সরকারি চাল বিতরণে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ইউপি সচিব অবরুদ্ধ, পরে উদ্ধার
Published: 27th, May 2025 GMT
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ভিডব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) কর্মসূচির চাল বিতরণের সময় টাকা আদায়ের অভিযোগে এক ইউপি সচিবকে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম হুমায়ুন কবির। তিনি মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব হিসেবে কর্মরত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, গতকাল দিনব্যাপী ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় ওই ইউনিয়নের ৩২৬ জন নারীদের প্রতিজনকে ১৫০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। এ সময় জানাজানি হয়, পরিবহন খরচ বাবদ উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আগেই নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে ইউপি সচিব হুমায়ুনের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রাত আটটায় তাঁকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা। খবর পেয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে ওই ইউপি সচিবকে উদ্ধার করে নিয়ে যান ইউএনও তরিকুল ইসলাম ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
অভিযোগের বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, উপজেলা সদর থেকে মাধবখালী পর্যন্ত এসব চাল পৌঁছাতে পরিবহন খরচ মেটাতে সবার সিদ্ধান্তে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ৫০০ কা উত্তোলন করা হয়েছে। যার মধ্যে থেকে পরিবহন খরচ বাবদ ৪২ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ইউপি প্রশাসক (উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা), ইউপি সদস্য, চৌকিদার, দফাদারসহ সবাই মিলে এ সিদ্ধান্ত নেন।
তবে মাধবখালী ইউপির দফাদার শফিকুল ইসলাম বলেন, চাল উত্তোলনের দুই দিন আগে উপকারভোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৫০০ টাকা করে সংগ্রহ করেছেন। হুমায়ুন কবির এ কাজ করতে বলেছেন।
টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন মাধবখালী ইউপির প্রশাসক ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপকারভোগীদের কাছ থেকে উত্তোলন করা টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সরকারি খরচে চাল পরিবহনের ব্যয় মেটানো হবে।
ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, উপকারভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা আজ মঙ্গলবারের মধ্যে ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টাকা উত্তোলনে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম পর বহন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
খানাখন্দে ভরা সড়কে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি
সড়কে খানাখন্দ। কোথাও পিচঢালাই আছে, কোথাও নেই। বৃষ্টিতে পানি-কাদায় একাকার। দিন দিন এসব খানাখন্দ বড় আকার ধারণ করছে। তাতে প্রতিদিন উল্টে পড়ছে যানবাহন। আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। কাদাপানি ছিটকে কাপড়চোপড় নষ্ট হচ্ছে। এমন দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
এ চিত্র ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার অংশের। স্থানীয় ব্যক্তিরা সড়কটি সংস্কারে বারবার দাবি জানালেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কয়েকদিনের টানা বর্ষণে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে সড়কটি।
সরেজমিন দেখা যায়, ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা, নগরকান্দা উপজেলার মহিলা রোড, তালমা ও পুখুরিয়া এলাকার সড়কের বেশি নাজুক অবস্থা। গাড়ি চালানোর কোনো উপায় নেই। রাস্তা গর্তে ভরা। গর্তে চাকা পড়ে প্রায়ই বিকল হয় যানবাহন। এর পরও বিকল্প না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে বাস, ট্রাক, লরি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত যানবাহনসহ থ্রি-হুইলার।
শনিবার ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ফরিদপুরে এসেছিলেন অ্যাম্বুলেন্স চালক কাশেম বেপারী। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে গেছে। রাস্তা এমনই বেহাল যে, ঝাঁকুনিতে রোগী আরও অসুস্থ পড়ে। বড় বড় গর্ত বৃষ্টির কারণে চোখে পড়ে না। রাতের বেলা গাড়ি চালাতে ভয় লাগে।
একই দিন নগরকান্দার মহিলা রোড এলাকায় দেখা যায় মালবাহী একটি লরি বিকল হয়ে পড়ে আছে। লরিটির সামনের দুটি চাকা পুরোপুরি নষ্ট। গাড়িটি বগুড়া থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল।
চালক আকবর হোসনে বলেন, রাস্তার জঘন্য অবস্থা। গাড়ি চালানোর কোনো কায়দা নেই। গর্তে পড়ে ঝাঁকুনি খেয়ে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। মিস্ত্রি আসবে, তারপর গাড়ি ঠিক করা হবে। এতে ৩০ হাজার টাকা লেগে যাবে। দুপুরে আরও একটি অটোরিকশা উল্টে কয়েকজন যাত্রী আহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দা ফয়েজুল বারী জানান, এই এলাকায় প্রতিদিন অটোরিকশা উল্টে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত রাস্তা সংস্কারসহ চার লেনের দাবি জানান।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কটির সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সংস্কারকাজ শুরু করা হয়নি। বাখুন্ডা এলাকায় ইট-বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করতে দেখা যায় সড়ক বিভাগকে।
সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত চার লেনে করার দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে জেলার সর্বস্তরের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সপক্ষে প্রচারণা। ‘ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়ন’ নামে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ১৩ জুলাই রোববার বেলা ১১টায় ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, দুটি প্যাকেজের আওতায় সড়ক মেরামতের জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে জরুরি ভিত্তিতে সড়কের খানাখন্দ ভরাটের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৩২ কিলোমিটারের এই মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।