১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগের ছয় বছর রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে নির্বাসিত জীবন কেটেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে আবার সেই ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ফলে ৪৩ বছর পর এবার ঈদ কাটাতে হচ্ছে নেতাকর্মী ছাড়া।

দেশে ফেরা আর ছাড়ার মাঝখানের ৪৩ বছরে দু-একবার ব্যতিক্রম বাদে দেশের মাটিতে ঈদ কাটিয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশেষ করে গত ষোলো বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ঈদ উদযাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে। কিন্তু এবার ঈদুল ফিতরের দিনটিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে থাকতে হচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। শেখ হাসিনার ঈদ কেমন কাটবে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই।

শুধু শেখ হাসিনা নন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীও ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। বাকি লাখো নেতাকর্মীর কেউ দেশে, কেউ বিদেশে পালিয়ে আছেন। তাদের অনেকের সঙ্গে ভার্চুয়াল যোগাযোগ থাকলেও সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ নেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। তাই নেতাকর্মী থেকেও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ঈদের দিন কাটাতে হবে তাঁকে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কৃর্তত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। সরকার পতনের ওই দিনটিতে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে যান তিনি।

এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার সঠিক অবস্থান নিয়ে রয়েছে জল্পনা-কল্পনা। ভারত সরকার তাঁর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি। তবে সর্বশেষ ২৪ অক্টোবর ভারতের গণমাধ্যম দ্য প্রিন্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‌‘শেখ হাসিনা দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারতীয় সরকারের ব্যবস্থাপনায় নয়াদিল্লির লুটিয়েনস বাংলো জোনের একটি নিরাপদ বাড়িতে বসবাস করছেন।’ এর আগে তাঁকে নয়াদিল্লি থেকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠলেও তা নাকচ করে দেয় গণমাধ্যমটি।
শেখ হাসিনা এবারের ঈদের দিনটি নয়াদিল্লির লুটিয়েনস বাংলো জোনের ওই নিরাপদ বাড়িতে কাটাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। গত প্রায় আট মাসে এক মুহূর্তের জন্য প্রকাশ্যে দেখা যায়নি তাঁকে। অবশ্য ভারতে বসে টেলিফোন কিংবা অনলাইনে দেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন, দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ 
নেতাকর্মীর উদ্দেশে ভার্চুয়াল ভাষণ দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, সুধাসদনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং নেতাকর্মীর বাড়ি পুড়িয়ে ও গুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও 
ই-মেইল থেকে নিয়মিতভাবে শেখ হাসিনার বিবৃতি প্রচার করা হচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় বেঁচে যান বেলজিয়াম অবস্থানরত দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে জার্মানি হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ত কর ম র ৫ আগস ট অবস থ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ