কমছে না অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা
Published: 6th, April 2025 GMT
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। রাজধানী থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও হালুয়াঘাট স্থলবন্দরে যাতায়াতকারীদের একমাত্র ভরসা সড়কটি। প্রতিদিন হাজারো যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক আসা-যাওয়া করে এই পথে। ঈদ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের শৃঙ্খলা এক রকম ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনের শিথিলতায় দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এ সড়কের পরিস্থিতি। বিশেষ করে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য চরম আকার ধারণ করেছে। অদক্ষ চালকরা কয়েকটি জায়গা থেকে যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করছে। ফলে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। এবার ঈদুল ফিতরের সময় মহাসড়কটিতে ঘটা বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ছিল অটোরিকশার সঙ্গে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষ।
ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ থেকে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কটি পুরোপুরি অটোরিকশার দখলে চলে গেছে। সরেজমিন গতকাল রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্রিজ, ঢাকা বাইপাস, দীঘারকান্দাসহ কয়েকটি পয়েন্টে গিয়ে অটোরিকশার জট দেখা যায়। বাইপাস ও চরপাড়া মোড় থেকে ত্রিশাল অভিমুখে ছেড়ে যেতে দেখা যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রা নামে পরিচিত অটোরিকশার সারি।
ঢাকাগামী কয়েক বাসযাত্রী ও পথচারী জানান, পুলিশ এসব যানবাহন আটকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। আবার তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে চলে আসে। এরা বেশির ভাগই রেজিস্ট্রেশনবিহীন। এদের নেই কোনো ফিটনেস। এরা বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালায়। ফলে প্রতি মাসে এসব যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন অনেক মানুষ।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে বিভাগের অন্যান্য জেলায় যেতে হলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স পরিদর্শক ইফতেখারুল ইসলাম মুরাদের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে লাইসেন্সধারী অটোরিকশা চলে প্রায় ১২ হাজার। কিন্তু বাস্তবে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ অটোরিকশা চলে আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার।
সূত্র বলছে, এসব অটোরিকশা নগরীর ভেতর জায়গা না পেয়ে মহাসড়কে চলে যাচ্ছে। থ্রিহুইলারগুলো নগরীর চরপাড়া থেকে ঢাকা বাইপাস হয়ে ত্রিশাল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে। আর এ পথেই ঢাকাগামী বাস-ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশির ভাগ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। বাস্তবে সিটি করপোরেশন এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব ও বর্তমানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজিদ সমকালকে বলেন, লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। লাইসেন্স নিয়ে যদি অটোরিকশাগুলো মহাসড়কে চলে যায়, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দীঘারকান্দা এলাকায় কথা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক কামাল মিয়ার সঙ্গে। তাঁর গাড়িটি নিবন্ধিত কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, অটোরিকশা নিবন্ধন করা এত সহজ না। আমরা সবাইকে ম্যানেজ করে গাড়ি চালাই। বর্তমানে যাত্রীরা বাসের চেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক হান্নান বলেন, শহরের ভেতরে গাড়ি চালিয়ে শান্তি নেই। যানজটের কারণে চালানো যায় না। এ জন্য আমরা মহাসড়কে গাড়ি চালাই।
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পুলিশের সামনে দিয়েই চলাচল করছে অবৈধ অটোরিকশা। কিন্তু তাদের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বাসচালকদের অভিযোগ, সিএনজির দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়ে গেছে, এর যন্ত্রণায় সড়কে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। একে তো দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে, অন্যদিকে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
ময়মনসিংহ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলার প্রতিটি মিটিংয়ে অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানাই। এরা সিন্ডিকেট করে আমাদের যাত্রী নিয়ে যায়।
মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধ করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এম এম মোহাইমেনুর রশিদ। তিনি বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে পুলিশ একাই লড়ে যাচ্ছে। অথচ প্রশাসনে আরও অনেক বিভাগ আছে। বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশন চাইলে অনেক কিছু করতে পারে।
জেলা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম জানান, ঈদের মধ্যে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি ছিল। এ জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অভিযান জোরদার করা হবে। মহাসড়কের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু এখন কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে তাপদাহ নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে আজ রোববার থেকে টানা বৃষ্টির আভাস রয়েছে। শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকাসহ চারটি জেলা ও পাঁচটি বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কোথাও কোথাও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, রোববার বৃষ্টি হবে। পরদিন থেকে বৃষ্টিপাত বাড়বে। আগামী ২২ জুন পর্যন্ত সারাদেশে প্রতিদিন বৃষ্টি হবে। ফলে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। এ সময় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে কখনও কখনও হতে পারে বজ্রপাত। বজ্রপাতে অনেক প্রাণহানি হচ্ছে ইদানীং। সে জন্য বজ্রধ্বনি শুনলেই ঘরে যেতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল রংপুরের ডিমলায়। এ ছাড়া বান্দরবানে সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর শনিবার ময়মনসিংহসহ দেশের বেশ কয়েক এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রোববার রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জসহ রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।