রমজানের পর কোরবানি ঈদেও চাঙ্গা রেমিট্যান্স। ঈদের আগে গত মে মাসে প্রবাসীরা ২৯৭ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি। আর একক কোনো মাসে এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে গত রোজার ঈদের আগে মার্চ মাসে। মূলত অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় হুন্ডি চাহিদা কমে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় এভাবে বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৭৫১ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার। এর মানে ১১ মাসে বেশি এসেছে ৬১৩ কোটি ডলার বা ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ। রেমিট্যান্সের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এর পরও ডলার ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। আবার আগের মতো ডলার নিয়ে হাহাকার নেই। এই সরকার আগের বিভিন্ন বকেয়া ৩৭০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে। এর পরও টানা ২০ মাস পর গত এপ্রিল শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। অবশ্য গত মে মাসে আকুতে ১৮৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর কমে যায়। বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগের পতনের সময় যেখানে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে রিজার্ভ উঠেছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। চলতি
মাসে আইএমএফের ঋণের দুই কিস্তিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৩৫০ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভ অনেক বাড়বে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উচ্চ ধারা বজায় থাকার অন্যতম উপাদান রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৪ হাজার ২১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ছাড়া প্রতি মাসে রেমিট্যান্স বাড়ছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অর্থ পাচার ঠেকাতে কড়াকড়ি করছে সরকার। আগে
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত
আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ পাচার নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবার ও ১০ ব্যবসায়ী গ্রুপের বিষয়ে ১১টি যৌথ তদন্ত চলমান। এরই মধ্যে এসব ব্যক্তির ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর দেশে দেশে লকডাউনের মধ্যে রেমিট্যান্সে এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ছিল ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি
সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার।
সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।
এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।
এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা