ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত ২১২ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে  বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।

গাজাভিত্তিক সরকার পরিচালিত গণমাধ্যম অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাংবাদিকদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ জনে। সর্বশেষ নিহত সাংবাদিক হলেন সাঈদ আবু হাসানেইন, যিনি দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে ইসরায়েলি এক বিমান হামলায় আহত হয়ে মারা যান।

বিবৃতিতে বলা হয়, আবু হাসানেইন স্থানীয় আল-আকসা রেডিওতে সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  

ইসরায়েলের সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলার তীব্র নিন্দা জানায় গণমাধ্যম অফিসটি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন, আরব সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বিশ্বজুড়ে সব সংবাদ সংস্থাকে ইসরায়েলি অপরাধের নিন্দা জানাতে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।  

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও ১৮ মার্চ ইসরায়েল গাজায় পুনরায় হামলা শুরু করে।

অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ৫১ হাজার ৪০০-এর বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।  

গত নভেম্বরেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এছাড়া, গাজায় পরিচালিত যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলাও চলছে।

এদিকে শুক্রবার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান হামলায় অন্তত ৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬৮ জন।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৪৩৯ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬৮ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, ফলে আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪১৬ জনে।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী