ঈদ মানে উৎসব। উৎসব মানে আনন্দ। বয়স, অর্থনৈতিক সচ্ছলতার মানদণ্ডে আনন্দ উপভোগের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই ধরুন, মফস্‌সল শহর রংপুরে আমার বেড়ে ওঠা। আমি একসময় ঈদ উদ্‌যাপন করেছি বাঁধনহীনভাবে। ছিল নির্মল আনন্দ। এখন বয়সের কারণে সেভাবে আর হয়ে ওঠে না।

রংপুর শহর ছিল তখন ছিমছাম, গোছানো। এখনকার মতো বড় বড় বহুতল ভবন, ঝলমলে শপিং মল, এত গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশা ছিল না। মা-বাবারাও সন্তানদের নিয়ে এত চিন্তা করতেন না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন পর্যন্ত মা–বাবার সঙ্গে নতুন কাপড় পরে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছি। তাঁদের ছাড়া একা বেড়ানোর সাহস হয়নি। আমরা ঠিকাদারপাড়া কলেজ রোডে থাকতাম। মাধ্যমিকে এসে পাড়ার সমবয়সীদের নিয়ে দল বেঁধে এ বাড়ি–ও বাড়ি যেতাম। কলেজে এসে বেড়ানোর সীমানা বেড়ে গেল। রংপুরের বিভিন্ন পাড়ায় বান্ধবীদের বাসায় গিয়ে আড্ডা দিতাম। আর ঈদে কার পোশাক কত সুন্দর, সেটা দেখা হতো!

আমার মা বা অন্য মায়েদের যেমন দেখেছি, ঈদ এলে হাসিমুখে রাজ্যের দায়িত্ব তাঁরা পালন করেন। ঈদ উৎসব সার্থক করতে আম্মাকে দেখতাম, বাড়িঘর পরিপাটি থেকে সাজগোজ, ধোয়ামোছা, কেনাকাটা, জাকাত দেওয়া, রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ততার কমতি নেই। ঈদের দিনে আমাদের সাজগোজ, পোশাক ঠিক আছে কি না, সেটি যেমন দেখতেন, তেমনি রান্নাবান্না, অতিথি আপ্যায়ন নিয়ে আম্মা ব্যস্ত থাকতেন।

আরও পড়ুনঈদের দিনটা কেটে যায় কাজে, নিজের জন্য আর কিছুই থাকে না৩১ মার্চ ২০২৫

নামাজ শেষে আব্বা সঙ্গে করে পাড়ার মামা, চাচাদের নিয়ে আসতেন। নিজেদের আত্মীয়স্বজন আসত। আম্মা হরেক রকম সেমাই, পুডিং, মাংস, পোলাও দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। ঈদের পরেও কয়েক দিন ব্যস্ততায় কাটত। আম্মার কাজের সহকারী হানুফার কথা মনে পড়ে। তার কোনো ঈদ–আনন্দ ছিল কি না, কখনো জানা হয়নি। কারণ, তার তো বসে থাকারই ফুরসত ছিল না।

নাসিমা আকতারের (ডান দিক থেকে প্রথম) বড়বেলার ঈদ কাটে নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার