অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছে: সিপিবি
Published: 29th, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, বর্তমান সংকট সমাধানে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারও দাবি করেন তিনি।
রুহিন হোসেন বলেন, সিপিবি, বাম জোটসহ ৫০টির বেশি দল চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন মাত্র একটি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় রুহিন হোসেন এ কথাগুলো বলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মুক্তিভবনে এই স্মরণসভার আয়োজন করে সিপিবি।
এখন গণতন্ত্র ও শোষণমুক্তির আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অনেকে অবস্থান নিচ্ছেন অভিযোগ করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর গত ১০ মাসে জনজীবনের সংকট দূর হয়নি। দারিদ্র্য, বেকারত্ব বাড়ছে। মানুষের নিরাপত্তাহীনতা কাটছে না। ‘মব’ সন্ত্রাস চলছে।
রুহিন হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে করিডর প্রদান, বন্দর লিজ, বিদেশিদের সমরাস্ত্র কারখানা অনুমোদন—এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূরাজনীতিতে আধিপত্যবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে।
স্বাধীন বিচার বিভাগ ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের কথা বলা হলেও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা বেকসুর খালাস পাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, জেল পলাতক জঙ্গি গ্রেপ্তার ও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
স্মরণসভায় সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে নানা টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র—এসব বলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের কবর দিয়েছিলেন মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এখন বলা হচ্ছে আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। উন্নয়নের সঙ্গে যেমন গণতন্ত্রের বিরোধ নেই, সংস্কারের সঙ্গেও তেমনি নির্বাচনের বিরোধ নেই।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ও অনিরুদ্ধ দাশ, কোষাধ্যক্ষ ফজলুর রহমান।
স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত নেতা আবু জাফর আহমদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এ সময় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আবু জাফর আহমদ ২০১৯ সালের ২৮ মে মারা যান। ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি তিনি সিলেটের বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র স মরণসভ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
জুলাই সনদের খসড়াকে স্বৈরাচারের প্রতি নমনীয়, আইনি বাধ্যবাধকতাহীন দুর্বল সনদ বলে উল্লেখ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ।
আজ মঙ্গলবার দলের নিয়মিত বৈঠকে জুলাই সনদের খসড়ার বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, জুলাই সনদে পতিত ফ্যাসিবাদকে গৎবাঁধা শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ফলে পতিত ফ্যাসিবাদের নির্মমতা, নৃশংসতা ও বিভীষিকাময় দুঃশাসনের চিত্র খসড়া সনদে নেই।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, জুলাই সনদের খসড়ায় একবারের জন্যও পতিত ফ্যাসিবাদের মূল হোতা ও অশুভ চক্রের প্রধান শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়নি, অথচ পুরো ফ্যাসিবাদ তাঁর নেতৃত্বেই নৃশংসতা চালিয়েছে। সাম্প্রতিক একাধিক প্রমাণিত ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিতে শোনা গেছে। তারপরও জুলাই সনদে শেখ হাসিনার নাম না থাকা মেনে নেওয়া যায় না।
মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, জুলাই সনদের ক্ষেত্রে প্রধান চাওয়া ছিল, এর আইনি মর্যাদা ও বাধ্যবাধকতা। কিন্তু খসড়া সনদে এ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। তাই এই সনদের আদতে কোনো তাৎপর্য আছে বলে মনে হয় না। তিনি আরও বলেন, সনদের কোথাও অংশগ্রহণকারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আইনি সুরক্ষা রাখা হয়নি। ফলে অভ্যুত্থানের নায়কদের নিরাপত্তা দীর্ঘ মেয়াদে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। অংশ নেওয়া শক্তি ও পক্ষের উল্লেখ নেই, মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের উল্লেখ নেই। ফ্যাসিবাদের দোসরদের সম্পর্কেও সনদের খসড়া নিশ্চুপ। ফলে স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন সহজ হবে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ যে দেড় দশক স্বৈরতন্ত্রের জাঁতাকলে পিষ্ট হলো, তার প্রধান দায় ভারতের। অথচ জুলাই সনদে ভারত নিয়ে রহস্যজনক নীরবতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে খসড়া সনদ খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতাসহ অপরিহার্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়েছে। একই সঙ্গে পতিত স্বৈরাচারের অপকর্মের চিত্রায়নে ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ুম, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, মহিলা ও পরিবারকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা এ বি এম জাকারিয়া, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, সহপ্রচার ও দাওয়াহ্–বিষয়ক সম্পাদক কে এম শরীয়াতুল্লাহ প্রমুখ।