একদিকে খরস্রোতা নদ। অন্যদিকে প্রতিরক্ষা বাঁধ। মধ্যখানে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের চাটিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাঁধের মাটিতে চাপা পড়েছে যার একাংশ। 
রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের চাটিগাঁওয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের মাধ্যম এই বিদ্যালয়। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ উঁচু ও প্রশস্ত করায় মাটিচাপায় পড়েছে বিদ্যালয়ের একাংশ ও একটি কক্ষ। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।
জানা যায়, চাটিগাঁওয়ের বিদ্যোৎসাহী গণী মিয়া এই প্রান্তিক জনপদের জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা বিস্তারে এগিয়ে আসেন। তাঁর দেওয়া জমিতে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চাটিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ওই এলাকার ৬১ শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করছে।
বেশ কিছু দিন ধরে মনু নদের উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নদের চাটিগাঁও এলাকায় মনু বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের অংশ উঁচু ও প্রশস্ত করা হয়। বর্তমানে চাটিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ সমান উঁচু হয়েছে বাঁধের উচ্চতা। এতে করে বৃষ্টি নামলে বাঁধের মাটি গলে ঢলের সঙ্গে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে ঢুকছে। এরইমধ্যে ওই বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা মাটি চাপায় বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এক হাজার ১২ ফুট উঁচু বাঁধ নিয়মিত ওঠানামায় বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বৃষ্টির সময় যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জিবান আহমদ জানায়, ২-৩ মাস আগে মাটি পড়ে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ আটকে গেছে। বৃষ্টির সময় বাঁধ থেকে নামতে গেলে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেকে আঘাতও পেয়েছে পড়ে গিয়ে।
স্থানীয় চাটিগাঁওয়ের কৃষক আবু ইউছুফ বলেন, বিদ্যালয়ের পাশ ছেড়ে অপর পাশে বাঁধ কিছুটা প্রশস্ত ও উঁচু করলে বিদ্যালয় ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। এখন বিদ্যালয়ের পাশের মাটি সরিয়ে গাইডওয়াল ও সামনে ওঠানামার জন্য একটি সিঁড়ি নির্মাণ করা জরুরি। এছাড়া বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা বিপদে পড়বেন। মাটি ভেঙে পড়ে প্রাণনাশের মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিপনা রানী দে সমকালকে বলেন, বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের সংস্কার কার্যক্রম বিদ্যালয় ভবন ও শিক্ষার্থীদের জন্য গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রেণিকক্ষ বন্ধ হওয়ায় পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এরইমধ্যে স্থানীয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরেজমিন বিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করে লিখিত প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
রাজনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ নিয়ামত উল্লাহ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মসৃণ যাতায়াতের জন্য সেখানে শিগগিরই একটি সিঁড়ি নির্মাণ করে দেবেন। এ দিকে জেলা শিক্ষা দপ্তরও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছে ওই বিদ্যালয় ভবনের পাশের মাটি সরিয়ে গাইডওয়াল নির্মাণ করে দিতে হবে। 
ভূমিদাতা পরিবারের সদস্য ও ওই বিদ্যালয়ের (অবসরপ্রাপ্ত) শিক্ষক হারুনুর রশীদ জানান, এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে প্রশাসনিক পর্যায়ে সব ধরনের চেষ্টা-তদবির অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় অভিভাবকদের অনেকে জানান, একেবারে গ্রামীণ জনপদে প্রতিষ্ঠিত চাটিগাঁও প্রাইমারি বিদ্যালয়টির দেয়াল ধসে পড়লে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হবে। এ এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষার ভরসাস্থল হারাবে। তাই বিদ্যালয়ে পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ বহাল রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ সমকালকে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপদ যাতায়াতে এবং বিদ্যালয়ের ভবন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ