আজ মধ্য রাত থেকে দেশের বঙ্গোপসাগরে নতুন সময়সীমা অনুযায়ী শুরু হচ্ছে ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে এই সময়ে। দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে একযোগে এই অবরোধে খুশি জেলেরা। এসময় তালিকাভুক্ত জেলেরা পাবেন সরকারি সহায়তা। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলছে জেলেরা এবং শেষ মুহূর্তে সমুদ্রে মাছ না থাকায় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।  

সামুদ্রিক ৪৭৫ প্রজাতির মাছের অবাদ প্রজনন আর জাটকা সংরক্ষণে বাংলাদেশের জলসীমায় এতদিন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা ছিল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত অন্যদিকে ভারতীয় জেলেদের জন্য দেশটি এই নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বলবৎ রাখত। ফলে যখন বাংলাদেশে জেলেরা অবরোধে অলস সময় কাটাত তখন বাংলাদেশের জলসীমায় দাপিয়ে বেড়াত ভারতীয় জেলেরা। ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে সমন্বয় করে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা সময়সীমা নির্ধারণে দাবি করে আসছিল বাংলাদেশের জেলেরা। দীর্ঘদিন পর পূরণ হয়েছে সেই দাবি, নিষেধাজ্ঞা সময় নিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি বছর থেকে বাংলাদেশ ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ধার্য করেছে। এতে করে যেমন একপেশে সুবিধা পাবে না ভারতীয় জেলেরা, তেমনি প্রতিবেশী দেশ থেকে দুই দিন কম অবরোধ থাকবে বাংলাদেশে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে খুশি উপকূলের জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা।

পটুয়াখালীর জেলার সব চেয়ে বড় দু'টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুরের জেলেরা সকল প্রস্তুতি সেরে এখন ঘাটে পৌঁছেছে উপকূলের কয়েক হাজার জেলে।

জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরের জেলে মো.

রাব্বানী জানান, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল অবরোধ কালীন সময়ে ভারতীয়দের মাছ ধরা বন্ধ রাখা। এবছর এই সরকার সে দাবি পূরণ করেছে, আমরা তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। শুধু তাই নয় তাদের দুই দিন আগে আমাদের অবরোধ শেষ হয়ে যাবে। এটা আমাদের জেলেদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।

আলিপুর বাজারের ইউসুব কোম্পানি নামের এক মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসনে উপকূলীয় এলাকার জেলেরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এবার সেই কষ্টের অবসান ঘটল, আজকের পর থেকে আমরা সমুদ্রে নামবো না। আমাদের জেলেরা অন্য পেশায় ঝুঁকবে বেঁচে থাকার জন্য। তবে সরকারের কাছে অনুরোধ করব যাতে চুরি করে দেশের কিংবা ভারতের কেউ মাছ ধরতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখা।

সমুদ্রে মাছের সংকট দেখা দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞার পূর্বে খালি হাতে ফিরছে অনেক জেলে। তবে এই সময়ে পটুয়াখালীর উপকূলীয় নিষেধাজ্ঞা ঘোষিত এলাকায় জেলেদের দেওয়া হবে প্রণোদনা। ৬৫ দিনে দুইবারে ৮৬ কেজি করে চাল দেয়া হবে তাদের। সরকারের এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলছেন জেলেরা।

কুয়াকাটা এলাকার হোসেন পাড়ার জেলে আবুল কালাম আজাদ জানান, মূলত আমরা জেলেরা জেলে পেশা ছাড়া অন্য কোন কাজ পারি না। আমাদের একটি পরিবারের পাঁচ থেকে ছয় জন সদস্য। আর মাত্র ৮৬ কেজি চাল আমাদের জন্য খুবই অল্প। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করব আমাদের প্রণোদনা যেন আরেকটু বৃদ্ধি করা হয়।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল হকের মতে, সরকারের এই নতুন সময়সীমা অবশ্যই যৌক্তিক, কারণ ভারতীয় জেলেরা যে সুযোগটা নিত সেটা আর সম্ভব না। আর এখন বাংলাদেশের জেলেরা ভারতীয় জেলেদের আগে সমুদ্রে মাছ ধরার সুযোগ পাবে। এতে দেশের অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হবে অন্যদিকে জেলে পেশা হুমকি থেকে বেরিয়ে আসবে।

জেলেদের দাবি রক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে অবরোধ সফল করতে প্রশাসনকে সহযোগীতার কথা জানান মহিপুর মৎস্য আড়ৎদার মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা। 

কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন ও জন সচেতনতায় পুরো উপকূলীয় এলাকা ও পটুয়াখালীর বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুরে চলছে প্রচারণা। সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের জেল জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আনার কথা জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এই অবরোধ কালীন সময়ে সরকারের দেয়া প্রণোদনা নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে পৌঁছে দেয়া হবে।

কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৪ জন তবে মোট জেলে ৩০ হাজারের বেশী। তবে অনিবন্ধিত জেলেদের দাবি সরকার যেন দ্রুত অনিবন্ধিত জেলেদেরকেও নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন বন ধ ত জ ল সরক র র র জন য আম দ র মৎস য উপক ল অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের একটি ধারা প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধারাটিতে অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা উল্লেখ রয়েছে। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।

২০১৭ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনের ১৮ ধারায় অপরাধ আমলে নেওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে। ধারাটি বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ করা না হলে আদালত ওই অপরাধ আমলে গ্রহণ করবে না।

ওই ধারার বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান গত মাসের শেষ দিকে রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী।

রুলে অপরাধের অভিযোগ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা আরোপ–সংক্রান্ত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৮ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রুলের বিষয়টি জানিয়ে আবেদনকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এসেছে। আইনের ১৮ ধারায় সময়সীমা উল্লেখ করে দুই বছরের মধ্যে মামলা না করতে পারলে কোনো আদালত অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারবে না বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিচার করতে পারবে না। যে মেয়েটির ১১–১২ বছরে বিয়ে হয় তারপক্ষে দুই বছরের মধ্যে মামলা করা সব সময় সম্ভব না–ও হতে পারে। তখন সে নিজেই শিশু। দুই বছর পর আদালত বিচার করতে পারবে না এবং সময়সীমা আইনে বেঁধে দেওয়া সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী—এমন সব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল
  • ট্রাম্প কি রাজার শাসন চালাচ্ছেন