আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলতমান ঋণ কর্মসূচি চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির সমাধানে এডিবি তাগিদ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা বাজেট সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির বিষয়টি আমলে নেয়। তবে আইএমফের শর্ত মানা হবে না। এমনকি আইএমএফ ও এডিবি কেউ বাজেট সহায়তা না দিলেও নিজেদের মত করে বাজেট দেওয়া হবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।

আজ রোববার ইতালির মিলানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বার্ষিক সভার ফাঁকে সংস্থাটির দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ভিডিও বার্তা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকা ঘুরে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ২১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন—কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আমরা জানিয়েছি অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। সামষ্টিক অর্থনীতিতে অনেক উন্নতি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে অনেক সংস্কার করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ব্যবসা–বাণিজ্য। এ বিষয়ে বেসরকারি খাতকে উৎসাহি করতে বিনিয়োগ সম্মেলন করা হয়েছে। এসব অগ্রগতিতে প্রশংসা করেছে এডিবি।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এডিবি এখন আমাদের অবকাঠামোর উন্নয়নে সহায়তা করছে। এটা তারা করতেই থাকবে। এছাড়া আরও কিছু পাইপলাইনে আছে। আমাদের বাজেট সাপোর্টের বিষয় তাদের যেটা দেওয়ার কথা ছিল সেটা ছাড়ের কথা বলেছি। এক্ষেত্রে তারা আইএমএফের বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি যে, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

আইএমএফের কিস্তি ছাড়া বিলম্ব হওয়াতে এডিবির বাজেট সহায়তার কোনো প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেট সাপোর্টের বিষয় তারা (আইএমএফ) বিষয়টা দেখে। কারণ, আইএমএফ সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়গুলো দেখে থাকে। এ বিষয় আমরা আলোচনা করছি। আশা করছি, সমাধান হয়ে যাবে। আমরা চট করে আইএমএফের কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করবো না। আইএমএফের অর্থ ছাড়াই অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা তো এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট নেইনি।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, বাজেট সহায়তা পেলেই হই হুল্লোড় পড়ে; যাবে বিষয়টা এমন না। আমরা যদি আইএমএফ ও এডিবির সহায়তা নাও পাই তাও নিজেদের মত করে বাজেট দেবো। আগামী বাজেট হবে ব্যবস্থাপনাযোগ্য ও বাস্তবসম্মত।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ র

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী তিন অর্থবছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করেছে সরকার

অর্থমন্ত্রণালয় দেশের আগামী তিন আর্থিক বছরের জন্য জিডিপি’র হিসাব প্রক্ষেপণ করেছে।  আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর পরের অর্থাৎ ২০২৬-২০২৭ অর্থ বছরের জিডিপি’র আকার হবে চলতি হিসেবে ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এবং পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে জিডিপি’র প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৭৬ লাখ ৭৬ হাজার ১২০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভায় জিডিপি’র এই প্রাক্কলন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জিডিপির আকারও সংশোধন করেছে অর্থ বিভাগ। গত বছরের জুনে যখন বাজেট দেওয়া হয় তখন চলতি বছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এখন তা সংশোধন করে  ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় প্রস্তুতকৃত প্রক্ষেপণকে অধিকতর নির্ভরযোগ্য করার জন্য অর্থ বিভাগ নিজেদের মডেলের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ম্যাক্রো ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক মডেল (এমএফএমওডি) ব্যবহার করে জিডিপি’র পূর্বাভাস দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।

বর্তমানে অর্থ বিভাগের ব্যবহৃত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো আইএমএফ’র মডেল অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে এমএফএমওডি পূর্বাভাস তৈরি করতে বেশ কিছু আচরণগত সমীকরণ ব্যবহার করে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ এখন থেকে এমএফএমওডি ব্যবহার শুরু করেছে।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। চলমান আর্থিক সংকট, ব্যবসায় স্থবিরতা এবং সাম্প্রতিক সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে এই সংশোধন করা হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য আরও খানিকটা সংশোধন করে তা ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।

তবে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো বলছে, চলতি অর্থবছরে সরকার ঘোষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি-এই তিন সংস্থাই বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের ওপরে যাবে না।

চলতি অর্থ বছরে ( ২০২৪-২০২৫)  জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলতি অর্থবছরে জন্য আইএমএফ’র পূর্বাভাস হতাশাব্যঞ্জক হলেও আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থনীতির ক্ষেত্রে তারা বেশে ভালো পূর্বাভাস দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা এই সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২০২৬) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি কমে হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।  

গত এপ্রিলের ২১ তারিখে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আইএমএফ-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’-এর সর্বশেষ সংস্করণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।  

আইএমএফ-এর এই পূর্বাভাসের আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের সাম্প্রতিক ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও)’-এ জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি চলতি অর্থবছরে মাত্র ৩.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, যা ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বেড়ে ৫.১ শতাংশে পৌঁছাবে।

তবে সবচেয়ে খারাপ পূর্বাভাসটি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত ২২ এপ্রিল সংস্থাটি জানায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোড় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। যদি তাই হয়, তবে এটি হবে বিগত ৩৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এর আগে এই সংস্থাটিই গত জানুয়ারি মাসে বলেছিল, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট করে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করব না: ইতালিতে অর্থ উপদেষ্টা
  • ঋণ নিয়ে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার অবস্থায় পড়তে চাই না: অর্থ উপদেষ্টা
  • আইএমএফ-এডিবি সহায়তা না দিলে নিজেদের মতো করে বাজেট: অর্থ উপদেষ্টা
  • আগামী তিন অর্থবছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করেছে সরকার
  • কৃষিতে ভর্তুকি চালিয়ে যেতে প্রয়োজনে আইএমএফ থেকে বেরিয়ে আসবে সরকার
  • হামলায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত, দাবি ভারতের
  • বাড়তে পারে সেবা মাশুল, সুদ, টোল ও ইজারামূল্য