Samakal:
2025-11-03@05:47:55 GMT

বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়নাবাজি

Published: 28th, May 2025 GMT

বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়নাবাজি

বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগ্য হওয়া দূরে থাক, কখনও নিয়োগ পরীক্ষা দেননি। অথচ চাচার সহযোগিতায় জালিয়াতি করে মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নামে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা (সহকারী পরিচালক) হিসেবে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। এরই মধ্যে দুটি পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন যুগ্ম-পরিচালক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। একটি মামলায় পুলিশি তদন্তে ধরা পড়ার পর বুধবার তাঁর নিয়োগ বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তাঁর চাচা বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক শাহজাহান মিঞাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সবার তথ্য পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে মো.

আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নামের এক ব্যক্তি আসলেই ২০১৩ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি পান। একই সময়ে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি হয় তাঁর। আসল আনসারী বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান না করে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি এখন নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী হিসেবে এতদিন যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করে আসছেন তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা উল্লেখ আছে গাজীপুর। যদিও তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। জালিয়াতি করে এই জাতীয় পরিচয়পত্রও পরে বানিয়েছেন। তাঁর প্রকৃত নাম মো. শাহজালাল বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বুধবারও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসে আসেন। তবে দুপুরের দিকে নিয়োগ বাতিল করে অফিস আদেশ জারি হওয়ার পর আর দেখা যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ। যতদূর শুনেছেন তিনি বাসায়ও যাননি। তাঁর চাচা শাহজাহান মিঞারও টেলিফোন বন্ধ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রকৃত আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী সমকালকে বলেন, তাঁর আপন বোনজামাই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করেন। কোনো একটি কাজে সম্প্রতি রাজশাহী অফিসে যান। সেখানে একই নামের নেমপ্লেট দেখে ছবি তুলে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে দেন। তাঁর এই ব্যতিক্রম নামের সঙ্গে হুবহু মিলে যাওয়ায় খুনসুটি করে বলেছিলেন– ‘‘এতদিন পৃথিবীতে মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নামে একজন ছিল। এখন আরেকজনকে পাওয়া গেল।’ 

তিনি জানান,  বুধবার  পরিচিত কয়েকজন দুপুরের পর নকল আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর  নিয়োগ বাতিলের খবর জানান।

জানা গেছে, কোনো একটি মামলার তদন্তের জন্য আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর বিষয়ে খোঁজখবর করছিল পুলিশ। তদন্তে গিয়ে বিভিন্ন অসংগতি উঠে আসে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া তথ্য এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত তথ্যে কোনো মিল নেই। সোমবার পুলিশ বাংলাদেশ ব্যাংকে এই তথ্য দেয়। প্রাথমিক যাচাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য পায় জালিয়াতির মাধ্যমে ছবি টেম্পারিং করে তাঁকে এই পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। যখন এই নিয়োগ হয়েছে, ওই সময় নিয়োগ শাখায় কর্মরত ছিলেন আপন চাচা শাহজাহান মিঞা। ফলে দেরি না করে আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আর শাহজাহান মিঞাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিষয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, পুলিশের দেওয়া তথ্যের সত্যতা পাওয়ায় তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া একজন নারী কর্মকর্তার বাবার ভুয়া সনদ প্রমাণিত হওয়ার তাঁকে অপসারণ করা হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গেও শাহজাহান মিঞার নাম এসেছিল। এর আগে একজন নির্বাহী পরিচালক টেম্পারিং করে বয়স বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়লেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। তিনটি ঘটনার সময়ই গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. আতিউর রহমান। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সময়ে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে কারণে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া প্রতিটি নিয়োগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও এখনও এ বিষয়ে অফিস আদেশ হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ কাজে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত মো. শাহজাহান মিঞার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন য় গ ব ত ল কর শ হজ হ ন ম ঞ কর মকর ত তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির