বিদায়ী বসন্তের চঞ্চল হাওয়ায় চারদিকে বইছে ঈদ আনন্দের আমেজ। এমন আমেজে শিশু, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সীরা যাচ্ছেন বালিজুড়ি এফএম উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের দিকে। নাগরদোলার কড়কড় আওয়াজ, বিচিত্র বাঁশি বা বাদ্যের আওয়াজ ছাপিয়ে কানে আসছে মানুষের হইহুল্লোড়।

বিশাল মাঠের বিভিন্ন জায়গায় চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। ধোঁয়া উঠছে উত্তপ্ত কড়াই থেকে; ভাজা হচ্ছে জিলাপি, চিনির গজা, খুরমা, গুড়ের খইসহ বাহারি মিষ্টান্ন। ঈদ ঘিরে এবারও জমে উঠেছে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার শতবর্ষী এই মেলা।

সকাল থেকে হরেক রকম দোকান সাজিয়ে বসলেও মেলা জমে ওঠে দুপুরের পরপর। মাঠে জনসমাগম থাকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত। স্থানীয় লোকজন জানান, শত বছরে ধরে চলা মেলাটি শুধু ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ৭ দিনের জন্য বসে। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানিরা এ মেলায় আসেন। একেবারে শুরুর দিকে মেলায় শুধু ঐতিহ্যবাহী খাবারের কয়েকটি দোকান থাকলেও দিন দিন এর পরিধি ও সংখ্যা বেড়েছে। গ্রামটির বাসিন্দা ও ঈদের ছুটিতে এলাকায় আসা লোকজনই মূলত এসব পণ্যের ক্রেতা। শুধু তা–ই নয়, সারা জেলা থেকে অনেকেই সপরিবার ছুটে আসেন এ মেলায়।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ঢল নেমেছে মেলার আশপাশের এলাকায়। শিশুরা অভিভাবকদের হাত ধরে তাড়াহুড়ো করে মেলার ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। আর দোকানিরা তো ক্রেতা সামলাতে মহাব্যস্ত। মেলায় তিলধারণের ঠাঁই নেই।

মেলা থেকে মিষ্টি জাতীয় খাবার কিনছেন এক ক্রেতা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি

ভোলার ভ্যাপসা গরম, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সদর রোডজুড়ে তীব্র যানজট নাগরিক জীবনকে ব্যস্ত করে ফেলে। গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। আর সেই স্বস্তি এনে দিতে পারে ভোলার বিখ্যাত বৈষা দধি।

দুপুরের আগেই সব দোকানের হাঁড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। মহিষের কাঁচা দুধে পাতানো এই দই ভোলার স্বাদ, ইতিহাস ও গর্বের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।

ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়। এই দইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে এটি পাতা হয়। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায়, সেসব তৈরি হয় গরুর দুধ দিয়ে এবং দুধ জ্বালিয়ে গাঢ় করে। কিন্তু ভোলার বৈষা দধি হয় মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে।

জলবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার এক অমূল্য সম্পদ মহিষ। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এই চার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার মহিষ। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি, তবে স্থানীয় লোকজনের মতে তা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এই মহিষের দুধই বৈষা দধির প্রাণ।

প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে এই দই। এ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান এটি। উৎসব-পার্বণ, বিয়েশাদি কিংবা যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বৈষা দধি ছাড়া যেন ভোলার কোনো উৎসব পরিপূর্ণতা পায় না।

মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, দুই শ বছর আগে থেকে ভোলায় চর জাগতে শুরু করে। বসতি হয়, মহিষ পালন শুরু হয়। দুধ সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দই বানাতেন। সেখান থেকেই বৈষা দধির যাত্রা শুরু, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।

ভোলার মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই দই। এটি ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার, আবার গরমের দিনে দই, পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘোল—যা শরীরকে শীতল রাখে। শীতকালে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই ও খেজুরের গুড়—ভোলার ভোজনরসিকদের কাছে এক অনন্য স্বাদ। পান্তাভাতের সঙ্গে দই ও খেজুরের গুড় এই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।

বর্তমানে প্রতি কেজি বৈষা দই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে ঈদে দাম বেড়ে যায়। ঈদের আগেই বিক্রেতারা দুধ জমাতে শুরু করেন এবং এ সময়ে প্রতিদিন ৮০০–৯০০ কেজি পর্যন্ত দই বিক্রি হয়।

ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব অনুষ্ঠিত
  • উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
  • কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
  • কারও কোনো অপরাধ নাই
  • বিশ্বকর্মা পূজা: গাঙ্গেয় শিল্পের উৎসব
  • আজ থেকে বুসান উৎসব, নানাভাবে রয়েছে বাংলাদেশ
  • ‎সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব : ডিসি
  • ঘুম থেকে অনন্ত ঘুমে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড
  • ২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
  • সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ