম ছাপা হয়েছে। যেসব দলের নেতা–কর্মীদের নাম ছাপা হয়নি, তাঁরাও যে চাঁদাবাজি, দখলবাজি থেকে মুক্ত নন, সেটা হলফ করে বলা যায়। অতি সম্প্রতি একটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা গুলশানের একজন সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে বমাল ধরা পড়েন। এসব ঘটনা কোনোভাবে নতুন বন্দোবস্তের নমুনা নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে না পারুন, অন্তত চাঁদাবাজির মতো অপরাধ থেকে সংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরত রাখুন।
কেবল রাজশাহী নয়, দেশের অন্যান্য স্থানে চাঁদাবাজির তালিকায় যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার আইনি ব্যবস্থা নেবে আশা করি। আর রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অঘটন ঘটলে বহিষ্কারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে অঘটনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। বিলম্বে হলেও তাদের বোধোদয় হোক।