ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। উৎসবে মেতে উঠতে প্রস্তুত সবাই। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে নতুন পোশাকসহ যাবতীয় কেনাকাটাও সেরে ফেলেছেন অনেকেই। কিন্তু এমন অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে, যাদের নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই। তাদের মধ্যে ঈদের খুশি ছড়িয়ে দিতে বিশেষ আয়োজন করেছে সৈয়দপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’।
বৃহস্পতিবার শহরের গোলাহাট এলাকায় ১ টাকায় ঈদের নতুন পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। দোকানে শোভা পাচ্ছে নতুন ডিজাইনের ফ্রক, পাঞ্জাবি, শার্ট ও প্যান্ট। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ১ টাকার বিনিময়ে তাদের পছন্দমতো পোশাক কিনে নিচ্ছে। নামমাত্র টাকায় নতুন পোশাক পেয়ে খুশি শতাধিক শিশু।
শহরের গোলাহাটের শিশু শবনম ও সুমাইয়া জানায়, উৎসবে তাদের মা-বাবার পক্ষে নতুন কাপড় কেনা সম্ভব হয় না। এখানে ১ টাকায় নতুন পোশাক দেওয়া হচ্ছে শুনেই ছুটে আসে। ১ টাকায় পছন্দমতো পোশাক কিনতে পেরে খুশি তারা। এবার ঈদ ভালো কাটবে বলে জানায় তারা।
অসহায় শিশু সাব্বির ও মল্লিকের বাবা নেই। মা অন্যের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এখনও তাদের জন্য নতুন কোনো জামা কিনতে পারেননি। মাত্র ১ টাকায় নতুন পোশাক পেয়ে তারাও খুব খুশি।
সংগঠনের সদস্য সামিউল, রাজা ও রাব্বি জানান, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা নতুন কাপড় কিনতে পারে না। তাদের ঈদ বর্ণিল করতেই আমাদের এ আয়োজন। ঈদের আগ পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নওশাদ আনসারী বলেন, সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম শিশুদের জন্য আমাদের এই আয়োজন। সদস্যরা নিজস্ব অর্থায়নে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য নতুন পোশাক কিনেছেন। পর্যায়ক্রমে বড়দের জন্যও শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস ও সেমাই, চিনি, দুধের ব্যবস্থা করা হবে। এ কার্যক্রম চাঁদরাত পর্যন্ত চলবে বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নত ন প শ ক দ র জন য স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস