বছরের পর বছর মরদেহের স্তূপ বড় হয়েছে। মরদেহগুলো যাঁদের, তাঁদের কাউকে কাউকে গুলি করে হত্যা করেন মোটরবাইকে করে আসা ব্যক্তিরা। অন্যদের মাথা ছিল গুলিবিদ্ধ, যেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর ভুক্তভোগীদের বিষয়ে পুলিশ শুধু একটা কথাই বলত, তাঁরা ‘সন্দেহভাজন মাদক কারবারি’। গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলছিলেন। কিন্তু এ অভিযোগ এত মামুলি যে অল্পবিস্তর তদন্তেই তা ধোপে টিকত না। এ ঘটনা ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের আমলের।

দুতার্তেকে দাভাওয়ের মেয়র ও পরে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন আইসিসি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এই আদালতের জন্য এক বড় পরীক্ষাও হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একই ধরনের অভিযোগে এ আদালত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা কার্যকর হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।

দুতার্তের প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় তিন বছর পর গতকাল মঙ্গলবার হাজারো ফিলিপিনোর পক্ষে ওই সব হত্যাকাণ্ডে জবাবদিহি আদায়ে এক বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই ফিলিপিনোরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের স্বজনদের হত্যায় ন্যায়বিচার দাবি করছিলেন।

আর সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মাদকবিরোধী অভিযানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে তদন্ত চালিয়ে আসা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মেনে গতকাল তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হংকংয়ে এক সফর শেষে দেশে ফেরার পর রাজধানী ম্যানিলার প্রধান বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ। কয়েক ঘণ্টা পর এদিন রাতেই নেদারল্যান্ডসের হেগ অভিমুখী একটি উড়োজাহাজে তুলে দেওয়া হয় তাঁকে। এখানেই আইসিসি অবস্থিত।

৭৯ বছর বয়সী রদ্রিগো দুতার্তেকে দাভাওয়ের সিটি মেয়র ও পরে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন আইসিসি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এই আদালতের জন্য এক বড় পরীক্ষাও হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একই ধরনের অভিযোগে এ আদালত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা কার্যকর হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই, যেমন দুই বছর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা এ পর্যন্ত কার্যকর করা যায়নি।

দুতার্তের শিবির বলেছে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা অবৈধ। তাঁদের যুক্তি, প্রেসিডেন্ট থাকাকালে দুতার্তে আইসিসি থেকে ফিলিপাইনকে প্রত্যাহার করে নেন। তাই তাঁর বিচার করার এখতিয়ার এ আদালতের নেই। উল্লেখ্য, তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যার অভিযোগের তদন্ত শুরু করায় ২০১৯ সালে আইসিসির প্রতিষ্ঠাকালীন চুক্তি থেকে নিজ দেশকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।

বাবাকে জোরপূর্বক দ্য হেগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা ন্যায়বিচার নয়, এটা নির্যাতন ও নিপীড়ন।সারা দুতার্তে, রদ্রিগো দুতার্তের মেয়ে

তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল লিখেছেন, ফিলিপাইন যত দিন আইসিসির সদস্য ছিল, সেই সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগই তদন্ত করছেন এই আদালত। এ ছাড়া ফিলিপাইন এখনো আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদস্য এবং আইসিসির পক্ষে সংস্থাটি যে কাউকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা চাইতে পারে। দুতার্তেকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন ইন্টারপোলের একজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

দুতার্তে তাঁর কথিত ‘ডেথ স্কোয়াড’কে ঘিরে দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা সেটিকে ভীষণভাবে বিদ্ধ করেছে। এমনকি ছয় বছরের প্রেসিডেন্ট পদের এককালীন মেয়াদ শেষেও তাঁকে বিচারের ঊর্ধ্বে থাকা একজন ব্যক্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফাদিনান্দ মার্কোস জুনিয়র সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তের মেয়ে সারার সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করেই রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। সারা হন ভাইস প্রেসিডেন্ট। মার্কোস তাঁর প্রশাসনের শুরুর দিকে আইসিসির সঙ্গে সহযোগিতা না করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

কিন্তু মার্কোস ও দুতার্তের মধ্যকার সম্পর্কের সুতা দ্রুত ও দর্শনীয়ভাবে আলগা হয়ে যায়। সন্তর্পণে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ আইসিসির তদন্তকারীদের ফিলিপাইনে প্রবেশের অনুমতি দেয় মার্কোস সরকার।

দুতার্তের মুখপাত্র হ্যারি রক বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের মুক্তির জন্য তাঁর আইনজীবীরা আদালতে পিটিশন দাখিল করার চেষ্টা করছেন।

এদিকে এক বিবৃতিতে রদ্রিগো দুতার্তের মেয়ে সারা দুতার্তে বলেছেন, তাঁর বাবাকে জোরপূর্বক দ্য হেগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা ন্যায়বিচার নয়, এটা নির্যাতন ও নিপীড়ন।’

দুতার্তে তাঁর কথিত ‘ডেথ স্কোয়াড’কে ঘিরে দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা সেটিকে ভীষণভাবে বিদ্ধ করেছে। এমনকি ছয় বছরের প্রেসিডেন্ট পদের এককালীন মেয়াদ শেষেও তাঁকে বিচারের ঊর্ধ্বে থাকা একজন ব্যক্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তের মেয়ে সারার সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করেই রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ২০১৬ সালে দুতার্তে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁদের জন্য বরং দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো হবে। কেননা, নাগাল পেলে তাঁদের ‘হত্যা’ করবেন তিনি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর এ যুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুতার্তের অভিষেকের পর দ্রুতই একদল পুলিশ সদস্য ম্যারি অ্যান ডোমিঙ্গোর ছোট অ্যাপার্টমেন্টে হানা দিয়ে তাঁর স্বামী ও সন্তানকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে গত বছরের জুন মাসে বিচারের এক বিরল ঘটনায় একজন বিচারক অভিযানে অংশগ্রহণকারী চার পুলিশ সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁদের কারাগারে ঢোকানো হয়নি।

ডোমিঙ্গো বলেন, ‘এখানে ন্যায়বিচার বলে কিছু আছে, আমি মনে করি না। দুতার্তের কোনো অনুশোচনা নেই।’

প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সংঘটিত ওই ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়েছেন দুতার্তে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ছিলেন অধরাই। এখন তাঁকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় একদিকে যেমন আনন্দাশ্রু বইছে, অন্যদিকে তাঁর বিচার আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে হতাশাও।

গ্রেস গারগান্তার বয়স ৩২ বছর। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে নভোতাস এলাকায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাঁর বাবা ও ভাইকে হত্যা করেন মুখোশ পরা ব্যক্তিরা।
এই নারী বলেন, ‘আমি (বিচারের) আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু এটি (দুতার্তের গ্রেপ্তার) আমার ভেতর আবারও আশার অনুভূতি জাগিয়েছে। কেননা, দুতার্তে ও তাঁর ক্ষমতাধর লোকজনের বিরুদ্ধে আমার মতো সাধারণ ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছে।’

এখানে ন্যায়বিচার বলে কিছু আছে, আমি মনে করি না। দুতার্তের কোনো অনুশোচনা নেই।ম্যারি অ্যান ডোমিঙ্গো, স্বামী ও সন্তান হারানো ফিলিপিনো

ইতিমধ্যে ম্যানিলায় মাদকবিরোধী অভিযানের শিকার ব্যক্তিদের মা, স্ত্রী, বোন ও মেয়েদের পরিচালিত একটি কফি শপ গ্রাহকদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। আর কুইজন সিটিতে নিহতদের স্মরণে একটি বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

দুতার্তের মাদকযুদ্ধ নিয়ে গত বছর এক তদন্ত শুরু করেছে ফিলিপাইনের প্রতিনিধি পরিষদ। তবে সেখানে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হাজির হতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। অবশ্য নিজের পক্ষে উল্লেখযোগ্য সমর্থন থাকা সিনেটে গত অক্টোবরে এক শুনানিতে উপস্থিত হন এই সাবেক প্রেসিডেন্ট।

মাদকবিরোধী অভিযানের পক্ষে সে সময় দুতার্তে বলেছিলেন, ‘আমি এবং আমি একাই এর সব সাফল্য ও ত্রুটির পুরোপুরি দায় নিচ্ছি। পুলিশ শুধু আমার নির্দেশ পালন করেছে। আমি দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। যেসব পুলিশ আমার নির্দেশ পালন করেছে, তাদের নয়; একমাত্র আমাকেই কারাগারে দেওয়া উচিত।’

গতকাল যা ঘটল, তা এখন দুতার্তের বিচার করার এমন সম্ভাবনাকেই জাগিয়ে তুলেছে।

আরও পড়ুনআইসিসির পরোয়ানা: ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তে গ্রেপ্তার১১ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তেকে আইসিসিতে পাঠানো হয়েছে৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ম নবত ব র ধ ফ ল প ইন র আইস স র প কর ছ ন র কর র পর য় ন র জন য তদন ত অপর ধ গতক ল বছর র হওয় র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির