অধ্যাদেশ বাতিল না হলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুমকি সচিবালয় কর্মচারীদের
Published: 2nd, June 2025 GMT
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আজ সোমবার দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। স্মারকলিপি দেওয়ার আগে আন্দোলনকারী কর্মচারীরা সচিবালয়ের বাদামতলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এই সমাবেশে আন্দোলনকারী কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা বলেন, অধ্যাদেশটি বাতিলের ব্যবস্থা না করা হলে ঈদুল আজহার পর তাঁরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন। কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার জন্য তাঁরা সচিবালয় ছাড়াও সারাদেশের সরকারি কর্মচারীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশের পর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও উপদেষ্টা মো.
বিক্ষোভ সমাবেশে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদীউল কবীর বলেন, শুধু সচিবালয় নয়, সারা দেশে সব সরকারি দপ্তর, সংস্থা ও পরিষেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তাঁরা এই কালো আইনকে ধিক্কার জানাচ্ছেন। এই নিবর্তনমূলক আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাঁরা মাঠে থাকবেন।
অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের আদেশ জারির দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বাদীউল কবীর বলেন, ‘কর্মচারীদের শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণকে যদি দুর্বলতা মনে করেন, তাহলে এটি বুমেরাং হয়ে যাবে।’
ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বাদীউল কবীর। উপস্থিত কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঈদের পর যদি কঠোর আন্দোলনের ডাক দিই, তাহলে আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন তো?’ জবাবে উপস্থিত কর্মচারীরা সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ বলে চিৎকার করেন। তখন বাদীউল কবীর বলেন বলেন, সব সরকারি দপ্তরে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঐক্য ফোরামের আরেক কো-চেয়ারম্যান মুহা. নূরুল ইসলাম ও কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম।
এর আগে গতকাল রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা। গতকাল খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
একই দাবিতে রোববার তিন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর পর মিছিল নিয়ে তারা খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের কাছে স্মারকলিপি দেন। পরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।
কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, এ অধ্যাদেশের কিছু বিধানের অপপ্রয়োগের শঙ্কা রয়েছে। কয়েকজন উপদেষ্টার নজরে এই জিনিসটি এনেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছেও বিষয়টি তুলে ধরব। তবে অধ্যাদেশটি রেখে কী কী সেফগার্ড করলে কর্মচারীর কাছেও এটা গ্রহণযোগ্য হবে, তাও ভেবে দেখা দরকার।
উপস্থিত কর্মচারী নেতারা বলেন, এই অধ্যাদেশ সংবিধানবিরোধী কালো আইন। অবিলম্বে এটা বাতিল চাই। এ সময় বক্তব্য দেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম ও কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত শনিবার জাপান সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। এখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন। কর্মচারী নেতারা বলছেন, এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে একটা আশাব্যঞ্জক খবর পাবেন।
২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এরপর থেকে এই অধ্যাদেশটিকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালো আইন’ আখ্যায়িত করে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে সন্ধ্যায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার। এ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে টানা চার দিন বিক্ষোভের পর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করায় কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনেন তারা। গত বুধবার কর্মসূচি এক দিনের জন্য স্থগিত করে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন কর্মচারীরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র চ কর ন উপদ ষ ট র র ল ইসল ম স ম রকল প র উপদ ষ ট ম হ ম মদ উপস থ ত মন ত র র বল ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ওটিটির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ওটিটি বা ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্ম সেবার সংজ্ঞা নির্ধারণ করার পাশাপাশি ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আজ সোমবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাজেট পেশ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এ সংবাদ জানার পর বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে নিজেদের মত জানিয়েছেন দুই পরিচালক আশফাক নিপুন ও আদনান আল রাজীব।
অর্থ উপদেষ্টা বরাবর প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আশফাক নিপুন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে সরাসরি ওটিটি সাবস্ক্রাইবার কতজন, সে ব্যাপারে কোনো ধারণা, হালনাগাদ তথ্য কি আছে অর্থ উপদেষ্টা সাহেবের? দেশে ওটিটির ভোক্তাকুলের একটা বেশ বড় অংশ যে পাইরেসি করে আমাদের কনটেন্ট দেখেন, সেটা কি তাঁরা জানেন? পাইরেসির বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার গল্প কি তাঁরা জানেন? বিশ্বে বর্ধনশীল যেকোনো শিল্পকে যেখানে কর রেয়াতের সুযোগ দেওয়া হয়, সেখানে মাত্র পাঁচ বছর হলো যাত্রা শুরু করা এই ওটিটি বলয়ের ওপর বাড়তি ১০% সম্পূরক ট্যাক্সের সরাসরি প্রভাব পড়বে নির্মাতাদের বাজেটে এবং গল্পে, প্রভাব পড়বে বৈধভাবে গ্রাহক নেওয়ার ক্ষেত্রে। পাইরেসির প্রকোপ আরও বাড়বে এবং দিন শেষে সবার ব্যবসা হবে সংকুচিত।’
সরকারের বিরুদ্ধে পাইরেসি নিয়ন্ত্রণ না করে ট্যাক্স বাড়ানোর সমালোচনা করতেও ভোলেননি আশফাক নিপুন। তিনি লিখেছেন, ‘পাইরেসির ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরিবর্তে বরং পাইরেসিকেই উৎসাহী করবে এই বাড়তি ট্যাক্স বসানো। গোটা কাঠামোর সংস্কার না করে, বাড়তি ট্যাক্স আরোপের ফলে, মাঝেমধ্যে যা–ও আমাদের কনটেন্ট গ্লোবালি বিকাশের ক্ষেত্রে একটু সম্ভাবনার আলো দেখছিল, সে আলো হয়তো আস্তে আস্তে নিভে যাবে। দুর্ভাগ্যজনক!’
আদনান আল রাজীব সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আলী’ স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার জন্য বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনিও ওটিটি মাধ্যমে ১০ শতাংশ ট্যাক্স আরোপের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের কাজ হলো বিনোদনশিল্পের পাশে থাকা, সহায়তা করা। কিন্তু, আমি যা দেখছি তা হলো, শিল্পকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে; এটা সত্যিই হৃদয়বিদারক। এই কারণেই এত শিল্পী দেশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ী হয়ে যান।’
আরও পড়ুনযাঁরা নানা চাপে কথা বলেন না ‘আলী’ তাঁদের উৎসর্গ করছি : আদনান আল রাজীব২৫ মে ২০২৫