ট্রাম্পের শুল্ক ও ভারতের সিদ্ধান্ত—দুটোই উদ্বেগজনক
Published: 9th, April 2025 GMT
আজ থেকে ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কব্যবস্থা কার্যকর হতে যাচ্ছে। একই দিনে ভারতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্যসম্ভার নিয়ে যাওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হয়েছে, যা একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই সিদ্ধান্ত, যা ভারতীয় বন্দর এবং বিমানবন্দরগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহনের ওপর প্রভাব ফেলবে, বাংলাদেশে রপ্তানি কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে ভুটান, নেপাল এবং মিয়ানমারের বাজারে। এই সুবিধা বাণিজ্য সহজতর করতে এবং খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য ‘লজিস্টিক্যাল’ চাপ বাড়াতে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারে এর প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই সিদ্ধান্ত তৈরি পোশাকের মতো বর্ধনশীল খাতের প্রতিযোগিতায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের একটি বৃহত্তর সমস্যাকে তুলে ধরছে। এমন একটি পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
বিশ্ববাণিজ্য ক্রমেই আরও জটিল এবং প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে সহযোগিতা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুটি দেশ দীর্ঘকাল ধরে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ভাগাভাগি করে আসছে। বাণিজ্যের সুষ্ঠু প্রবাহ রক্ষা করা উভয়ের জন্যই অপরিহার্য।
ভারত বাংলাদেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারগুলোর মধ্যে একটি। এই নীতিগত পরিবর্তন ভবিষ্যতে উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি যে ভারত তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং উভয় দেশের জন্য উপকার হয়, এমন একটি সমাধান বের করতে আলোচনায় বসবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাজারের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য সহযোগিতামূলক একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত উভয় দেশের সম্মিলিত উন্নতি এবং প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করা উচিত নয়।
সবশেষে ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কব্যবস্থা কার্যকর হওয়া এবং অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য বাণিজ্য লজিস্টিকসের ক্ষেত্রে যে সুবিধা, অধিকার এবং উপকারিতা কমে যাচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর উচিত বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা।
সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ব্লক বাঁধের ১২ স্থানে ধস, আতঙ্কে বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১২টি স্থানে নতুন করে ধস দেখা দিয়েছে। রামগতির ১০টি ও কমলনগরে ২টি স্থানে বাঁধের ব্লক ধসে পড়ে। এতে নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারের তোড়ে গত শুক্রবার থেকে বাঁধের ব্লক ধসে পড়তে শুরু করে। এতে অনেক স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কিছু স্থানে ব্লক ধসে পড়ায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। রামগতি উপজেলায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়খেরী, চরগাজী, মাছঘাট, মালিবাড়ী, উছখালী ও ওয়াপদা অফিসসংলগ্ন এলাকায়। এ ছাড়া কমলনগরের মাতাব্বরহাট ও লুধুয়া বাজার অংশে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি এবং দ্রুত বাঁধ মেরামতের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছি। সময়মতো কাজ শুরু না হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে।সৈয়দ আমজাদ হোসেন, ইউএনও, রামগতি উপজেলাস্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিম্নমানের ব্লক ব্যবহার করার কারণে জোয়ারের তোড়ে ব্লক ধসে পড়ার ঘটনা ঘটছে। এর আগে গত বছরও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। নতুন করে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করার দাবি বাসিন্দাদের।
বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ১৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে ব্লক দিয়ে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে বাঁধের ব্লক বৃষ্টি-জোয়ারে ধসে পড়ছে। কাজের মান খুবই খারাপ ছিল, তা না হলে এত তাড়াতাড়ি ব্লক ধসে যেত না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি টেকসই বাঁধ দরকার। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এলাকাবাসী চরম বিপদের মুখে পড়বে।’
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি এবং দ্রুত বাঁধ মেরামতের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছি। সময়মতো কাজ শুরু না হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে।’
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব স্থানে ধস দেখা দিয়েছে, সেগুলো আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করব।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মেঘনার তীব্র ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ২৪২ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা নদীতে হারিয়ে গেছে। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ।