জামালপুরে জমজমাট জামাই মেলা, রমজানে বিক্রি কম বলছেন ব্যবসায়ীরা
Published: 18th, March 2025 GMT
জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই গোপালপুর বাজার। সেখানে আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে বসেছে মেলা। গোপালপুর-নরুন্দি সড়কের দুই পাশসহ পুরো মেলা চত্বরে বসেছে বিভিন্ন পণ্যের পসরা। ছোট্ট এক শিশু বাবার হাত ধরে দ্রুতগতিতে মেলার ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পাশ থেকে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘নামে জামাই ম্যালা হইলেও এনে সবচেয়ে বেশি মজ-মাস্তি করে করে পোলাপানেরাই (শিশুরা)।’
জামালপুরের গোপালপুর ‘জামাই মেলা’ গত শনিবার শুরু হয়েছে, চলবে আগামী বুধবার পর্যন্ত। এবার রমজান মাসে আয়োজিত হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কোনো কমতি নেই। সোমবার গিয়ে দেখা যায়, এ মেলা কেন্দ্র করেই আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এখন বইছে উৎসবের আমেজ।
প্রতিবছর ১-৫ চৈত্র (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) সদর উপজেলার ঝাওলা গোপালপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ ও এর আশপাশে এই মেলা বসে। একে কেন্দ্র করে এলাকার জামাইয়েরা শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন। এ কারণেই মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। আর জামাইয়েরাই মেলার মূল আকর্ষণ। পাঁচ দিনের এই মেলায় সদর উপজেলার গোপালপুর, নরুন্দি, ঘোড়াধাপ, ইটাইল, বাঁশচড়া, তুলসীরটর, লক্ষ্মীরচর, রানাগাছা ও প্রতিবেশী ময়মনসিংহের চেচুয়া এলাকাসহ আশপাশের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।
রমজান মাস সকালে মেলায় তুলনামূলক কম লোকজন থাকলেও তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গভীর রাত পর্যন্ত শিশু, নারী-পুরুষের ব্যাপক ভিড় থাকে। জামাইদের সবচেয়ে বেশি ভিড় চোখে পড়ে দুপুরের ঠিক পরপর।
মেলায় শিশুদের বিনোদনের কেন্দ্র.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আশপ শ
এছাড়াও পড়ুন:
‘দেশে ভালো-মন্দ দেখার কেউ নেই প্রতিবাদ করলে অপমানিত হতে হয়’
ঈদের ছুটি শেষে গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। সবাই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব। যে যেমন করে পারছেন গাড়িতে উঠছেন। কেউ বাসে, কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, আবার অনেকে ট্রাক ভাড়া করেও রাজধানীর দিকে ছুটছেন। তিন চাকার যানে মহাসড়কে চলাচল নিষেধ থাকলেও দেদার চলছে শেরপুর-ময়মনসিংহ সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। শুধু তাই নয়, ব্যাপক গতির সঙ্গে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন যাত্রীরা।
পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গত শুক্রবার কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা সদরের বাড়িতে যান পোশাকশ্রমিক আমিন মিয়া। বাস না পেয়ে তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে প্রথমে ভালুকা পরে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর আসেন। তার অভিযোগ– ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরের ভাড়া ১৫০ টাকা। এবার তিনি এসেছেন ২৫০ টাকায়। ছুটি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে ফেরার সময় একই ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাকে। এ নিয়ে বচসা শুরু হলে তাঁকে বেশ নাজেহাল হতে হয় শহরের সদর থানা এলাকার অটোস্ট্যান্ডে চালক ও সুবিধাভোগীদের হাতে। এ সময় আমিন মিয়া দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘অটোরিকশা স্ট্যান্ডে এসে মনে হয়েছে দেশে ভালো-মন্দ দেখার কেউ নেই। যার যা খুশি তাই করছে। প্রতিবাদ করলেও অপমানিত হতে হয়। আমরা কম আয়ের মানুষ। কি আর করবো।’ নিরূপায় হয়ে ২৫০ টাকা দিয়েই রওনা দিতে হয় তাকে।
আমিন মিয়ার মতো অসংখ্য যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কিন্তু সবাই মুখেই কুলুপ আটা। কেউ কিছু বলছেন না। আকরামুজ্জামান নামে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এক যাত্রী এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনাদের বলে কোনো লাভ নেই। ঈদুল ফিতরেও একই অবস্থা ছিল। পত্র- পত্রিকায় খবর দেখেছি। কিন্তু কিছুই তো হলো না।’ তার ভাষ্য, অটোরিকশার চালকরা ভাড়া তো বেশিই নিচ্ছে। তা ছাড়া যে গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে তাতে জীবনাটা হাতের মুঠোয় নিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে।
জেলা শহরের রঘুনাথ বাজার থানামোড় ও খোয়ারপাড় এলাকার স্ট্যান্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায় লোকে লোকারণ্য। এর সুযোগ নিচ্ছে চালক ও দালাল শ্রেণি। জানা গেছে, থানামোড় থেকে জামালপুরের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এ সড়কে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর এসে থামেন ৮টি উপজেলার যাত্রীরা। ঝিনাইগাতী থেকে শেরপুর সদরের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার, এখানে ৪০ টাকার ভাড়া দিনে ৬০ টাকা, রাতে ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। শ্রীবরদী শহর থেকে যারা আসছেন তাদের ১৭ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। ৮০ টাকাও নিচ্ছেন কেউ কেউ। নালিতাবাড়ি উপজেলা সদর থেকে এসে অনেকেই ভাড়া দিয়েছেন ৮০ টাকা। অথচ বিআরটিএ ২৬ কিলোমিটার সড়কের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে ৫০ টাকা।
জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনে থেকে তারাকান্দার দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। অটোরিকশার যাত্রী তৌফিকুর রহমান বলেন, আগে ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় অটোরিকশা চালক আক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কি করতাম ভাই, গ্যাস পাম্পে গেলে ৩ ঘণ্টা বইসা থাইকা গ্যাস নিতে হয়। গ্যাসের চেয়ে হাওয়া থাকে বেশি। ১৯০ টাকার গ্যাস ২০০ টাকা দিলে টাকা আর ফেরত দেয় না। তাই ভাড়া বেশি না নিলে পুষে না।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, ঈদের শুরু থেকে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের উপস্থিতি যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ সব কিছু ঠিকঠাক থাকে। চলে এলে ফের অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়।