ইউরোপে জেনারেটিভ এআই সহকারী চালু করছে মেটা
Published: 21st, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সহকারী পরিষেবা চালু করছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি মেটা। গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা চলতি সপ্তাহেই ইউরোপের ৪১টি দেশে তাদের মেটা এআই সহকারী চালু করতে যাচ্ছে।
এক বিবৃতিতে মেটা জানিয়েছে, ‘আমরা আমাদের এআই প্রযুক্তি ইউরোপের মানুষের হাতে তুলে দিতে যতটা সময় চেয়েছিলাম, তার চেয়ে বেশি সময় লেগেছে। কারণ, আমরা এর জটিল নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাটি নেভিগেট করে চলেছি। তবে আমরা আনন্দিত যে অবশেষে আমরা এটি এখানে নিয়ে এসেছি। এই সপ্তাহ থেকেই ইউরোপীয় ৪১টি দেশে মেটা এআই সহকারী পরিষেবা শুরু হবে।’
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মেটা এআই সহকারী পরিষেবা চালু করা হয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে মেটার সব অ্যাপ্লিকেশনে এআই যুক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে মেটা এআই পরিষেবায় ইমেজ জেনারেশনের (কৃত্রিম ছবি বানানো) সুবিধা থাকলেও ইউরোপে এটি শুধু টেক্সট (লেখা আকারে) সেবা দেবে। ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের উত্তরে মেটা ওয়েব অনুসন্ধানও ব্যবহার করতে পারে।
কোম্পানিটি বলেছে, মেটার এআই বট কনভার্সেশনের মাধ্যমে আগ্রহের বিষয়ে গভীর তথ্য অনুসন্ধান, ভ্রমণ পরিকল্পনা অথবা কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেই সম্পর্কে সহযোগিতা করবে। মেটা এখন ইউরোপীয় ৪১টি দেশ ও সেখানকার ছয়টি ভাষায় অপারেট করছে। গ্রুপটি এই বছর এআই মডেল তৈরি করতে ৬০-৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, যার বেশির ভাগ অর্থ ডেটা সেন্টার, সার্ভার ও নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে ব্যয় হবে।
মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ জানুয়ারিতে কোম্পানিটির ২০২৪ সালের আর্থিক বিবরণী ঘোষণার সময় বলেছেন, ‘এটি একটি বিশাল প্রচেষ্টা এবং আগামী বছরগুলোতে এটি আমাদের মূল পণ্য ও ব্যবসাকে এগিয়ে নেবে। এটি ঐতিহাসিক উদ্ভাবন উন্মোচন করবে এবং আমেরিকার প্রযুক্তিগত নেতৃত্বকে প্রসারিত করবে।’ বর্তমানে মেটা এআই সহকারীর প্রায় ৭০ কোটি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে বলে দাবি করছে মেটা। তবে এখনো তা ১০০ কোটি না হওয়ায় কিছুটা লাজুক জাকারবার্গ। তিনি বলেছেন, একটি ‘টেকসই দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা’ সুরক্ষিত করার জন্য এটি প্রয়োজন ছিল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস