বছরের পর বছর মরদেহের স্তূপ বড় হয়েছে। মরদেহগুলো যাঁদের, তাঁদের কাউকে কাউকে গুলি করে হত্যা করেন মোটরবাইকে করে আসা ব্যক্তিরা। অন্যদের মাথা ছিল গুলিবিদ্ধ, যেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর ভুক্তভোগীদের বিষয়ে পুলিশ শুধু একটা কথাই বলত, তাঁরা ‘সন্দেহভাজন মাদক কারবারি’। গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলছিলেন। কিন্তু এ অভিযোগ এত মামুলি যে অল্পবিস্তর তদন্তেই তা ধোপে টিকত না। এ ঘটনা ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের আমলের।

দুতার্তেকে দাভাওয়ের মেয়র ও পরে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন আইসিসি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এই আদালতের জন্য এক বড় পরীক্ষাও হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একই ধরনের অভিযোগে এ আদালত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা কার্যকর হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।

দুতার্তের প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় তিন বছর পর গতকাল মঙ্গলবার হাজারো ফিলিপিনোর পক্ষে ওই সব হত্যাকাণ্ডে জবাবদিহি আদায়ে এক বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই ফিলিপিনোরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের স্বজনদের হত্যায় ন্যায়বিচার দাবি করছিলেন।

আর সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মাদকবিরোধী অভিযানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে তদন্ত চালিয়ে আসা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মেনে গতকাল তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হংকংয়ে এক সফর শেষে দেশে ফেরার পর রাজধানী ম্যানিলার প্রধান বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ। কয়েক ঘণ্টা পর এদিন রাতেই নেদারল্যান্ডসের হেগ অভিমুখী একটি উড়োজাহাজে তুলে দেওয়া হয় তাঁকে। এখানেই আইসিসি অবস্থিত।

৭৯ বছর বয়সী রদ্রিগো দুতার্তেকে দাভাওয়ের সিটি মেয়র ও পরে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন আইসিসি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এই আদালতের জন্য এক বড় পরীক্ষাও হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একই ধরনের অভিযোগে এ আদালত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা কার্যকর হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই, যেমন দুই বছর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা এ পর্যন্ত কার্যকর করা যায়নি।

দুতার্তের শিবির বলেছে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা অবৈধ। তাঁদের যুক্তি, প্রেসিডেন্ট থাকাকালে দুতার্তে আইসিসি থেকে ফিলিপাইনকে প্রত্যাহার করে নেন। তাই তাঁর বিচার করার এখতিয়ার এ আদালতের নেই। উল্লেখ্য, তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যার অভিযোগের তদন্ত শুরু করায় ২০১৯ সালে আইসিসির প্রতিষ্ঠাকালীন চুক্তি থেকে নিজ দেশকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।

বাবাকে জোরপূর্বক দ্য হেগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা ন্যায়বিচার নয়, এটা নির্যাতন ও নিপীড়ন।সারা দুতার্তে, রদ্রিগো দুতার্তের মেয়ে

তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল লিখেছেন, ফিলিপাইন যত দিন আইসিসির সদস্য ছিল, সেই সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগই তদন্ত করছেন এই আদালত। এ ছাড়া ফিলিপাইন এখনো আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদস্য এবং আইসিসির পক্ষে সংস্থাটি যে কাউকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা চাইতে পারে। দুতার্তেকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন ইন্টারপোলের একজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

দুতার্তে তাঁর কথিত ‘ডেথ স্কোয়াড’কে ঘিরে দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা সেটিকে ভীষণভাবে বিদ্ধ করেছে। এমনকি ছয় বছরের প্রেসিডেন্ট পদের এককালীন মেয়াদ শেষেও তাঁকে বিচারের ঊর্ধ্বে থাকা একজন ব্যক্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফাদিনান্দ মার্কোস জুনিয়র সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তের মেয়ে সারার সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করেই রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। সারা হন ভাইস প্রেসিডেন্ট। মার্কোস তাঁর প্রশাসনের শুরুর দিকে আইসিসির সঙ্গে সহযোগিতা না করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

কিন্তু মার্কোস ও দুতার্তের মধ্যকার সম্পর্কের সুতা দ্রুত ও দর্শনীয়ভাবে আলগা হয়ে যায়। সন্তর্পণে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ আইসিসির তদন্তকারীদের ফিলিপাইনে প্রবেশের অনুমতি দেয় মার্কোস সরকার।

দুতার্তের মুখপাত্র হ্যারি রক বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের মুক্তির জন্য তাঁর আইনজীবীরা আদালতে পিটিশন দাখিল করার চেষ্টা করছেন।

এদিকে এক বিবৃতিতে রদ্রিগো দুতার্তের মেয়ে সারা দুতার্তে বলেছেন, তাঁর বাবাকে জোরপূর্বক দ্য হেগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা ন্যায়বিচার নয়, এটা নির্যাতন ও নিপীড়ন।’

দুতার্তে তাঁর কথিত ‘ডেথ স্কোয়াড’কে ঘিরে দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা সেটিকে ভীষণভাবে বিদ্ধ করেছে। এমনকি ছয় বছরের প্রেসিডেন্ট পদের এককালীন মেয়াদ শেষেও তাঁকে বিচারের ঊর্ধ্বে থাকা একজন ব্যক্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তের মেয়ে সারার সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করেই রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ২০১৬ সালে দুতার্তে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁদের জন্য বরং দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো হবে। কেননা, নাগাল পেলে তাঁদের ‘হত্যা’ করবেন তিনি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর এ যুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুতার্তের অভিষেকের পর দ্রুতই একদল পুলিশ সদস্য ম্যারি অ্যান ডোমিঙ্গোর ছোট অ্যাপার্টমেন্টে হানা দিয়ে তাঁর স্বামী ও সন্তানকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে গত বছরের জুন মাসে বিচারের এক বিরল ঘটনায় একজন বিচারক অভিযানে অংশগ্রহণকারী চার পুলিশ সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁদের কারাগারে ঢোকানো হয়নি।

ডোমিঙ্গো বলেন, ‘এখানে ন্যায়বিচার বলে কিছু আছে, আমি মনে করি না। দুতার্তের কোনো অনুশোচনা নেই।’

প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সংঘটিত ওই ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়েছেন দুতার্তে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ছিলেন অধরাই। এখন তাঁকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় একদিকে যেমন আনন্দাশ্রু বইছে, অন্যদিকে তাঁর বিচার আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে হতাশাও।

গ্রেস গারগান্তার বয়স ৩২ বছর। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে নভোতাস এলাকায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাঁর বাবা ও ভাইকে হত্যা করেন মুখোশ পরা ব্যক্তিরা।
এই নারী বলেন, ‘আমি (বিচারের) আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু এটি (দুতার্তের গ্রেপ্তার) আমার ভেতর আবারও আশার অনুভূতি জাগিয়েছে। কেননা, দুতার্তে ও তাঁর ক্ষমতাধর লোকজনের বিরুদ্ধে আমার মতো সাধারণ ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছে।’

এখানে ন্যায়বিচার বলে কিছু আছে, আমি মনে করি না। দুতার্তের কোনো অনুশোচনা নেই।ম্যারি অ্যান ডোমিঙ্গো, স্বামী ও সন্তান হারানো ফিলিপিনো

ইতিমধ্যে ম্যানিলায় মাদকবিরোধী অভিযানের শিকার ব্যক্তিদের মা, স্ত্রী, বোন ও মেয়েদের পরিচালিত একটি কফি শপ গ্রাহকদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। আর কুইজন সিটিতে নিহতদের স্মরণে একটি বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

দুতার্তের মাদকযুদ্ধ নিয়ে গত বছর এক তদন্ত শুরু করেছে ফিলিপাইনের প্রতিনিধি পরিষদ। তবে সেখানে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হাজির হতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। অবশ্য নিজের পক্ষে উল্লেখযোগ্য সমর্থন থাকা সিনেটে গত অক্টোবরে এক শুনানিতে উপস্থিত হন এই সাবেক প্রেসিডেন্ট।

মাদকবিরোধী অভিযানের পক্ষে সে সময় দুতার্তে বলেছিলেন, ‘আমি এবং আমি একাই এর সব সাফল্য ও ত্রুটির পুরোপুরি দায় নিচ্ছি। পুলিশ শুধু আমার নির্দেশ পালন করেছে। আমি দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। যেসব পুলিশ আমার নির্দেশ পালন করেছে, তাদের নয়; একমাত্র আমাকেই কারাগারে দেওয়া উচিত।’

গতকাল যা ঘটল, তা এখন দুতার্তের বিচার করার এমন সম্ভাবনাকেই জাগিয়ে তুলেছে।

আরও পড়ুনআইসিসির পরোয়ানা: ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তে গ্রেপ্তার১১ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তেকে আইসিসিতে পাঠানো হয়েছে৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ম নবত ব র ধ ফ ল প ইন র আইস স র প কর ছ ন র কর র পর য় ন র জন য তদন ত অপর ধ গতক ল বছর র হওয় র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।

২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।

দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।

জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।

স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।

তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।

ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।

৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।

আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিং

দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।

স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।

স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।

মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫

মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।

এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।

সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়