নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকায় গণসমাবেশ ও গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আগামী শনিবার বেলা তিনটায় রাজধানীতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে এই কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

রাজধানীর পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার দলের নিয়মিত বৈঠকে কর্মসূচির এই সিদ্ধান্ত হয়। পরে দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ তথ্য জানানো হয়।

বৈঠকে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ অভিযোগ করেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবে যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, তা কল্পনাও করা যায় না। তারা পারিবারিক আইন থেকে ধর্মকে বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। এই কমিশন নারীদের কল্যাণের জন্য প্রস্তাব তৈরি করার জন্য গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু তারা নারীদের জন্য অসম্মান ও অভিশপ্ত জীবনের প্রস্তাব করেছে।

মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, কোনো নারীই স্বেচ্ছায় কেবলই টাকার জন্য যৌনকর্মে জড়ায় না; বরং পাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়ে তারা এ ক্ষেত্রে আটকে থাকতে বাধ্য হয়। তাদের এই অভিশপ্ত জীবন থেকে বের করে আনার প্রচেষ্টা থাকার কথা, অথচ সংস্কার কমিশন তাদের এই বাধ্যতামূলক কাজকে ‘পেশা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে।

আরও পড়ুন৩০০ আসন সংরক্ষিত রেখে সরাসরি ভোটের সুপারিশ৩১ মার্চ ২০২৫

অবিলম্বে এই কমিশনের প্রস্তাবকে সরকারিভাবে প্রত্যাখ্যান করে কমিশনকে বাতিল করার আহ্বান জানায় দলটি। বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ইসলামবিরুদ্ধ প্রস্তাব দিলেও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একে সাধুবাদ জানানো হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। এটা জাতিকে হতাশ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী শনিবার বেলা তিনটায় নারীবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাব বাতিল ও ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকে গণসমাবেশ ও গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের নেতা গাজী আতাউর রহমান, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম প্রমুখ।

আরও পড়ুননারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ ১৯ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব র জন য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের গণহত্যাসহ উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার জুরাইন রেলগেট–সংলগ্ন বিক্রমপুর প্লাজা চত্বরে এক গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির এ কথা বলেন।

পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান এবং অপরাধী ও খুনিদের দৃশ্যমান বিচারের দাবিতে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কদমতলী-শ্যামপুর থানা।

সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির রেজাউল করীম বলেন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘নতুনভাবে আবার এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে আপনি কী মেসেজ দিতে চান? আবার সেই স্বৈরাচার আসবে? আবার সেই চাঁদাবাজ আসবে? আবার সেই মায়ের কোলগুলো খালি হবে? দেশের টাকা বিদেশে পাচার হবে? আয়নাঘর তৈরি হবে? পিলখানা হত্যা হবে?’ তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের মানুষ আমরা আর দেখতে চাই না। পরিবর্তন করতে হবে, সংস্কার করতে হবে।’

বিভিন্ন মৌলিক সংস্কারে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার (দ্বিমত পোষণ করার) বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, সরকার গঠনের পরে দুই বছরের ভেতরে সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে। অন্ধকে হাইকোর্ট দেখিয়ে লাভ নেই। হাইকোর্ট এখন সবাই চেনে।

একটি রাজনৈতিক দল জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা এখনো বুঝতে পারেনি উল্লেখ করে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দলটির কলঙ্ক রচিত হয়েছে। সামনে নির্বাচনেও বাংলাদেশের মানুষ একই কলঙ্ক রচনা করবে। বাংলাদেশের ভেতরে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করে দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছে না।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সবাই বলেছে, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। একটি বড় দল বলেছে সংবিধানের সংশোধন, আইনি ভিত্তি দেওয়ার এই কাজগুলো এখন হবে না। নির্বাচনের পরে যে সংসদ আসবে, তারাই এসে নাকি সেই কাজগুলো করবে। তাহলে কেন জুলাই সনদের জন্য দুই মাস সময় নষ্ট করা হলো? এর পেছনে নিশ্চয়ই অসৎ উদ্দেশ্য আছে।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দুটিতেই পিআর মানতে হবে, তা না হলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দেশবাসীকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী। সঞ্চালনা করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কে এম শরীয়াতুল্লাহ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা আবদুর রাজ্জাক। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে