সুন্দরবনে থেকে থেকে জ্বলছে আগুন, রাত নামায় পানি দেওয়া হয়নি
Published: 22nd, March 2025 GMT
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ি এলাকায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ফায়ার লাইন (শুকনা পাতা ও মাটি সরিয়ে নালা তৈরি) কাটা হয়েছে। তবে কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে পানি দেওয়া যায়নি।
আজ সকালে কলমতেজী টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন বনের টেপার বিল এলাকায় ধোঁয়া দেখতে পান পাশের এলাকার বাসিন্দারা। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা একসঙ্গে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বন বিভাগের সঙ্গে শত শত স্থানীয় বাসিন্দা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে শুকনা পাতা ও মাটি সরিয়ে নালা তৈরি করে ফায়ার লাইনের কাজ করেন। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায়ও বনের বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। তবে ঘন গাছপালার ভেতর দিয়ে যাতায়াত ও পানির পাইপ নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। বিকেলে বন বিভাগ ভোলা নদীতে নিজস্ব পাম্পমেশিন বসিয়ে পাইপ টানতে শুরু করে। সাড়ে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস। তবে সন্ধ্যা নামায় তারা বন থেকে বের হয়ে এসেছে।
ঘটনাস্থল ঘুরে আসা পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের এইচ এম জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বনের বেশ ভেতরে আগুন লেগেছে। প্রায় তিন কিলোমিটার পথ হাঁটতে হবে। গাছপালার মধ্যে হাঁটা যায় না। এখানে বনের মধ্যে ভালো ছিলাও (পায়ে হাঁটার পথ) নেই। গাছের কারণে কিছু জায়গা দিয়ে নিচু হয়ে চলতে হয়। এর মধ্য দিয়ে পাইপ টানতেও কষ্ট হয়েছে।’
আরও পড়ুনসুন্দরবনে আগুন, পানির উৎস পেতে বেগ৩ ঘণ্টা আগেরাজাপুর এলাকার ইউপির সাবেক সদস্য পান্না মিয়া বলেন, সকালে সুন্দরবনের টেপার বিল এলাকার ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরে দুপুর থেকে স্থানীয় শত শত মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তিনিও সেখানে গিয়েছিলেন। বেশ দুর্গম পথ। আশপাশে কোনো নদী-খাল নেই। তাই পানি নিতে দেরি হচ্ছে। আগুন যেন না ছাড়ায়, সে জন্য সরু পথ (ফায়ার লাইন) কাটা হয়েছে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায়। সেখানে প্রচুর শুকনা পাতা, এটাই ভয়। যদিও দাউ দাউ করে কোথাও জ্বলছে না।
সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে পানি নিতে পাশের ভোলা নদীতে নিজেস্ব পাম্প মেশিন বসিয়েছে বন বিভাগ। দুর্গম পথ হওয়া পাইপ নিতে দেরি হচ্ছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন বন ব ভ গ র এল ক এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস