আইএমএফ-এডিবি সহায়তা না দিলে নিজেদের মত বাজেট দেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 4th, May 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলতমান ঋণ কর্মসূচি চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির সমাধানে এডিবি তাগিদ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা বাজেট সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির বিষয়টি আমলে নেয়। তবে আইএমফের শর্ত মানা হবে না। এমনকি আইএমএফ ও এডিবি কেউ বাজেট সহায়তা না দিলেও নিজেদের মত করে বাজেট দেওয়া হবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
আজ রোববার ইতালির মিলানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বার্ষিক সভার ফাঁকে সংস্থাটির দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ভিডিও বার্তা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকা ঘুরে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ২১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন—কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আমরা জানিয়েছি অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। সামষ্টিক অর্থনীতিতে অনেক উন্নতি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে অনেক সংস্কার করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ব্যবসা–বাণিজ্য। এ বিষয়ে বেসরকারি খাতকে উৎসাহি করতে বিনিয়োগ সম্মেলন করা হয়েছে। এসব অগ্রগতিতে প্রশংসা করেছে এডিবি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এডিবি এখন আমাদের অবকাঠামোর উন্নয়নে সহায়তা করছে। এটা তারা করতেই থাকবে। এছাড়া আরও কিছু পাইপলাইনে আছে। আমাদের বাজেট সাপোর্টের বিষয় তাদের যেটা দেওয়ার কথা ছিল সেটা ছাড়ের কথা বলেছি। এক্ষেত্রে তারা আইএমএফের বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি যে, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
আইএমএফের কিস্তি ছাড়া বিলম্ব হওয়াতে এডিবির বাজেট সহায়তার কোনো প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেট সাপোর্টের বিষয় তারা (আইএমএফ) বিষয়টা দেখে। কারণ, আইএমএফ সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়গুলো দেখে থাকে। এ বিষয় আমরা আলোচনা করছি। আশা করছি, সমাধান হয়ে যাবে। আমরা চট করে আইএমএফের কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করবো না। আইএমএফের অর্থ ছাড়াই অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা তো এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট নেইনি।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, বাজেট সহায়তা পেলেই হই হুল্লোড় পড়ে; যাবে বিষয়টা এমন না। আমরা যদি আইএমএফ ও এডিবির সহায়তা নাও পাই তাও নিজেদের মত করে বাজেট দেবো। আগামী বাজেট হবে ব্যবস্থাপনাযোগ্য ও বাস্তবসম্মত।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে আইএমএফ
ব্যাংকিং খাতে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে, প্রকৃত খেলাপির চিত্র প্রকাশ করায় তা ইতিবাচক ভাবে দেখছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যংকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফের প্রতিনিধি দল খেলাপি ঋণসহ নানা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
আরো পড়ুন:
১১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৮৮০ অফিসার নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক
বিদ্যুৎ আমদানির অর্থ পরিশোধে নিয়ম সহজ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড–১) ড. এজাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশন নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে তথ্য নিচ্ছে। তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ, সুদের হার নির্ধারণ, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা এবং খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপের অগ্রগতি সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়েছে।
বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দল রিজার্ভ থেকে ইডিএফ গঠনসহ ব্যবহারের ধরন, বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন ও প্রাক–অর্থায়ন সুবিধা এবং এসব তহবিলের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সম্পর্কে আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে বিস্তারিত জানায়।
বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দল মুদ্রানীতির কাঠামো, মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, তারল্য সহায়তা, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা এবং খেলাপি ঋণ কমাতে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেয়। তারা মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এছাড়া, ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ও তা কমানোর পদক্ষেপসহ জলবায়ু ও টেকসই বিনিয়োগ এবং সবুজ অর্থায়ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা। তবে, গত বছরের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর গোপন করে রাখা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ পেতে শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, মাত্র এক বছরে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বেড়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকায়।
ঢাকা/নাজমুল/মাসুদ