সিলেটে আট মাসের ব্যবধানে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা আকাশ–পাতাল বদলে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা যেখানে অনেকটা একতরফাভাবে ‘রাজনৈতিক মাঠ’ দখলে রেখেছেন, তাঁরা এখন লাপাত্তা। অন্যদিকে হামলা, মামলা ও নিপীড়নে ঠিকমতো কর্মসূচি পালন করতে না পারা বিএনপি–জামায়াতের নেতারা এখন ঘটা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা নির্বাচনী প্রচারণার চেয়ে কমিটি গঠন ও দল গোছাতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর বাইরে ইসলামি দলগুলোর পাশাপাশি কিছু বাম দল জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় আছে। তবে জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের মিত্র দলগুলো অনেকটাই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে।

তৎপর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

বিএনপির নেতা–কর্মীরা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে দলের নেতা–কর্মীদের অনেকে হামলা ও মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াতেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অবস্থা বদলেছে। এখন দলটির নেতা–কর্মীরা মাঠপর্যায়ে চাঙা আছেন। জেলা পর্যায়ে দলীয় কার্যালয় না থাকলেও শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতার বাসায়ই তাঁদের কর্মী–সমর্থকেরা প্রতিদিন ভিড় করছেন। অথচ ৫ আগস্টের আগে এমন দৃশ্য খুব একটা ছিল না।

বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি আছে। এসব কমিটির নেতা–কর্মীরা সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিজেদের সমর্থিত সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের পক্ষে তাঁরা এলাকায় সরব আছেন। পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটিয়ে তাঁরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রার্থীরা রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নানা আয়োজনে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলার ছয়টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির বেশ কিছু নেতার নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেট–১ (নগর ও সদর) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী আছেন। সিলেট–২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনার নাম আলোচনায় আছে।

সিলেট–৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল তৎপর আছেন।

সিলেট–৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরী ও হেলাল উদ্দিন এবং মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের নাম শোনা যাচ্ছে।

সিলেট–৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও কানাইঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিনের নাম শোনা যায়। এ ছাড়া সিলেট–৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ও জেলা বিএনপির সদস্য ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের নাম আলোচনায় আছে।

আরও পড়ুনগাইবান্ধায় নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত বিএনপি–জামায়াত, সদস্য সংগ্রহে এনসিপি১৮ এপ্রিল ২০২৫

এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন বড় আঙ্গিকে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বড় পরিসরে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন, পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে ইফতার মাহফিল আয়োজনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি দলকে নির্বাচনমুখীও করা হচ্ছে। দল সর্বাধিক যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করবে। যাঁরা মনোনয়ন পাবেন, তাঁদের পক্ষেই সবাই এককাট্টা থাকবেন।

উজ্জীবিত জামায়াত

গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের নেতা–কর্মীরা তৃণমূলে ব্যাপকভাবে সভা–সমাবেশ করছেন। খেলাধুলা, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা আয়োজনে যোগ দিয়েও তাঁরা কুশল বিনিময় করছেন। এ ছাড়া জেলার ছয়টি আসনে সম্ভাব্য ছয় প্রার্থী তৎপরও আছেন।

সিলেট–১ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট–২ আসনে জেলার নায়েবে আমির আবদুল হান্নান, সিলেট–৩ আসনে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ, সিলেট–৪ আসনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও জৈন্তাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট–৫ আসনে জেলার নায়েবে আমির আনোয়ার হোসেন খান ও সিলেট–৬ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা থেকে এমনটাই জানা গেছে।

আরও পড়ুনপঞ্চগড়ে বিএনপি–জামায়াতসহ সবার তৎপরতা নির্বাচনমুখী১২ এপ্রিল ২০২৫

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, আগে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থিত জামায়াতের কার্যালয় নিয়মিত খোলা যেত না। এ ছাড়া উপজেলা জামায়াতের কার্যালয়গুলো তখন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এখন জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলো নিয়মিত খোলা হয়। নেতা–কর্মীরা কার্যালয়ে বসে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ গুছিয়ে এলাকার ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এ ছাড়া কর্মী–সমর্থকেরাও সাংগঠনিক কাজ নিয়ে সক্রিয় আছেন। সবাই এখন উজ্জীবিত।

এনসিপির তোড়জোড় কমিটি গঠনে

সিলেট জেলা ও ১৩টি উপজেলায় এনসিপির কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। তবে গত ২২ মার্চ সিলেটে প্রচুর লোকসমাগম ঘটিয়ে দলটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে নিজেদের জানান দিয়েছে। এর বাইরে এখন দলটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু করেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ঢাকায় এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়। এতে সারা দেশে কমিটি গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জেলা ও উপজেলাকেন্দ্রিক কার্যালয় স্থাপনের চিন্তাভাবনা চলছে দলটির। সে অনুযায়ী সিলেট জেলা ও ১৩টি উপজেলায় দলের সংগঠকেরা কাজ শুরু করেছেন।

আরও পড়ুনখুলনায় কেন মুখোমুখি গণ অধিকার ও বৈষম্যবিরোধীরা২৭ মার্চ ২০২৫

এনসিপির সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলেন, কমিটি গঠনের ব্যাপারে এক ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা আহ্বায়কদের বয়স ৪০ বছরের ওপরে থাকতে হবে। সর্বনিম্ন ৩১ থেকে সর্বোচ্চ ৫১ জন নিয়ে জেলার আহ্বায়ক কমিটি এবং সর্বনিম্ন ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৪১ জন নিয়ে উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে। আগামী ৬ মের ভেতরে কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সারা দেশের জেলাগুলোকে এনসিপি ১৯টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা আছে। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, অনিক রায় ও এহতেশাম হক; যুগ্ম সদস্যসচিব প্রতীম দাশ ও সদস্য নুরুল হুদা জুনেদের নেতৃত্বে সিলেট বিভাগে দলটি সংগঠিত হচ্ছে।

এর মধ্যে নুরুল হুদা জুনেদ সিলেট–৩ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা নিশ্চিত করেছেন। নুরুলের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারে। এ ছাড়া অর্পিতা শ্যামা দেব ও এহতেশাম হকের মধ্যে যেকোনো একজন সিলেট–১ আসনে দলের প্রার্থী হতে পারেন বলে প্রচারণা আছে।

এ বিষয়ে নুরুল হুদা জুনেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাংগঠনিকভাবে সিলেটে এনসিপির সরব ও শক্ত অবস্থান আছে। তবে তাঁরা নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারণার চেয়ে সাংগঠনিক প্রচারণার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। এখন জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠনের জন্য কাজ চলছে। নির্বাচন নিয়ে আপাতত তাঁরা ভাবছেন না।

কেউ সরব, কেউ নীরব

আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের শীর্ষস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে না। মুঠোফোনও বন্ধ। অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সাম্যবাদী দল, ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণতন্ত্রী পার্টির কোনো কর্মসূচি সেই অর্থে দৃশ্যমান নয়।

তবে আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় নানা ইস্যুতে সিলেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) তৎপরতা চোখে পড়ছে। এর বাইরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদের (মার্ক্সবাদী) তৎপরতা আছে।

যোগাযোগ করলে বাসদ সিলেটের আহ্বায়ক আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যেমন সক্রিয় ছিলাম, তেমনই এখনো আমরা সক্রিয় আছি। জাতীয় ও স্থানীয় নানা ইস্যুতে আমরা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উপদ ষ ট ব এনপ র স র জন ত ক ও উপজ ল এনস প র উপজ ল র কর ম র পর য য় অবস থ আবদ ল দলট র করছ ন সদস য গঠন ক সমর থ

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁর ছয় আসনে ঈদের ছুটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গণসংযোগ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নওগাঁয় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ঈদুল আজহার ছুটিকে তাঁরা গণসংযোগের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন।

ঈদ উদ্‌যাপন করতে কর্মজীবী মানুষ নিজ নিজ এলাকায় ফিরেছিলেন। সেই সময়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের তৎপরতাই বেশি ছিল।

নওগাঁর ১১টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ছয়টি সংসদীয় আসনে এখনো বিএনপি দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তবে জামায়াতে ইসলামী আগেভাগেই প্রতিটি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ঈদের শুভেচ্ছা জানান ও নিজেদের বিষয়ে জানান দেন।

নওগাঁ–১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছালেক চৌধুরী, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদের আগে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, সেমাই ও চিনি বিতরণ করেছেন। ঈদের ছুটিতে পুনর্মিলনী ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুল হকও বিভিন্ন মসজিদে দোয়ার অনুরোধ জানানো ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গণসংযোগ করেছেন।

বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা আসছে, সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, দলের ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচার ও লিফলেট বিতরণ, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাওয়াদাওয়া, নারী ও তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

নওগাঁ–২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনজন—কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী ও ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান চপল চৌধুরী।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদের ছুটিতে এলাকায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, পুনর্মিলনী, ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী এনামুল হকও সক্রিয় ছিলেন।

খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমার এলাকার মানুষের সুখে–দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছি। ঈদের ছুটির সময়টাতে চেষ্টা করেছি আমার নির্বাচনী এলাকার সব গ্রামে সব মানুষের কাছে পৌঁছাতে। মানুষের ভোটের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছি। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন চাইব।’

নওগাঁ–৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী। জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমানও তৎপর ছিলেন।

বিএনপি নেতা ফজলে হুদা বাবুল বলেন, ‘শুধু এবার নয়, প্রতি ঈদেই চেষ্টা করি এলাকার গরিব–অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ঈদের আগে দুই উপজেলায় ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি বিতরণ করেছি। ঈদের ছুটিতে নারী ও তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। মানুষ ভোট দিতে অপেক্ষা করছেন। ভোট মানে, তাঁদের কাছে একটা উৎসব। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে মানুষ সেই উৎসব থেকে বঞ্চিত।’

নওগাঁ–৪ (মান্দা)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল মতিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোকলেছুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল বারী ও আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম। জামায়াতের প্রার্থী জেলা আমির খন্দকার মুহাম্মদ আব্দুর রাকিব।

আব্দুল মতিন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ নির্বাচন দেওয়া। কিন্তু তারা নির্বাচন রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত। কেউ দেশের মানচিত্র পরিবর্তন করতে চায়, কেউ সংস্কারের নামে নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। যে কারণে জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু আমরা যাঁরা রাজনীতি করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাঁরা সব পরিস্থিতিতে জনগণের সঙ্গেই আছি।’

নওগাঁ–৫ (সদর উপজেলা)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির সহসমবায়–বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম, আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আ স ম সায়েম।

নওগাঁ–৬ (রাণীনগর ও আত্রাই)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ রোজাউল ইসলাম, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইছাহাক আলী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আলমগীর কবিরও এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে তৎপর আছেন।জামায়াতের প্রার্থী আত্রাই উপজেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ খবিরুল ইসলাম।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এরপর মানুষের কল্যাণে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া দল বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে প্রায় পাঁচ দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮ সালে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। এরপর দলের সব আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে থেকে কাজ করেছি। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দলের জন্য কাজ করেছি। দলের একজন দীর্ঘদিনের কর্মী হিসেবে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।’

বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নওগাঁর ছয় আসনে ঈদের ছুটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গণসংযোগ