Samakal:
2025-06-02@07:46:10 GMT

ডলারের দাম বাজারীকরণের বিপদ

Published: 31st, May 2025 GMT

ডলারের দাম বাজারীকরণের বিপদ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের জন্য ডলারের দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। অর্থ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অনেকদিন ধরে তাদের এই শর্ত মানতে নারাজ ছিলেন। তাদের মত ছিল, এখন ডলারের দাম নির্ধারণ পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে এগ্রিগ্রেটর ও ম্যানিপুলেটরদের তাণ্ডবে হু-হু করে ডলারের দাম বেড়ে ১৭০-১৮০ টাকায় পৌঁছে যেতে পারে। এখন বাংলাদেশে ডলারের দাম ১২২-১২৩ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। গভর্নর বলছেন, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে বিপদে পড়েছে, পাকিস্তানে এক ডলারের দাম ২৮০ রুপি এবং শ্রীলঙ্কায় ৪০০ রুপি। আমিও আইএমএফের এই শর্তের বিরোধী। কিন্তু ১৫ মে তারিখের পত্রপত্রিকার খবরে জানা যাচ্ছে, অবশেষে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। বলা হচ্ছে, জুনে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১.

৩ বিলিয়ন ডলার পেয়ে যাবে বাংলাদেশ।
 ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (বিএমইটি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের ১ কোটি ৫৫ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন ও কর্মরত রয়েছেন। তারা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার ফরমাল চ্যানেলে দেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা সামান্য বেড়ে ২৩.৪১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের উৎখাতের পর ৯ মাস ধরে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পুঁজি পাচারে ধস নামায় বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণ অভূতপূর্বভাবে বেড়ে গেছে, যার ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৯-৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বাড়তি রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন থামানো গেছে, ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রাখা গেছে এবং ব্যালান্স অব পেমেন্টসের চলতি হিসাব বা কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি প্রায় দূর করা সম্ভব হয়েছে। হুন্ডি প্রক্রিয়া দুর্বল হওয়ায় এখন হুন্ডি বাজারে ডলারের দাম ১২৩-১২৪ টাকার বেশি হচ্ছে না, যার ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা শক্তিশালী রয়েছে। অথচ ২০২৪ সালের জুনের পর বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে কোনো ঋণের অর্থ পায়নি। এ প্রেক্ষাপটে আইএমএফের ঋণের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা, সে প্রশ্নই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হুন্ডি পদ্ধতির জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য সরকার আগে ২.৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিত, সম্প্রতি এই প্রণোদনাকে ৫ শতাংশে বাড়ানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রবাসীদের ফরমাল চ্যানেলগুলো ব্যবহারে যথেষ্ট উৎসাহিত করা যাচ্ছিল না। কারণ হুন্ডি প্রক্রিয়ায় পুঁজি পাচারের চাহিদা শক্তিশালী থাকলে হুন্ডিওয়ালারাও ডলার কেনার সময় ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়ে হুন্ডির আকর্ষণ ধরে রাখার চেষ্টা করত। আমার দৃঢ় অভিমত হলো, হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদা কাঠামোতে অবস্থানকারী পুঁজি পাচারকারীদের প্রতি সরকারের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কিন্তু পতিত স্বৈরশাসকের কর্তাব্যক্তিরা, তাদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন এবং ওই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলা– প্রায় সবাই পুঁজি পাচারে সক্রিয় থাকায় পুঁজি পাচার দমনে সরকারের কোনো কঠোর প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়নি। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে হুন্ডিতে ডলারপ্রতি প্রবাসীরা বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত বাজারের ডলারের দামের চাইতে ৫-৭ টাকা বেশি পাচ্ছিলেন। যেহেতু বিশ্বস্ততাই হুন্ডি ব্যবসার সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই সাধারণত রেমিট্যান্সের টাকা মার যায় না; লেনদেনের গোপনীয়তাও রক্ষা করা হয় সযতনে। প্রবাসীদের জন্য হুন্ডি পদ্ধতির সাধারণ সুবিধাগুলোর সঙ্গে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে পাল্লা দেওয়া সুকঠিন।

হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রেরিত অর্থ প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে ব্যাপক অবদান রাখত। এক কোটি টাকার বেশি আমানত রক্ষাকারী ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দেশে এখন ১ লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং এসব অ্যাকাউন্টের উল্লেখযোগ্য অংশই গ্রামীণ এলাকার ব্যাংক শাখাগুলোতে। বিবেচনা করুন, সারাদেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রবাসীদের পরিবারের পাকা বাড়ি নির্মাণের যে হিড়িক চলেছে, তার খরচের কত শতাংশ ফরমাল চ্যানেলে দেশে এসেছে? স্বীকার করতেই হবে, ফরমাল চ্যানেল বা হুন্ডি পদ্ধতি– যেভাবেই রেমিট্যান্সের অর্থ অর্থনীতিতে প্রবাহিত হোক, তার বহুবিধ সুফল পাচ্ছে অর্থনীতি। হুন্ডি পদ্ধতিতে পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতির জন্য পুরোপুরি নেতিবাচক নয়। এক অর্থে এই বিপুল রেমিট্যান্সের অর্থ বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের একটা তাৎপর্যপূর্ণ বিকল্পের ভূমিকা পালন করছে। চীন ও ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ যে ভূমিকা পালন করেছে, তার অনুরূপ ভূমিকা বাংলাদেশে পালন করছে ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স প্রবাহ। বাংলাদেশের অনেক এলাকার গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে যে বিপুল গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, তার পেছনে প্রধানত অবদান রেখে চলেছে এলাকার প্রবাসী-বাংলাদেশির সংখ্যাধিক্য।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আবার যদি হুন্ডিওয়ালাদের দাপট বাড়তে শুরু করে তাহলে ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রাখা যাবে না। সে জন্য আমি মনে করি, ডলারের দাম নির্ধারণ এখনই বাজারের হাতে ছেড়ে না দিলে ভালো হতো। স্বৈরশাসন উৎখাতের পর মাত্র কয়েকজন ছাড়া উল্লিখিত লুটেরা ও পুঁজি পাচারকারী প্রায় সবাই নানাভাবে দেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে গেছে। কয়েক লাখ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে এসব পলাতক লুটেরা একেকজন দেশের আন্তর্জাতিক সীমানার নানা গোপন পথে বিজিবি-বিএসএফ এবং সংগঠিত চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের মদদে প্রধানত ভারতে পাড়ি দিয়েছে। ৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এখন তাদের বেশির ভাগেরই সাময়িক অর্থ সংকটে পড়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতএব, তাদের পরিবারের সদস্য-সদস্যা ও আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় তাদের বিদেশে অবস্থানের অর্থায়ন সংকট কাটানোর জন্য ওইসব দেশে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ তাদের জন্য প্রয়োজন হওয়াই স্বাভাবিক। এদের কারণে আবার হুন্ডি ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় গত সাড়ে ৯ মাসে ২৭ হাজার সন্দেহজনক লেনদেনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সাধু সাবধান!   
 
ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, 
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইএমএফ র ম ট য ন স প রব হ পর ব র র সদস য ফরম ল চ য ন ল দ র পর ব র র আইএমএফ র প রব স দ র প রক র য় সরক র র র জন য র অর থ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৬৮ পথশিশু

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন প্রায় ১৬৮ জন পথশিশু (মোট নিহতের ১২ শতাংশ) নিহত হয়েছে। তবে জাতীয় পর্যায়ে নথিভুক্ত ১৩ হাজার ৫২৯ জন আহত ব্যক্তির মধ্যে শিশুদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ঢাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবঃ জুলাই-আগস্ট ২০২৪ প্রেক্ষাপট গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গ্লোবাল ফান্ড ফর চিলড্রেনের অর্থায়নে একমাত্রা সোসাইটি ও লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (লিডো) এ গবেষণা পরিচালনা করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলি/ছররা গুলির কারণে গুরুতর চোখের আঘাতের জন্য ৫০৬ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। যার মধ্যে অন্তত ৬০ জন শিশু ছিল; তাদের মধ্যে একজন ৯ বছর বয়সী পথশিশু চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আটকের ফলে শিশুরা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। কারওয়ান বাজারে ৪৩ জন পথশিশুকে কোনো আইনি সহায়তা ছাড়াই আটক রাখা হয়, তাদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যায়।

এছাড়া ব্র্যাক জানায়, অস্থিরতার সময় ঢাকার ৬২ শতাংশ পথশিশু আশ্রয়স্থল হারায়; ইউনিসেফ সীমান্ত এলাকায় অভিভাবকহীন শিশুদের সংখ্যা ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য দেয় এবং এইচআরডাব্লিউ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্রে পুলিশি অভিযানের পরে অনেক আশ্রয়স্থল পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা গেছে।

এ গবেষণাটিতে পথে বসবাসরত, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ জন শিশুর সঙ্গে করা কেস স্টাডি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কেস স্টাডিটি ব্যাপকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, আন্দোলন চলাকালীন পথশিশুরা চরম সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হয়। ৭২ শতাংশ শিশু সহিংসতার ফলে আক্রমণের শিকার হয়েছে, কেউ সরাসরি আঘাত পেয়েছে, আবার কেউ নির্মম দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪৮ শতাংশ পথশিশু সরাসরি আহত হয়েছে; যার মধ্যে মাথায় আঘাত, ছররা গুলির আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে; ১৩ শতাংশ শিশুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত ২৬ শতাংশ শিশু শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত না হলেও, বন্ধু বা পরিচিতদের মারধর ও আটক হতে দেখেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা শুরুর আগে পথশিশুদের মধ্যে সচেতনতার মাত্রা ছিল ভিন্ন। ৪১ শতাংশ শিশুর সহিংসতা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না; তারা কেবল চারপাশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানতে পারে। অন্যদিকে, ৩৬ শতাংশ শিশু আন্দোলনের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত ছিল। এছাড়া অংশগ্রহণও ছিল বিচিত্র; ৫৫.৭ শতাংশ শিশু সক্রিয়ভাবে সহিংসতায় যুক্ত হয় এবং ৩৪.৩ শতাংশ ব্যক্তি-উদ্যোগ বা সংহতির কারণে অংশ নেয়। অংশগ্রহণ বা বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গঠনে ব্যক্তিগত বিশ্বাস, সহকর্মী ও রাজনৈতিক দলভুক্ত ব্যক্তির প্রভাব এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের বিষয়টি প্রভাব ফেলেছে। 

এতে বলা হয়, অনেক পথশিশুর জন্য সাধারণ জীবনধারণই কঠিন হয়ে পড়ে; কারফিউ-এর কারণে ৫৪ শতাংশ শিশু খাদ্য, পানি বা আশ্রয়ের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং ৬০ শতাংশ শিশুর আয় ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়েছে। এইসব কষ্টের মধ্যেও কেউ কেউ বন্ধু, পরিচিত ব্যক্তিবর্গ ও কমিউনিটির সহায়তায় কিছুটা সামলে উঠতে পেরেছে। তবে মানসিক ক্ষতি ছিল গভীর। ৬১ শতাংশ শিশু মানসিক আঘাত, ভয় ও আতঙ্কের কথা জানিয়েছে; প্রায় অর্ধেক শিশুই দুঃস্বপ্ন বা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার অভিজ্ঞতা ভাগ করেছে এবং ৭৫ শতাংশ এর বেশি শিশু এখনও চাপ, দুঃখ ও উদ্বেগ নিয়ে বেঁচে আছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহিংসতা থেকে সৃষ্ট ট্রমা ছিল ব্যাপক।

লিডোর গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, সহিংসতা পরবর্তী পর্যায়ে ৬১ শতাংশ শিশু এখন তাদের এলাকায় তুলনামূলক নিরাপদ বোধ করে; পুলিশ ও গ্যাং-সংক্রান্ত অরাজকতার সংখ্যা কমেছে বলে মনে করছে, তবে মানসিক ক্ষত রয়ে গেছে। সহায়তার ক্ষেত্রে ৪১ শতাংশ শিশু এনজিও বা কমিউনিটির সাহায্য পেয়েছে, ৩৪ শতাংশ শিশু পরিচিত ব্যক্তিবর্গ, ২২ শতাংশ কমিউনিটি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করেছে, আর মাত্র ১৯ শতাংশ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পেরেছে। তবুও, অনেকেই এখনও চরম পরিবেশে টিকে আছে; ৩৩ শতাংশ ভিক্ষাবৃত্তি, ২৩ শতাংশ আবর্জনা বা বোতল কুড়িয়ে জীবন চালায় এবং অনেকে রেলস্টেশন কিংবা রাস্তার পাশে ঘুমায়। যদিও ৪০ শতাংশ শিশু নিজেদের শারীরিকভাবে সুস্থ বলে জানিয়েছে, তাদের সার্বিক পরিস্থিতি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। 

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে প্রধান গবেষক এবং একমাত্রা সোসাইটির পরিচালক অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, বিগত তিন দশক ধরে রাজনৈতিক সহিংসতায় পথে বসবাসরত শিশুরা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এর ফলে, এসব শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করতে শিশুদের ব্যবহার করতে দেখা গেছে এবং সহিংসতার কারণে তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সহিংসতার ফলে হতাহতের সংখ্যা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ঘিরে নানা বিশ্লেষণ ও বিতর্ক দেখা গেলেও সেখানে ঢাকার পথে বসবাসরত অবহেলিত শিশুদের ওপর এই সহিংসতার প্রাণঘাতী প্রভাব মূলধারার আলোচনাগুলোতে উপেক্ষিতই থেকে গেছে। পরবর্তী সময়ে ক্রমাগত আমাদের স্মৃতির বাইরে চলে গেছে। এই শিশুদের অভিজ্ঞতা শুধু শারীরিক আঘাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তারা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ট্রমা, জীবিকার পথে বাধা, বাস্তুচ্যুতির মুখোমুখি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পথকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের আশ্রয়স্থলও হয় এই পথ। তাই রাজপথে সংগঠিত এই রাজনৈতিক সহিংসতা, তাদের এই দুর্বিষহ সামগ্রিক জীবন প্রবাহকে আরো মারাত্মক ঝুঁকির মুখোমুখি করে তোলে। গবেষণায় সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য তাদের জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো, সরকার, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীদের প্রতি কয়েক দফা  সুপারিশ জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাশিয়া ৪ বছরের মধ্যে ন্যাটোর দেশগুলোতে হামলা চালাতে পারে, জার্মান প্রতিরক্ষাপ্রধানের সতর্কবার্তা
  • কোরবানি ঈদেও চাঙ্গা রেমিট্যান্স
  • ৫০০, ২০০, ১০০ ও ১০, ৫ ও ২ টাকার নোটের নকশায় কী থাকছে
  • নতুন নোটের ডিজাইন প্রকাশ
  • মেডিকেলের ক্লাস শুরুর তারিখ ঘোষণা
  • নেচার ইনডেক্স: গবেষণায় দেশসেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
  • জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৬৮ পথশিশু
  • মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ, বাড়তে পারে দারিদ্র্য
  • মেসি, নেইমার, এমবাপ্পেকে ছেড়ে দিয়ে পিএসজি কীভাবে ভালো দল হয়ে উঠল