দশম গ্রেডে ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরিতে শতভাগ ও নবম গ্রেডের চাকরিতে ৩৩ শতাংশ ডিপ্লোমা কোটা বাতিলে দাবি করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে রুয়েট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পাদদেশে এ দাবিতে তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এ সমাবেশে সব ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। আয়োজকরা এটাকে ‘অধিকার আদায়ের আন্দোলন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জানা গেছে, মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কর্মবিভাগে সরাসরি জনবল নিয়োগের কথা সংবিধানে বলা থাকলেও দশম গ্রেডে ইঞ্জিনিয়ারিং চাকুরিতে শতভাগ ডিপ্লোমা কোটা ও নবম গ্রেডের চাকুরীতে ৩৩ শতাংশ ডিপ্লোমা কোটা রাখা হয়েছে। যা সাংবিধানিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন রুয়েট শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীরা জানান, সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ প্রদান ও কর্মবিভাগে সরাসরি জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরির দশম গ্রেডে শতভাগ ও নবম গ্রেডে পদোন্নতিতে ৩৩ শতাংশ ডিপ্লোমা কোটা প্রদান করা হয়। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের এই বৈষম্যমূলক আচরণ ও অন্যায্য সুবিধা ভোগের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রুয়েট শিক্ষার্থীরা এ সমাবেশ আয়োজন করেন।

সমাবেশে শিক্ষার্থী চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, সংবিধানের আর্টিকেল ২৯-এ ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী হতে হবে; কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামেও সমমান পদ তৈরি করে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।

অন্য দুইটি দাবি হলো- টেকনিক্যাল দশম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে অর্থাৎ ডিপ্লোমা ও বিএসসি উভয় ডিগ্রিধারীকে পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে; ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না, এই মর্মে আইন পাশ করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।

সমাবেশে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘ ৪ বছর কঠিন পাঠ্যক্রম, ল্যাব, থিসিস ও প্রজেক্টের মধ্য দিয়ে পাস করা বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা চাকরির বাজারে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারি নিয়োগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাধান্য ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চতর পদে প্রবেশে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা পেশাগত মর্যাদা ও ন্যায্যতা লঙ্ঘন করে।

রুয়েট ইসিই বিভাগের শিক্ষার্থী মায়িন উদ্দিন বলেন, “চাকরি ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা টেকনিশিয়ানদের কাছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদেরকে প্রতিনিয়ত হেনস্থার শিকার হতে হয়। আমরা আজ যে দশম গ্রেডের কথা বলছি, তার পুরোটাই ডিপ্লোমাদের দ্বারা কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। যেখানে যোগ্যতা প্রমাণের কোনো সুযোগই রাখা হয়নি, যা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থারই নামান্তর।”

পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাদি বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠানে দশম গ্রেডে পদ সংখ্যা নবম গ্রেড থেকে অনেক বেশি হয়। দশম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগের কোনো সুযোগই রাখা হয়নি। অবাক করার বিষয় হলো, যারা কিনা বলতে গেলে ইন্টার সমমান যোগ্যতা রাখে, সেই ডিপ্লোমা টেকনিশিয়ানরা নবম গ্রেডের কোটায় পদন্নতির মাধ্যমে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদেরও বস পর্যন্ত বনে যাচ্ছে। কোনো রকম প্রতিযোগিতা ছাড়াই এ চরম বৈষম্য বাংলাদেশ বলেই সম্ভব হচ্ছে।”

ঢাকা/মাহাফুজ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দশম গ র ড নবম গ র ড সমম ন ব এসস

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনবল নিয়োগ দিচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, পদ ৪৩০
  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই