২৮ মণ ওজনের বিশাল ষাঁড় ‘কালা বাহাদুর’। দৃষ্টিনন্দন কালো রঙের এই ষাঁড়ের দাম হাঁকা হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রস্তাব দিলেও মালিক ছাড় দিতে নারাজ।

কক্সবাজারের সমুদ্রপাড়ের গ্রাম সমিতিপাড়ার একটি খামারের ষাঁড় ‘কালা বাহাদুর’। খামারের মালিক ওই গ্রামেরই বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। কোনো রকম ওষুধ ছাড়াই ঘাস, খৈল, ভুসি, খড়, ভাতের মাড়—এসব প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করেছেন সাড়ে তিন বছর বয়সী ষাঁড়টিকে। আগামী ১ জুন শহরের কস্তুরাঘাট অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটে কালা বাহাদুরকে বিক্রির জন্য তুলবেন বলে জানালেন নুরুল ইসলাম। তাঁর আশা, সেখানে ৮ লাখ টাকার বেশি দামে এই ষাঁড় বিক্রি হবে। কেননা, ষাঁড়ের দাম কমিয়ে ধরেছেন তিনি। বাজারের দাম ধরলে অনন্ত ১০ লাখ টাকা হতো কালা বাহাদুরের দাম—এমনটাই মনে করেন খামারি নুরুল ইসলাম।

যা খায় কালা বাহাদুর

সমুদ্র উপকূলের গ্রাম সমিতিপাড়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার নুরুল ইসলামের খামারবাড়ির খোঁজ করতেই লোকে দেখিয়ে দিলেন। খামারে কালা বাহাদুর ছাড়াও ৭২টি ষাঁড় ও গাভি রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৩৫টি ষাঁড়। এগুলোর ওজন ১০ থেকে ২০ কেজি। তবে সব পশুর মধ্যে আলাদা করেই নজর কাড়ে ২৮ মণ ওজনের ষাঁড়টি। খামারের এক পাশে খুঁটিতে বাঁধা ষাঁড়টির মাথার কাছে সাদা ছোপ রয়েছে। আর সে কারণে রাজকীয় ভাবও এসেছে চেহারায়।

খামারের পশুগুলো দেখাশোনার জন্য রয়েছেন ছয়জন কর্মচারী। তাঁদের চারজন প্রতিদিন পশুগুলোকে খাবার খাওয়ান আর দুজনের দায়িত্ব গোসল করানো। কী খায় কালা বাহাদুর? জানতে চাইলে কর্মচারীরা জানান, ষাঁড়টি দৈনিক ১৫ কেজি সবুজ ঘাস, ১৭ কেজি ভুসিসহ নানা ধরনের খাবার খায়। মোটাতাজাকরণে কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। এর দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। বৃষ্টি না থাকলে গরুগুলোকে খামারের বাইরে মাঠে নিয়ে গোসল ও খাবার খাওয়ানো হয়।

ব্যাটারির ব্যবসা ছেড়ে খামারি

সাত বছর ধরে গরুর খামার করছেন নুরুল ইসলাম। এর আগে তিনি ব্যাটারির ব্যবসা ও পুকুরে মাছের চাষ করে সংসার চালাতেন। চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে সৌদিপ্রবাসী। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে স্থানীয় সমিতি পাড়া উপকূলীয় উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে।

নুরুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে দুলাল নামের এক বন্ধু তাঁকে একটি গাভি উপহার দেন। গাভির জন্য খামার তৈরি করা হয়। ১০-১৫ দিনের মাথায় খামারে আরও দুটি গরু কিনে আনা হয়। ব্যাটারি এবং মাছের ব্যবসা ছেড়ে নেমে পড়েন খামারিজীবনে। তিন বছরের মাথায় খামারে গরুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪। বর্তমানে খামারে গরুর সংখ্যা ৭২। এর মধ্যে ৩৫টি ষাঁড় এবারের কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

নুরুল ইসলাম বলেন, এখন সব কাজ বাদ দিয়ে তিনি খামারের পেছনে সময় ব্যয় করেন। গরুর প্রতি মায়া জন্মে গেছে। খামারের গরু বিক্রির পাশাপাশি দুধ বিক্রি করেও ভালো আয় হয় তাঁর।

কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, খামারে গাভি আছে ১২টি। প্রতিদিন এসব গাভি থেকে ৭০ থেকে ৮০ লিটারের মতো দুধ পাওয়া যায়। সে হিসাবে খামারে প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে আয় হয় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। মাসে দুধ বিক্রি করেই আসে কয়েক লাখ টাকা। এর বাইরে বছরে খামার থেকে ৪০ লাখ টাকার ষাঁড় বিক্রি হয়। খামারের ছয়জন কর্মচারীর বেতন, গরুর খাবার, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খাতে খরচ বাদ দিয়ে বছরে তাঁর ৩৫-৪০ লাখ টাকা লাভ থাকে।

বেকার তরুণদের আদর্শ

খামারি নুরুল ইসলাম এখন এলাকার বেকার তরুণদের কাছে আদর্শ। অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করেও যে বড় খামার গড়া যায়, তিনি সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নুরুল ইসলাম বলেন, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এ কথাটি তিনি কাজে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। এলাকার অনেক যুবক এখন খামার গড়ে তুলছেন। অনেকে খামারের প্রতি উৎসাহিত হচ্ছেন।

নুরুল ইসলামকে সফল খামারি দাবি করে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, মাত্র সাত বছরে খামার ব্যবসা করে নুরুল ইসলাম লাখপতি বনে গেছেন। তাঁর দেখাদেখি এলাকার অনেকে খামার ব্যবসায় নামছেন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অর্থসহায়তা পেলে বেকার তরুণ-যুবকেরা খামার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ল ইসল ম র ব যবস র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে বিআরটিসির বাসের ধাক্কায় নিহত ৩

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বাসের ধাক্কায় মাহেন্দ্রের তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ছয়জন। তাদের মধ্যে গুরুতর দুইজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের দত্তপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক মো. আতিকুর রহমান নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতদের মধ্যে দুইজন পুরুষ ও একজন নারী। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

আরো পড়ুন:

চক্ষু বিজ্ঞানের কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাইয়ের আহতদের ধাক্কাধাক্কি 

বরিশালে মেডিকেল ছাত্রের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার

প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ঘটনাস্থলে যাত্রী নামাচ্ছিল। পেছন থেকে আসা একটি মাহেন্দ্র অটোরিকশাটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা বিআরটিসির একটি বাস মাহেন্দ্রটিকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। আহত হন ছয়জন। 

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া তামনিম মুনমুন বলেন, “উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয়জনকে আনা হয়েছিল। গুরুতর দুইজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।”  

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, “মারা যাওয়াদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।”

ঢাকা/মিলন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাসচাপায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩, আহত ৬
  • ঈশ্বরগঞ্জে বিআরটিসি বাসের চাপায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩, আহত ৩
  • ঈশ্বরগঞ্জে বাসচাপায় প্রাণ গেল বাবা-ছেলেসহ তিনজনের
  • ময়মনসিংহে বিআরটিসির বাসের ধাক্কায় নিহত ৩