তথ্য চাওয়ায় সিংড়ায় সমকালের সাংবাদিক আটক
Published: 13th, March 2025 GMT
নাটোরের সিংড়ায় দৈনিক সমকালের সিংড়া উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুর রশিদকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তবে আটকের কারণ নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য নেই পুলিশ ও প্রশাসনের।
চলতি মাস থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ডেভিল হান্ট’ বাতিল করলেও এ অভিযানের নামেই তাঁকে আটকের কথা উল্লেখ করা হয়। পুলিশ বলছে, আব্দুর রশিদ সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। যদিও তিনি ওই পদে নেই।
জানা গেছে, সমকালের সিংড়া উপজেলা প্রতিনিধিকে ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সহসভাপতি নির্বাচিত করে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ওইদিনই তিনি পদত্যাগ করেন এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো.
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে সাংবাদিক আব্দুর রশিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন নাটোরের তিন প্রেস ক্লাবের সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে নাটোরের কর্মরত সাংবাদিকরা আজ বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি পালন এবং সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রশিদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করবেন।
আটকের বিষয়ে সিংড়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সাংবাদিক আব্দুর রশিদ সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার দপ্তরে উপজেলার খাস জলমহালের তথ্য চান। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদ আলী মোল্লার সঙ্গে মোবাইল ফোনে তর্কবিতর্ক হয়। এরই জের ধরে ডেভিল হান্টের নাটক সাজিয়ে সাংবাদিক আব্দুর রশিদকে আজ (বুধবার) সন্ধ্যায় আটক করা হয়েছে।
নাটোর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র করেসপনডেন্ট নাজমুল হাসান বলেন, সিংড়ার ইউএনওর প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদ আলী মোল্লার অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে সমকালের সিংড়া প্রতিনিধিকে আটক করেছে সিংড়া থানা পুলিশ। এখন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়াটাই কি তাঁর অপরাধ? দেশব্যাপী সাংবাদিকদের প্রতি যে দমনপীড়ন তারই অংশ হিসেবে তাঁকে আটক করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
একাত্তর টেলিভিশনের নাটোর প্রতিনিধি ও সাংবাদিক নেতা বুলবুল আহমেদ বলেন, সমকালের সাংবাদিক ইউএনওর খাস পুকুরে লিজসংক্রান্ত তথ্য চাওয়ায় আটক করা হয়েছে। তথ্য চাওয়াসংক্রান্ত বিষয়ে একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। উপজেলা নির্বাহীর অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ করেছেন। আমরা অবিলম্বে তাঁর মুক্তি এবং হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। আমরা মনে করি, এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা হস্তক্ষেপের শামিল।
নাটোরের ইউনাইটেড প্রেস ক্লাবের সভাপতি নাসিম উদ্দীন নাসিম বলেন, অন্যায়ভাবে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে সমকালের সিংড়া প্রতিনিধিকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিংড়া থানার ওসি আসমাউল হক সাংবাদিকদের জানান, রশিদ বর্তমানে সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পদে রয়েছেন। দেশব্যাপী চলমান ডেভিল হান্ট অভিযানের আওতায় তাঁকে আটক করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো মামলা তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে কিনা জানতে চাইলে জবাব দেননি তিনি।
এ বিষয়ে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘পুকুর ইজারাসংক্রান্ত বিষয়ে রশিদ সাহেব আমাদের কাছে তথ্য আইনে আবেদন করে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। আমরা সেগুলো প্রস্তুত করছিলাম। আমি বাইরে সভায় ব্যস্ত ছিলাম, পরে শুনলাম প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে। সন্ধ্যার পরে ওসি আমাকে জানান, সমকালের সাংবাদিক রশিদকে আটক করা হয়েছে।’
নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিসেবে আটক করা হয়েছে। দল থেকে তাঁর পদত্যাগ করার বিষয়টি আগে জানা যায়নি। তাঁর উচিত ছিল আগেই বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়া। রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’