শিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনকে দেওয়া ‘হুমকি’র প্রতিকার চেয়ে বিজ্ঞপ্তি
Published: 23rd, May 2025 GMT
নরসিংদী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনকে দেওয়া ‘হুমকি’র আইনগত প্রতিকার চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, আইনজীবী ও বিভিন্ন অঙ্গনের ব্যক্তিরা।
শুক্রবার ১৪৭ জনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন মাধ্যমে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তাকে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে তিনটি সংগঠন- তানযীমুল মাদারিসিল কাওমিয়া নরসিংদী এবং নরসিংদী জেলা খেলাফত মজলিস ও হেফাজতে ইসলাম। এ বিবৃতিগুলোতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নাদিরা ইয়াসমিনকে অপসারণের আল্টিমেটাম দিয়ে ‘দুঃখজনক পরিস্থিতির দায়’ কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ফেসবুকে নাদিরা ইয়াসমিনকে নিয়ে অপমানজনক, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পোস্ট দিচ্ছেন। মিথ্যা প্রচার এবং হুমকির মাধ্যমে তাকে মানসিক এবং সামাজিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। যা একজন শিক্ষক ও নারী নাগরিকের জন্য শুধু অসম্মানজনকই নয়, সম্পূর্ণ বেআইনি।
তারা আরও বলেন, নাদিরা ইয়াসমিন দীর্ঘদিন ধরে নারী অধিকার, সমতা ও মানবিক মর্যাদার পক্ষে কাজ করে আসছেন। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ‘নারী অঙ্গন’ সংগঠনটি বহু নারী শিক্ষার্থীর আত্মপ্রত্যয় গঠনে ভূমিকা রেখেছে। যেখানে ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা বিবেচনায় রেখে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। নারীর উন্নয়ন এবং বিকাশকে ‘ইসলামবিরোধী’ হিসেবে উপস্থাপন করা প্রকৃতপক্ষে একটি অপপ্রচার, যা মুক্তচিন্তা, একাডেমিক স্বাধীনতা এবং সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকারবিরোধী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধর্মীয় সংগঠনের নামে এ ধরনের চাপ সৃষ্টি, হুমকি এবং সামাজিক ঘৃণার উসকানি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এক অশুভ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। একজন শিক্ষকের জীবন ও কাজের পরিবেশ ধ্বংস করার এ প্রচেষ্টা শুধু একটি ব্যক্তিকে নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমরা শিক্ষকের একাডেমিক স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার অধিকারের ওপর এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এতে বলা হয়, বারবার নারীর প্রতি অপমান ও হয়রানির কারণ বর্তমান সরকারের নীরবতা। ধর্মের নামে যখন কোনো মহল এমন দমন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক এবং সামাজিক সুবিধা নিতে চায়, তখন পরিস্থিতির এ রকম অবনতি ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রকে কঠোর ভূমিকা নেওয়া উচিত।
বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে। সেগুলো হলো-
১.
২. যেসব ব্যক্তি ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে ও হুমকি দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
৩. প্রশাসনকে মিথ্যা প্রচার ও অনলাইন হয়রানি বন্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
৪. কলেজ কর্তৃপক্ষকে তার একাডেমিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নরস দ স ব ধ নত স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
‘রব্বানা হাবলানা’: পরিবারের জন্য এক অমূল্য দোয়া
‘হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের নেককারদের নেতা বানাও।’ এই কথাগুলো কোরআনের সুরা ফুরকানের ৭৪ নম্বর আয়াতে লিপিবদ্ধ আছে।
মূল আরবি দোয়াটির উচ্চারণ হলো, ‘রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইয়ুন ওয়াজাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।’
এটি শুধু একটি দোয়া নয়, বরং পরিবারের কল্যাণ, সন্তানের নেক আমল এবং নিজের নেতৃত্বের জন্য আল্লাহর কাছে এক হৃদয়গ্রাহী প্রার্থনা।
আরও পড়ুননবী সুলাইমান (আ.)–এর দোয়া১৪ মার্চ ২০২৪দোয়ার তাৎপর্যপবিত্র কোরআনের সুরা ফুরকানে আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। এই আয়াতে তাঁদের একটি আকাঙ্ক্ষা কথা প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাঁরা আল্লাহর কাছে এমন একটি পরিবারের প্রার্থনা করেন, যাঁরা তাঁদের চোখের শীতলতা এবং হৃদয়ের শান্তির উৎস হবে।
আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী বলেন, এই দোয়া মুমিনকে তাঁর পরিবারের জন্য দায়িত্বশীল হতে শেখায়। এটি কেবল স্ত্রী-সন্তানের ভালো থাকার প্রার্থনা নয়, বরং নিজেকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, যিনি নেককারদের পথ দেখাতে পারেন।
এই দোয়ার দ্বিতীয় অংশ, ‘আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানাও,’ বোঝায় যে একজন মুমিনের উচিত নিজের পরিবারকে নেক পথে পরিচালিত করা এবং সমাজে ন্যায় ও সত্যের পথপ্রদর্শক হওয়া। (মাআরিফুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৬৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১৯৯৮)
আরও পড়ুনদোয়া কীভাবে করতে হয়২০ এপ্রিল ২০২৫এটি কেবল স্ত্রী-সন্তানের ভালো থাকার প্রার্থনা নয়, বরং নিজেকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, যিনি নেককারদের পথ দেখাতে পারেন।কখন এই দোয়া করতে হয়‘রব্বানা হাবলানা’ দোয়াটি পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। যেকোনো সময় পড়া যায়—নামাজের পর, সিজদায় বা দৈনন্দিন জীবনে যখন ইচ্ছা। বিশেষ করে বিবাহিত জীবনে শান্তি, সন্তানের নেক আমল বা পারিবারিক সুখ কামনায় এই দোয়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করো, কারণ দোয়া ইবাদতের মূল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭১)
এই দোয়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা, সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আল্লামা শানকিতি বলেন, এই দোয়া মুমিনকে তাঁর পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে। একটি নেককার পরিবারই সমাজের মূল ভিত্তি এবং এই দোয়া সেই ভিত্তি মজবুত করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। (শানকিতি, মুহাম্মদ আল-আমীন, আদ্বাউল বায়ান ফি ঈযাহিল কোরআন, পৃষ্ঠা ৪৭৮, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ২০০৫)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই, যে তার পরিবারের জন্য সর্বোত্তম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৯৭৭)
আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫