অরিন্দমের বিরুদ্ধে স্ত্রীর গুরুতর অভিযোগ
Published: 29th, April 2025 GMT
ভারতীয় বাংলা সিনেমার প্রশংসিত অভিনেতা-নির্মাতা অরিন্দম শীল। তার বিরুদ্ধে একাধিক নারী যৌন হেনস্তা, অশালীন আচরণের অভিযোগ করেছেন। মামলাও দায়ের করেছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে টানা আলোচনায় রয়েছেন ‘আবর্ত’ নির্মাতা।
কয়েক দিন আগে অরিন্দম অভিযোগ করেন, টলিউডের অনেকে টাকার বিনিময়ে আরজিকর কাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন। তারপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি, সুদীপ্তা, বিদিপ্তা, বিরসা, রূপাঞ্জনা, দেবলীনাসহ অনেক তারকাই। এরপর অরিন্দমের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ জোরালো হয়েছে। এই আগুনে সর্বশেষ ঘি ঢাললেন অরিন্দমের স্ত্রী তনুরুচি শীল।
বলে রাখা ভালো, ১৯৯২ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন অরিন্দম শীল-তনুরুচি। যদিও ১৯৯৯ সাল থেকে আলাদা থাকছেন তারা। আইনত এখনো তাদের ডিভোর্স হয়নি। মামলা চলমান। তবে অরিন্দম শীল এখন শুক্লা দাসের সঙ্গে থাকেন।
আরো পড়ুন:
মেয়েদের সবকিছুতেই জ্বালা: রাতাশ্রী
‘বন্ড সই’ দিয়ে হাসপাতাল থেকে শুটিংয়ে ফেরেন কাঞ্চন
অরিন্দমের অমানবিক আচরণের ঘটনা উল্লেখ করে তনুরুচি বলেন, “শুক্লা আর আমি একই অফিসে কাজ করতাম। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর জানতে পারি, শুক্লা আর অরিন্দম প্রেম করছে। ওরা আমার চোখের সামনে দিয়েই দার্জিলিং গেল। আমার বাবা তখন হঠাৎই মারা গেছেন, সেই সময় স্বামী পাশে থাকার কথা, তার বদলে উনি আমাকে তাড়িয়ে দিলেন।”
প্রাপ্য সম্পত্তি থেকেও স্ত্রীকে বঞ্চিত করেছেন অরিন্দম। তা জানিয়ে তনুরুচি বলেন, “আমাদের জয়েন্ট প্রপার্টি ছিল, সেটা ওরা এখনো দখল করে রেখেছে। অরিন্দমই বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছিল, সেই প্রক্রিয়া এখনো চলছে। কারণ আমার ওই জয়েন্ট প্রপার্টি নিয়ে মামলা চলছিল, সেটা প্রমাণিত যে ওই সম্পত্তির ৫০ শতাংশ মালিক আমি। তবে এখনো ওরা ওটা আমাকে দেয়নি। মাঝে অবশ্য করোনা গেছে। আমি খোরপোষ চাইনি। কারণ আমি চাকরি করতাম, ওদের কোনো অর্থ নিতে চাইও না। তবে আমার প্রাপ্যটা বুঝে নিতে চাই।”
অরিন্দম-শুক্লার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তনুরুচি বলেন, “এতই যদি ওদের ভালোবাসা, তাহলে আবার কেন মিটু কেসে জড়াচ্ছে?”
গত বছর টলিউডের এক অভিনেত্রী অরিন্দমের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেন। এ নিয়ে মহিলা কমিশনে অভিযোগ জানানোর পর অরিন্দমকে ডিরেক্টর্স গিল্ড থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর অরিন্দমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী অভিনেত্রী। ২০২০ সালেও অরিন্দমের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মৈত্র। ওই সময়ে এ অভিনেত্রী বলেছিলেন— “অরিন্দম শীল অত্যন্ত বদমাশ, বদ লোক।” তবে অরিন্দমের বর্তমান সঙ্গী শুক্লা দাসের দাবি, অরিন্দম ভালো মানুষ।
১৯৯৯ সালে ‘তুমি এলে তাই’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে অরিন্দম শীলের। একই বছর তিনি আরো তিনটি সিনেমায় অভিনয় করেন। এরপর অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই অভিনেতা।
তার আরেক পরিচয় তিনি একজন পরিচালক ও প্রযোজক। ২০১৩ সালে ‘আবর্ত’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালকের খাতায় নাম লেখান এই অভিনেতা। অভিনয়ে যেমন তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন তেমনি ‘এবার শবর’, ‘হর হর ব্যোমকেশ’, ‘স্বাদে আহ্লাদে’, ‘ঈগলের চোখ’ তৈরি করেও নির্মাতা হিসেবে জাত চিনিয়েছেন অরিন্দম শীল।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেটের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রবেশের বিকল্প মাধ্যম ভিপিএন বা ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল।
তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য লংগেস্ট সাইলেন্স: ইন্টারনেট শাটডাউনস ডিউরিং বাংলাদেশ’স ২০২৪ আপরাইজিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের (শাটডাউনের) ঘটনাকে পাঁচ ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এরপর প্রতি ধাপে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ও ধরন কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ডিজিটালি রাইটের গবেষক তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ধাপে ইন্টারনেট সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট হয়েছিল। প্রথমবার ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই এবং দ্বিতীয়বার ৫ আগস্ট। এ দুই ধাপে মোবাইল ডেটা ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ফোর-জিকে টু-জিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পাশাপাশি ফিল্টারিং প্রযুক্তি ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দিয়ে ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দেওয়া হয়েছিল।
সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক বৈশ্বিক সংস্থা ‘ওপেন অবজারভেটরি অব নেটওয়ার্ক ইন্টারফেয়ারেন্স’র সহযোগিতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সময় ও অন্তর্ভুক্ত এলাকার আওতার বিবেচনায় ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাকে বাংলাদেশে অন্যতম ব্যাপক ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে ইন্টারনেট শাটডাউন ও নানা মাত্রায় নিয়ন্ত্রণকে সময়ভিত্তিক পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন প্রথম ধাপ জুলাই ১৫-১৭, দ্বিতীয় ধাপ জুলাই ১৮-২৩, তৃতীয় ধাপ জুলাই ২৪-৩১, চতুর্থ ধাপ আগস্ট ১-৩ ও পঞ্চম ধাপ আগস্ট ৪-৫।
ভিপিএনের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় ২৪ জুলাই। এ সময় প্রোটন ভিপিএন, নর্ড ভিপিএন ও টানেলবিয়ারের মতো অ্যাপগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ভিপিএন হলো নিরাপদ ও গোপন পথে ওয়েবসাইটে প্রবেশের উপায়, যা ব্যবহারকারীর অবস্থান ও ডেটা গোপন রাখে। বিশেষ করে ব্লকড করে দেওয়া ওয়েবসাইটে প্রবেশে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, সারা দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি নিয়ন্ত্রণ ও সুনির্দিষ্ট কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশ ও ঘোষণা ছাড়াই তা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা বন্ধেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর থেকে এসব নির্দেশনা এসেছিল।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণা থেকে জানা গেছে, ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে সরকার থেকে মৌখিক ও অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলন বেগবান হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোবাইল ডেটার প্রবাহকে ধীরগতির করে দেওয়া হয়। ১৫ জুলাই সকাল থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৬ জুলাই থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেটকে বাধাগ্রস্ত করা হয়।
সহিংসতার তীব্রতা বাড়তে থাকলে ১৮ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ইন্টারনেট শাটডাউন শুরু করে সরকার। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ওই দিন দিবাগত রাত ১টা ২৯ মিনিটের দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যা ২৩ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিপিএন, মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ডের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১ থেকে ৩ আগস্টের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, ভিপিএন বাধাগ্রস্ত করা ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ৪ থেকে ৫ আগস্ট সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করা হয়েছে ডিজিটালি রাইটের প্রতিবেদনে।