বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গৃহভূমি হতে চলেছে: মেজর (অব.) হাফিজ
Published: 29th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গৃহভূমি হতে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, দেশকে একটি যুদ্ধাবস্থার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা ক্ষমতায় আছে, তারা গণতন্ত্র দিতে চায় না, নির্বাচনের কথা বলতে চায় না।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন হাফিজ উদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গৃহভূমি হতে চলেছে। আমরা জানি না, বাংলাদেশকে একটি যুদ্ধে লিপ্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, আরও কিছু কিছু নেতা বলেছেন, মানবিক করিডর দিতে হবে। কিসের জন্য, জনগণের জানার অধিকার নাই?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। সামরিক বাহিনীর প্রধান চান নির্বাচন, আর যারা ক্ষমতায় আছে— সিভিল একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তারা গণতন্ত্র দিতে চায় না, নির্বাচনের কথা বলতে চায় না।
সংস্কার করার একমাত্র অধিকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বলে মনে করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সংস্কার করার একমাত্র অধিকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের, এখানে একটা গোষ্ঠী এসে বলবে এই সংস্কার হবে, ছাত্ররা এসে বলবে ওই সংস্কার হবে, এভাবে কি বাংলাদেশ চলবে? এ জন্যই কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম?’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘দুঃখ লাগে, এই যে একটা সরকার এখানে আছে, তাদের সবাই শিক্ষিত ব্যক্তি। তাদের মধ্যে কেবলমাত্র একজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। বাকি যাঁরা আছেন, যাঁদেরকে টেলিভিশনে দেখি, দেশের জন্য তাঁদের কী অবদান আছে।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে বারবার সংগ্রাম হয়েছে, কিন্তু এদের কাউকে তো আমরা কোনো সংগ্রামে দেখিনি।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, একটি তথাকথিত শিক্ষিত গোষ্ঠী বারবার জনগণকে বিভ্রান্তির মধ্যে নিয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর ভিডিও বক্তব্য (ধারণকৃত) অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। প্রধান আলোচক হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। সভার সঞ্চালক ছিলেন বিএনপি নেতা সুলতান সালাউদ্দিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স থ য় ন ব এনপ র কম ট র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
জুলাই সনদের খসড়াকে স্বৈরাচারের প্রতি নমনীয়, আইনি বাধ্যবাধকতাহীন দুর্বল সনদ বলে উল্লেখ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ।
আজ মঙ্গলবার দলের নিয়মিত বৈঠকে জুলাই সনদের খসড়ার বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, জুলাই সনদে পতিত ফ্যাসিবাদকে গৎবাঁধা শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ফলে পতিত ফ্যাসিবাদের নির্মমতা, নৃশংসতা ও বিভীষিকাময় দুঃশাসনের চিত্র খসড়া সনদে নেই।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, জুলাই সনদের খসড়ায় একবারের জন্যও পতিত ফ্যাসিবাদের মূল হোতা ও অশুভ চক্রের প্রধান শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়নি, অথচ পুরো ফ্যাসিবাদ তাঁর নেতৃত্বেই নৃশংসতা চালিয়েছে। সাম্প্রতিক একাধিক প্রমাণিত ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিতে শোনা গেছে। তারপরও জুলাই সনদে শেখ হাসিনার নাম না থাকা মেনে নেওয়া যায় না।
মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, জুলাই সনদের ক্ষেত্রে প্রধান চাওয়া ছিল, এর আইনি মর্যাদা ও বাধ্যবাধকতা। কিন্তু খসড়া সনদে এ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। তাই এই সনদের আদতে কোনো তাৎপর্য আছে বলে মনে হয় না। তিনি আরও বলেন, সনদের কোথাও অংশগ্রহণকারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আইনি সুরক্ষা রাখা হয়নি। ফলে অভ্যুত্থানের নায়কদের নিরাপত্তা দীর্ঘ মেয়াদে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। অংশ নেওয়া শক্তি ও পক্ষের উল্লেখ নেই, মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের উল্লেখ নেই। ফ্যাসিবাদের দোসরদের সম্পর্কেও সনদের খসড়া নিশ্চুপ। ফলে স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন সহজ হবে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ যে দেড় দশক স্বৈরতন্ত্রের জাঁতাকলে পিষ্ট হলো, তার প্রধান দায় ভারতের। অথচ জুলাই সনদে ভারত নিয়ে রহস্যজনক নীরবতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে খসড়া সনদ খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতাসহ অপরিহার্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়েছে। একই সঙ্গে পতিত স্বৈরাচারের অপকর্মের চিত্রায়নে ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ুম, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, মহিলা ও পরিবারকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা এ বি এম জাকারিয়া, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, সহপ্রচার ও দাওয়াহ্–বিষয়ক সম্পাদক কে এম শরীয়াতুল্লাহ প্রমুখ।