পশ্চিমা কূটনীতিকদের শ্রম সংস্কারের অগ্রগতি জানালেন লুৎফে সিদ্দিকী
Published: 12th, May 2025 GMT
দেশের শ্রমমান বিষয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) রোডম্যাপকে শুধু দিকনির্দেশনা নয়, একটি অঙ্গীকার হিসেবে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে টেকসই ফলাফল অর্জনে সময়, শ্রম ও সদিচ্ছা বিনিয়োগ করছি। এ কাজে গত আট মাসে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।’
সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। এতে শ্রম খাত সংস্কারে আইন সংশোধন, সামাজিক সংলাপ জোরদার, রাজনৈতিক মামলার নিষ্পত্তি এবং পরিদর্শন ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানোর মতো বিষয়ে গত আট মাসে বাংলাদেশের অর্জন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা উপস্থাপন করেন তিনি।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধি ছাড়াও কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। আইএলও রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয় এ বৈঠকে। পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
শ্রম উপদেষ্টা ড.
শ্রম সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সালের জুলাই মাসে শ্রম আইন সংশোধন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে।’
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, এটি এক অভূতপূর্ব প্রক্রিয়া। সরকার শ্রম খাতে সামাজিক সংলাপ ও দ্রুত সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, ‘আমরা খসড়া আইন দ্রুত দেখার অপেক্ষায় আছি এবং দৃশ্যমান উন্নতির দিকেও নজর রাখব। এর সঙ্গে ইইউ বাজারে প্রবেশাধিকার জড়িত।’
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা সংস্কারের বর্তমান গতি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে, অতীতে যেসব শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তার জন্য জবাবদিহি প্রয়োজন।’
কানাডীয় হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, ‘আইএলও রোডম্যাপ অনুসরণে আমরা সন্তুষ্ট। বাংলাদেশ যখন এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে, তখন এই সংস্কারগুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ সফল করতে হলে শক্তিশালী শ্রমমান বজায় রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে যে গুরুত্বারোপ করেছে, তা প্রশংসনীয়।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিয়াইনেন বলেন, ‘আমরা সংশোধিত শ্রম আইন প্রণয়নের দ্বারপ্রান্তে। এখন প্রয়োজন এমন একটি আইন, যা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে এবং শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।’
বৈঠকে আইন সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, একটি দল অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।
লুৎফে সিদ্দিকী জানান, সরকার ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র, শ্রম ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, শ্রম আদালতের জট নিরসনে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া এবং শ্রম পরিদর্শকের সক্ষমতা বাড়ানো– এই তিনটি ইস্যুতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, শ্রম অধিকার এখন শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়, এটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বাজার প্রবেশাধিকার, এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতির সঙ্গেও জড়িত। সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
বৈঠকে কূটনীতিকরা বাংলাদেশের চলমান শ্রম সংস্কারের গতি ও আন্তরিকতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং যে কোনো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সংস্কার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে মত দেন। তারা সংস্কার প্রক্রিয়ায় নিজ নিজ দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কূটনীতিকদের শ্রম খাত সংস্কারের অগ্রগতি জানালেন লুৎফে সিদ্দিকী
শ্রমখাত সংস্কারে গত ৮ মাসের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করতে শীর্ষস্থানীয় পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের এ বৈঠকে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর থেকে শ্রম খাতে সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার অগ্রগতি রাষ্ট্রদূতদের সামনে তুলে ধরেন লুৎফে সিদ্দিকী। এতে শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি বিশেষজ্ঞরাও এ বৈঠকে অংশ নেন।
গত আট মাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন হয়েছে উল্লেখ করে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “আইএলও রোডম্যাপ কেবল একটি নির্দেশিকা নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতি। আমরা সময়, শক্তি এবং সদিচ্ছা বিনিয়োগ করছি, যেন সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা ভালো ফলাফল পাওয়া যায় “
তিনি শ্রম উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেনের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা এবং নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, “শ্রম উপদেষ্টা ত্রিপক্ষীয় সভায় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে দীর্ঘসময় আলোচনা করে ঐকমত্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।”
বৈঠকে শ্রম সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, “আমরা এ বছর জুলাই মাসের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার প্রক্রিয়াটিকে ‘অভূতপূর্ব’ উল্লেখ করে বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রচুর সংলাপ হয়েছে। আমরা শীঘ্রই খসড়া আইনটি দেখতে এবং বাস্তব উন্নতির দিকে নজর রাখার জন্য উন্মুখ।” এ সময় তিনি শ্রম খাতের সংস্কারে সরকারের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের প্রশংসা করেন।
মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, “আমরা বর্তমান সরকারের অধীনে সংস্কার ও আইন সংশোধনের অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই। এছাড়া অতীতে শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতাও দেখতে চাই।”
কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত সিং সভায় এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, “আমরা আইএলও রোডম্যাপকে সমর্থন করি। এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে এটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী শ্রম মানদণ্ড থাকা আবশ্যক।” বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করায় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিয়ানেন বলেন, “আমরা সংশোধিত শ্রম আইন প্রণয়নের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনটি এমনভাবে করা যেন তা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেয়।”
আইন সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী সভায় উপস্থিত সদস্যদের শ্রম আইন সংশোধনে অগ্রগতির বিষয়ে নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা যথেষ্ট আইনি অগ্রগতি অর্জন করেছি এবং আমাদের দল অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।”
লুৎফে সিদ্দিকী এ সময় কূটনীতিকদের শেখ হাসিনার শাসনামলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র, শ্রম এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, আদালতে অচলাবস্থা এড়াতে উন্নত বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা এবং শ্রম পরিদর্শকের স্বল্পতার বিষয়ে অবহিত করেন।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “এটি কেবল একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। শ্রম অধিকার এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ট্যারিফ এজেন্ডাসহ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত। আমাদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।”
কূটনীতিকরা যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেই শ্রমখাতের সংস্কার এবং এর বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। অনেকেই বাংলাদেশে চলমান সংস্কারের সমর্থনে তাদের দেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন করার একটি অনন্য সুযোগ পেয়েছ বলে জানান লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি জানান, শ্রম আইনের সংশোধনের বিষয়টি আইএলও গভর্নিং বোর্ডে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছ।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী