Prothomalo:
2025-08-01@17:49:33 GMT

তিতাসপাড়ে অদ্বৈত মল্লবর্মণ 

Published: 16th, April 2025 GMT

কিছু বই উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলাম। এর মধ্যে কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে লেখা আবদুল মান্নান সৈয়দের শুদ্ধতম কবি। আরেকটি নিউজপ্রিন্টের কাগজে ছাপানো অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম। সেই কিশোরবেলায় পড়ে ফেলি বই দুটি। সেই থেকে বাসন্তী–অনন্তদের কথা মনে গেঁথে আছে।

চাচার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে। দেশ স্বাধীনের পর একবার সেখানে বেড়াতে গিয়ে স্বাধীনতা দিবসে তিতাস নদে নৌকাবাইচ দেখি। থাকি কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায়। খেলাঘর করি। একদিন সিনেমা ম্যাগাজিন চিত্রালীতে খবর বেরোল, পরিচালক ঋত্বিক ঘটক তিতাস একটি নদীর নাম নিয়ে চলচ্চিত্র বানাবেন। সেই কাজে কুমিল্লায় আসবেন। থাকবেন তাঁর যমজ বোন প্রতীতি দেবীর বাসায়। কিছুদিন পর কান্দিরপাড় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, খেলাঘরের আনিস ভাই আমাকে বললেন, ‘ওই যে লম্বা লোকটা, সিনেমা বানায়, ঋত্বিক কুমার ঘটক।’

আমি অবাক হয়ে দেখি দীর্ঘদেহী লোকটা বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন, সঙ্গে আরও কিছু লোক, তাঁরা প্রায় দৌড়াচ্ছেন। শুটিং শুরু হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাসপাড়ে। কুমিল্লার নাটকের লোকেরা কেউ কেউ অভিনয় করছেন। ট্রেনে করে দলে দলে লোকজন যাচ্ছে শুটিং দেখতে। সাত-আট মাস পর শহরের এক দেয়ালে দেখি তিতাস একটি নদীর নাম-এর পোস্টার। সাদামাটা দুই রঙের পোস্টার। সেটা ১৯৭৩ সাল। সিনেমাটা লিবার্টি হলে চলছে। বহু কষ্টে দেড় টাকা সংগ্রহ করি। টিকিট কেটে হলে ঢুকি। হল প্রায় ফাঁকা। দশ-বারোজন লোক বসে আছেন।

অনেক দিন তিতাস একটি নদীর নাম–এর লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণ ও পরিচালক ঋত্বিক ঘটক গেঁথে থাকে মাথায়। পরে নব্বই সালে খবর পাই, আমার খালু শাহ আফতাব উদ্দীন আহমেদ ও অদ্বৈত মল্লবর্মণ সহপাঠী। অদ্বৈত মল্লবর্মণকে নিয়ে খালুর সঙ্গে কথা হয় তাঁর মেয়ে বুলবুল আপার রাজধানীর বাসাবোর আহমেদ বাগের বাসায়।

অনেক পরের কথা। বছর ১৫ আগে প্রথম আলোর ‘ঢাকায় থাকি’ বিভাগের তায়েব মিল্লাত ও আমি যাই অদ্বৈত মল্লবর্মণের ছোটবেলার বন্ধু শাহ আফতাব উদ্দীনের ছেলে শাহ মুতাসিম বিল্লাহর কাঁঠালবাগানের বাসায়। মিল্লাত, আমি ও বিল্লাহ—তিনজনে অদ্বৈত মল্লবর্মণকে নিয়ে শাহ আফতাব উদ্দীনকে নানা প্রশ্ন করি। তিনি স্মৃতি হাতড়ে উত্তর দেন। আমরা তাঁর কথা রেকর্ড করি।

অদ্বৈত মল্লবর্মণ ১৯৩৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন প্রথম বিভাগে। খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। খুবই দরিদ্র মালো পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। স্কুলে বেতন দিতে পারতেন না। প্রায়ই না খেয়ে স্কুলে যেতেন। তাঁর বাড়ি ছিল গোকর্ণ ঘাটের জেলেপাড়ায়। সেখান থেকে স্কুলে আসার পথে গামছা পরে আসতেন। রাস্তা ভাঙাচোরা, কোমরসমান পানি। বর্ষাকালে পানি আরও বেড়ে গলাসমান হতো। ধুতি, বই মাথার ওপর ধরে পানি ভেঙে আসতে হতো।

অদ্বৈত মল্লবর্মণ ও শাহ আফতাব উদ্দীন দুজনেই গল্প-কবিতা লিখতেন। কয়েকবার অদ্বৈত মল্লবর্মণের বাড়ি গোকর্ণ ঘাটের মালোপাড়ায় গিয়েছেন শাহ আফতাব উদ্দীন। সবুজপত্র নামে একটি দেয়ালপত্রিকা বের করতেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ ও শাহ আফতাব উদ্দীন। সাত–আটটি সংখ্যা বের করেছিলেন তাঁরা। তা ছাড়া অদ্বৈত মল্লবর্মণ কুমিল্লা ও আগরতলার লিটলম্যাগে গল্প লিখতেন।

ম্যাট্রিক পাসের পর অদ্বৈত মল্লবর্মণ ও শাহ আফতাব উদ্দীন দুজনই ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। অদ্বৈত মল্লবর্মণ কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ার পালবাড়িতে লজিং থেকেছেন কিছুদিন। আর্থিক সংকটে লেখাপড়া চালাতে পারছিলেন না। হঠাৎ ওই বছরই তিনি কলকাতায় চলে যান। 

শাহ আফতাব উদ্দীন জানান, কলকাতায় লেখালেখি করছেন, অসুবিধায় আছেন—সেসব খবর পেয়েছেন। অদ্বৈতের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন অনেক পরে।

এই চিত্রকরের জলরঙে আঁকা অদ্বৈত মল্লবর্মণের একটি ছবি এই লেখার সঙ্গে ছাপা হচ্ছে। মূল ছবিটি কুমিল্লায় কলেজে পড়ার সময় তোলা।

আরেকটি স্কেচ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহ আফতাব উদ্দীন বলেছিলেন, ‘স্কেচটা মনে হয় তাঁর ত্রিশ-বত্রিশ বছর বয়সের। এটা অদ্বৈতরই স্কেচ। ছত্রিশ বছর বয়সে তো অদ্বৈত মারাই গেল।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ত স একট নদ র ন ম

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ