সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।’

‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ শীর্ষক এক আঞ্চলিক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে আজ শনিবার সকাল ১০টায় রংপুরের জি এল রয় রোডের গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে সেমিনারটি হয়। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

সেমিনারে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘পৃথক সচিবালয় বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। প্রস্তাবিত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় বিচারিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

‘কখনো ক্ষমতার পূর্ণ পৃথক্‌করণের লক্ষ্যের এতটা কাছাকাছি আসিনি’

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘বিচারিক সংস্কার শুধু বিভিন্ন খাতভিত্তিক সংস্কারের স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠিই নয়, বরং এটি এখন নিজেই ‘সংস্কার’ শব্দের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বিচার বিভাগ হলো রাষ্ট্রের একমাত্র অঙ্গ, যা বহু দশক ধরে নিজের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই দাবির কেন্দ্রে রয়েছে নিজেদের সংস্কার কর্মসূচি নিজেরাই নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। গত আট মাসে এই প্রচেষ্টা অভূতপূর্ব গতি অর্জন করেছে। এখন লক্ষ্য হলো সেই উদ্দেশ্য পূরণ করা এবং তা যেন ভবিষ্যতেও টিকে থাকে, তা নিশ্চিত করা।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে, আমরা কখনো ক্ষমতার পূর্ণ পৃথক্‌করণের লক্ষ্যের এতটা কাছাকাছি আসিনি। যদি এই সুযোগ কোনোভাবে নষ্ট হয়, তবে তা বিচার বিভাগের মর্যাদা, অখণ্ডতা এবং প্রাসঙ্গিকতার জন্য চরম ক্ষতিকর হবে।’

বিচার বিভাগ সংস্কারকে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করার জন্য দেশের সব পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।

ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিতকরণে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি তিনি তাঁর নিজের ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিবরণও তুলে ধরেন। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারসংক্রান্ত রোডম্যাপের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ জুলাই ২০২৪-উত্তর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সংস্কার রোডম্যাপ প্রচেষ্টাকে টেকসই করার উপায় উদ্ভাবনের আহ্বান

প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় সংস্কার রোড শো তথা আঞ্চলিক সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে দেশের ডিস্ট্রিক্ট জুডিসিয়ারিগুলো নিজ নিজ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, যা বিচার সেবার মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। প্রধান বিচারপতি ঘোষিত সংস্কার রোডম্যাপ প্রচেষ্টাকে টেকসই করার উপায় উদ্ভাবনে দেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি। সভাপতিত্ব করেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক।

সেমিনারে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা অংশ নেন। এ ছাড়া রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌঁসুলি, পাবলিক প্রসিকিউটরসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা সেমিনারে অংশ নেন।

স্বাগত বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ন নয়ন আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলের পরিকল্পনা কয়েক দিন আগে আটকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইসরায়েল গত শুক্রবার ভোর রাতে হামলা করে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় খামেনির একজন উপদেষ্টাও নিহত হন।

মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানিরা কি এখন পর্যন্ত কোনো আমেরিকানকে হত্যা করেছে? না, যতক্ষণ না তারা এটা করছে, ততক্ষণ আমরা কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আক্রমণের কথা ভাবছিও না।’

এদিকে গতকাল রোববার ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখান তাকে খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে প্রশ্ন করেলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কখনো আলাপই হয়নি, এমন অনেক বিষয় নিয়েও খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আমি সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’

ফক্সের ‘স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বেয়ার’ অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা করার দরকার, তা করি।’ নেতানিয়াহু বলেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলার একটি ফল হতে পারে সরকার পরিবর্তন। তেহরানের সৃষ্ট ‘অস্তিত্বের হুমকি’ দূর করতে ইসরায়েল যা যা প্রয়োজন, তা-ই করবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে চলমান এই সংঘাত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এটি সহজেই শেষ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে ইরানকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, যদি ইরান কোনো আমেরিকান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রও এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ