বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গৃহভূমি হতে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, দেশকে একটি যুদ্ধাবস্থার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা ক্ষমতায় আছে, তারা গণতন্ত্র দিতে চায় না, নির্বাচনের কথা বলতে চায় না।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন হাফিজ উদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গৃহভূমি হতে চলেছে। আমরা জানি না, বাংলাদেশকে একটি যুদ্ধে লিপ্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, আরও কিছু কিছু নেতা বলেছেন, মানবিক করিডর দিতে হবে। কিসের জন্য, জনগণের জানার অধিকার নাই?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। সামরিক বাহিনীর প্রধান চান নির্বাচন, আর যারা ক্ষমতায় আছে—   সিভিল একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তারা গণতন্ত্র দিতে চায় না, নির্বাচনের কথা বলতে চায় না।

সংস্কার করার একমাত্র অধিকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বলে মনে করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সংস্কার করার একমাত্র অধিকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের, এখানে একটা গোষ্ঠী এসে বলবে এই সংস্কার হবে, ছাত্ররা এসে বলবে ওই সংস্কার হবে, এভাবে কি বাংলাদেশ চলবে? এ জন্যই কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম?’

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘দুঃখ লাগে, এই যে একটা সরকার এখানে আছে, তাদের সবাই শিক্ষিত ব্যক্তি। তাদের মধ্যে কেবলমাত্র একজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। বাকি যাঁরা আছেন, যাঁদেরকে টেলিভিশনে দেখি, দেশের জন্য তাঁদের কী অবদান আছে।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে বারবার সংগ্রাম হয়েছে, কিন্তু এদের কাউকে তো আমরা কোনো সংগ্রামে দেখিনি।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, একটি তথাকথিত শিক্ষিত গোষ্ঠী বারবার জনগণকে বিভ্রান্তির মধ্যে নিয়ে যায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর ভিডিও বক্তব্য (ধারণকৃত) অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। প্রধান আলোচক হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমান।

অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। সভার সঞ্চালক ছিলেন বিএনপি নেতা সুলতান সালাউদ্দিন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স থ য় ন ব এনপ র কম ট র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ

নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বিএনপি সমর্থন করে না। দলের এই অবস্থান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা চাচ্ছে, তাদের বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে তারা সেই অভিযোগটা আদালতে উত্থাপন করতে পারে।

আদালতের মাধ্যমেই এ বিষয়ে ফয়সালা হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা নির্বাহী আদেশে, সেটা আমরা সমর্থন করি না। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি অনেক আগে যে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার যে বিষয়টি সেটা নির্ধারিত হোক। লেট দ্য কোর্ট ডিসাইড (আদালতকে নির্ধারণ করতে দিন)।’

আইনি প্রক্রিয়ায় যদি কোনো দলের বিরুদ্ধে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে আদালত সেই দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি নির্ধারিত হয়, সেটা নির্বাচন কমিশন মানতে বাধ্য। এ ছাড়া অন্য যেকোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে যদি আমরা রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ চাই তাহলে সেটা হবে একটা ভয়ংকর চর্চা। কারণ, এখন যাঁরা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা চাচ্ছেন, তাঁদের বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে তাঁরা সেই অভিযোগটা আদালতে উত্থাপন করতে পারে, আইন তো আছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটা নিশ্চিত হোক।’

তবে আওয়ামী লীগের বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘তারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী। তারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য দায়ী। সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের যারা প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলা দায়ের হয়েছে, আরও হবে, বিচার চলছে।’

রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিই সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি তুলেছিল বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আদালত নির্ধারণ করবে তারা এ দেশে রাজনীতি এবং নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না। সেই প্রক্রিয়ায় যদি আরও কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ থাকে, সেটা আদালতে উত্থাপন করা যেতে পারে।’

আরও পড়ুনকয়েকটি অভিন্ন দাবিতে একযোগে বিক্ষোভে নামছে ৭টি দল১০ ঘণ্টা আগে

আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে দেশে একটা সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করতে পারে। সেই শূন্যতার মধ্যে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে। ঐক্য বিনষ্ট হলে সেটার সূত্র ধরে কথিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে এবং তাদের হাত ধরে আঞ্চলিক শক্তিগুলো এখানে জড়িত হয়ে যেতে পারে পরস্পরের বিরুদ্ধে এবং একটি বৈশ্বিক শক্তিও সেই সুযোগটা নিতে পারে। স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে এই আশঙ্কাগুলো একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যারা এই ব্যবস্থার পক্ষে, তারা যেন নির্বাচনী ইশতেহারে তা তুলে ধরে জনগণের ম্যান্ডেট নেয়। জনগণের ইচ্ছা ছাড়া পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

নির্বাচন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো রাজনৈতিক কৌশল জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ দেশের মানুষ ১৬-১৭ বছর ধরে রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে। সুতরাং এই পথে যারাই বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে কৌশলে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, দলীয় হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, সেটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এখন শেষবিচারে জনগণই হচ্ছে বিচারক।’

আরও পড়ুনজামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাজা শরফুদ্দীন চিশতির মাজারে হাত দিলে পরিণাম হবে ভয়াবহ: আহলে সুন্
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • আমেরিকানদের হাতে সময় আছে মাত্র ৪০০ দিন
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • প্রাথমিকে গানের শিক্ষক বাদ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে
  • পনেরো বছরে থেমে গেল শিশুশিল্পীর জীবন
  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কেমন সংবিধান চান, জানালেন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন
  • বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় ইইউ