বিএনপিকে আওয়ামী লীগের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি দিয়ে যে দলের শুরু, সে দলটা আমাদের বলে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের কী হবে।’

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল কলোনি সমাজকল্যাণ সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহফিলে এ কথা বলেন মির্জা আব্বাস। মতিঝিলের এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কালকে পত্রিকায় দেখলাম, নতুন যে দলটা হইছে, সে ভাইদের বিরুদ্ধে আমজনতা পার্টি যে ভাষায় কথা বলেছে, আমি তো তাদের ভাষায় বলতে পারছি না। ফেসবুকে দেখি, তারা বসুন্ধরার থেকে টাকা নিয়েছে। তাদের কথা বলা হয়েছে, তারা এ কে আজাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, একজন বোন আছে, সে নাকি ইদানীং ব্র্যান্ডের জামাকাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়। টাকা পায় কোথায়? ওরাই বলতেছে, আমি কিন্তু বলি নাই। ভাই, আমি কিন্তু বলি নাই। এটা কিন্তু ফেসবুকে প্রেস ব্রিফিংয়ের কথা বলতেছি। তো, চাঁদাবাজি দিয়ে যে দলের শুরু, সে দলটা আমাদের বলে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের কী হবে।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে অনেকে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। একটু খেয়াল করে দেখবেন, পত্রপত্রিকায় বিএনপি সম্পর্কে ভালো কথা লেখে না। শুধু খারাপ যেটা আছে, ওমুক জায়গায় চান্দাবাজি করেছে বিএনপি, অন্য জায়গায় জামায়াতে ইসলামী যে করেছে, ওটা লেখে না।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপির বিরুদ্ধে আপনারা যে অপবাদ দিয়েছেন, আজকে দেশের মানুষ সে অপবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ দেশের কোর্ট রায় দিয়েছেন, বিএনপি কোনো প্রতারকের দল নয়, বিএনপি কোনো ভন্ডের দল নয়, বরং বিএনপির কাঁধে ভর করে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মন্ত্রী হয়েছেন। এ কথাটা মাথায় রাখতে হবে। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করছেন।’

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘সবাই ভাবতেছে, বিএনপি ক্ষমতায় আসবে কিছুদিন পর, সুতরাং কোণঠাসা করতে হবে। বিএনপিকে আওয়ামী লীগের মতো দেশ থেকে বের করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগের তো একটা মামুর বাড়ি ছিল। বিএনপির তো মামুর বাড়িও নাই, চাচার বাড়িও নাই। এটিই তো বাড়ি।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে এই রাজনীতিক বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, “বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, কোনো প্রভু নাই।” তাঁকে এক–এগারোর সময়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি বলেছেন, “আমি এ দেশ ছেড়ে যাব না।” খালেদা জিয়া দেশ ছেড়ে যাননি, ছেড়ে যাওয়ার মানুষও নন। তিনি এখনো অসুস্থ অবস্থায়। ছেলে, ছেলের বউ, নাতনি পরিবার ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসতে চাইছেন। হয়তো ঈদের পরে ফেরত আসবেন।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপিকে অযথা দোষারোপ করবেন না। সব রাজনৈতিক দল নির্দোষ, একমাত্র দোষ হলো বিএনপির। বিএনপিকে আওয়ামী লীগের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, আর আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ১৭ বছর ঘরছাড়া রেখেছে। আমি ১১ বছর জেল খেটেছি, আমার স্ত্রীর ১৬ বছর জেল হয়েছে।’

মতিঝিল কলোনি সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি কাজী মাহফুজ এলাহীর সভাপতিত্বে অভিষেক অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহিফলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুসহ দলটির নেতারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব এনপ ক ক ষমত য় ব এনপ র আম দ র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ