সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাকা নিলামের মাধ্যমে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ৫৩ শতাংশ শেয়ার কিনলেও সফল হতে পারেনি। নিলামের শর্ত মেনে এ ব্যাংকে বিনিয়োগ করে বিদেশি গ্রুপটি। ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এরই মধ্যে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা মামলা করায় দেশীয় ব্যাংকটির শেয়ার কেনাবেচার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আদালত। ফলে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বুঝে পায়নি আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ। যে কারণে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হতে থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতে চলতি বছরে এসে পর্ষদ বিলুপ্ত করে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ আগ্রহ নিয়ে ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ করেছিল। তবে আইনগত কারণে তারা পুরো নিয়ন্ত্রণ বুঝে পায়নি। রাষ্ট্রীয় সহায়তায় আইনি সমাধান হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী হবে।

নথিপত্রে দেখা গেছে, দেশীয় এই ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। তখন এটি আল-বারাকা ব্যাংক নামে পরিচালিত হতো। ১৯৯৪ সালে এটি ‘সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকে’ পরিণত হয়। তখন ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ত্রুটিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগের প্রথা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০০৪ সালে এটি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক নামে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।

এরপর ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ায় ২০০৬ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে। ২০০৭ সালে ব্যাংকটির নতুন শেয়ার ইস্যু করে নিলামে তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ৫২ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার কিনে ব্যাংকটির অংশীদার হয় সুইজারল্যান্ডের আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ। তারা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে গ্রুপটির শেয়ার কেনাবেচার চুক্তি হয় এবং ২০০৮ সালের ৫ মে ব্যাংকটি ব্যবসা চালুর অনুমতি পায়। এ সময় ব্যাংকটির নামকরণ করা হয় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার ধারণ করায় দেশের শীর্ষ দুটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ৮৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ শেয়ার ধারণ করায় বাংলাদেশ ব্যাংক তা বাজেয়াপ্ত করে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১১ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মামলা করে। এর মধো তিনটি মামলার রায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে যায়। তবে অন্যান্য মামলায় স্থিতিবস্থা জারি করা হয় এবং সব পক্ষকে চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়। মামলার বাদীরা হলো মেহেদী হাসান, সালমান করিম, প্রুডেন্সিয়াল সিকিউরিটিজ, নিয়াজ আহমেদ, ওরিয়ন ইনফিউশন ও রেজাউল করিম। ফলে আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপও ব্যাংকটি নিয়ে আর এগোয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকও মামলা নিষ্পত্তিতে জোর দেয়নি। এতে ব্যাংকটি দিনে দিনে খারাপ হয়ে পড়ে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকটির প্রায় ৫৩ শতাংশ শেয়ার আইসিবি গ্রুপের, ৭ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের, ২৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ও ১৫ শতাংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকটিতে আমানত ছিল ১ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের শেষে প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ বা ৬৭২ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে ব্যাংকটি লোকসান করে চলেছে। ২০২৩ সালে লোকসান হয় ৫৬ কোটি টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল ব্যাংকটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২ টাকা ৯০ পয়সা।

গত বুধবার আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ–সংক্রান্ত চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সুশাসন নিশ্চিতে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের দুর্বলতার কারণে মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। শ্রেণিকৃত বিনিয়োগ ও পূঞ্জীভূত ক্ষতি বিপুল। ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা ও তারল্যসংকট তীব্র হয়েছে। আর্থিক সংকটের পাশাপাশি নীতিনির্ধারণে পর্ষদের দুর্বলতার কারণে ব্যাংকিং সুশাসন বিঘ্নিত হচ্ছে। পর্ষদ আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এসব কারণে আমানতকারীদের স্বার্থ ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীন বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষায় এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ করা হলো।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশিরা বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠান চালাতে এভাবে বাধাগ্রস্ত হলে অন্য বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ হারাবে। তাই এসব মামলা দ্রুত সুরাহা করে বিদেশিদের কাছে ব্যবসা সহজ করার বার্তা দিতে হবে। তাহলেই বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ বিনিয়োগ করেও কেন সফল হয়নি, তা দেশের ব্যর্থতা। কেন এত দিনেও মামলার সমাধান হলো না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নিশ্চয়ই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। দেশে কেন বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না, এটা তার একটা বড় উদাহরণ। সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আনার আগে সমস্যার সমাধান করা উচিত। ব্যাংক খাত নিয়ে সরকারকে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওর য় ন ট ল ব য ইসল ম ক ব য ব ন য় গ কর পর চ ল ব যবস আইস ব

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে বাসদ কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, আটক ২২

ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সিলেট কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ২২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে নগরের আম্বরখানাস্থ বাসদ কার্যালয় থেকে তাদের আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। 

বাসদ নেতারা অভিযোগ করেছেন, সকালে নিয়মিত পাঠচক্র চলাকালে হঠাৎ পুলিশ কার্যালয় ঘেরাও করে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যায়। 

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা দিল শিবির

বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে এগিয়ে নিতে সিকৃবি উপাচার্যের অঙ্গীকার

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আজ (শনিবার) ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা নগরে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছিল। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অভিযোগের সত্যতা মিললে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। গ্রেপ্তারদের নাম পরবর্তীতে জানানো হবে।’’ 

বাসদের সিলেট জেলা সভাপতি আবু জাফর বলেন, ‘‘ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ (শনিবার) চৌহাট্টা থেকে আমাদের পূর্বঘোষিত ‘ভুখা মিছিল’ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে পুলিশ নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর আমরা কর্মসূচি স্থগিত করি। তবে সব শ্রমিককে তা জানানো সম্ভব হয়নি। সকালে শহীদ মিনার এলাকায় কয়েকজন শ্রমিক জড়ো হন। কিন্তু কার্যালয়ে শুধু পাঠচক্র চলছিল। সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২২ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে।’’

এর আগে একই ইস্যুতে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) মধ্যরাতে নগরের আখালিয়া কালীবাড়ী এলাকার বাসা থেকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমনকেও আটক করে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা। ওই সময় আনোয়ার হোসেন সুমনসহ কয়েকজন বামঘরানার রাজনীতিকও আন্দোলনে অংশ নেন। আন্দোলনকারীরা ব্যাটারি রিকশা চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরে তা মেনে নিতে রবিবার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। সেই আলটিমেটাম শেষ হওয়ার একদিন আগে সিপিবির সুমন ও বাসদের ২২ নেতাকর্মীকে আটক করা হলো।

শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, ‘‘ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে সংঘাতের আশঙ্কায় রবিবারের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’ 

গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সিলেট মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীর উদ্যোগে পরিচালিত এই অভিযানে শতাধিক রিকশা জব্দ ও একাধিক চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর থেকে নগরে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে। 
 

ঢাকা/নুর/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে খুন, এরপর...
  • ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
  • শাহরুখকে ‘কুৎসিত’ বলেছিলেন হেমা মালিনী, এরপর...
  • প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
  • জেমিনিতে যুক্ত হলো গুগল স্লাইডস তৈরির সুবিধা, করবেন যেভাবে
  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
  • নাজমুলই থাকছেন টেস্ট অধিনায়ক
  • বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
  • সিলেটে বাসদ কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, আটক ২২