বিআইসিএম নিয়োগ কমিটির ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
Published: 18th, March 2025 GMT
নিয়োগ বাতিলের হুমকি এবং অভিজ্ঞতা সার্টিফিকেট ম্যানেজ করে দেওয়ার কথা বলে সাত লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) নিয়োগ কমিটির আহ্বায়কসহ ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ডিআরইউ-এর সাগর–রুণী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। একই প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী কর্মী গাড়িচালক মো.
অভিযুক্তরা হলেন, বিআইসিএমের আহ্বায়ক মো. নাজমুছ সালেহীন, উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহিল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সানাউল্লাহ বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিআইসিএম-এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গাড়িচালক পদে আমি মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় আমার এনআইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, দাখিল করে গাড়িচালক পদে চাকরির জন্য আবেদন করি। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ পাই। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটে নিয়োগ কমিটি-২ আমার সমস্ত কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে। নিয়োগ কমিটি-২ ওই নিয়োগের সব কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিআইসিএম এর নিয়োগ কমিটি-২ এর সদস্য ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সদস্য সচিব এবং আহ্বায়ক নাজমুস সালেহীন।
সানাউল্লাহ বলেন, বিআরটিসির একজন কর্মকর্তাসহ নিয়োগ কমিটি আমার গাড়ি চালানো পর্যালোচনা-পর্যবেক্ষন করে এবং কমিটি কর্তৃক আমি সুপারিশ প্রাপ্ত হই। পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্নের মাধ্যমে আমার নিয়োগপত্র জারি করে।
এ অবস্থায় একই প্রতিষ্ঠানের নাজমুস সালেহীন এর নেতৃত্বে উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহিল ওয়ারিশ সাত লাখ টাকা দাবি করে। তারা আমাকে জানায় যে, তোমার পাঁচ বছর অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে যেটা তুমি এখানে জমা দেননি। এই অভিজ্ঞতা সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য বিষয়গুলো আমরা ম্যানেজ করে দিবো এইজন্য টাকা পয়সা লাগবে। এতে আমি আপারগতা জানালে, তারা বলে তুমি যদি এতে রাজি না হও, তাহলে তোমার নিয়োগ আমরা বাতিল করে দিব। তখন আমি উপায় না পেয়ে তাদের কথা অনুযায়ী ৭ লাখ টাকা দেই এবং তারা গ্রহণ করে। অতঃপর মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহিল ওয়ারিশ নিজে অভিজ্ঞতা সনদ বানিয়ে নিয়ে আসে।
ভুক্তভোগী সানাউল্লাহ আরও বলেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অধীনস্থ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন য় গ কম ট স ন উল ল হ পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫